ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের ইস্যু
নেতানিয়াহুর হঠকারি মন্তব্য আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি: আরাকচি
-
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি
পার্সটুডে: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করার প্রস্তাব আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের সকল নিয়ম নীতির লঙ্ঘন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধন চালানো এবং তাদেরকে ধ্বংসের জন্য এটি বর্ণবাদী ইসরাইলি সরকারের পরিকল্পনার পরিপূরক।
গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশেষ করে গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত করার ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি গতকাল (সোমবার) জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে টেলিফোনালাপ করেন। পার্সটুডের খবর অনুযায়ী, টেলিফোনালাপে আরাকচি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিমূলক এই বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের দৃঢ় ও স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
আরাকচি আরো বলেন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করার প্রস্তাব আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের সকল নিয়ম নীতির লঙ্ঘন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধন চালানো এবং ধ্বংসের জন্য এটি বর্ণবাদী ইসরাইলি সরকারের পরিকল্পনার পরিপূরক।
ফিলিস্তিনিদের সৌদি আরবে স্থানান্তরের বিষয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক অবস্থানকে নির্লজ্জ দৃষ্টিভঙ্গির একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করে আরাকচি জোর দিয়ে বলেন যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই দখলদার সরকারের আইন মেনে না চলা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের স্বাভাবিকীকরণ রোধ করতে হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত যেকোনো পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের স্পষ্ট বিরোধিতার কথা উল্লেখ করে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকারকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন এবং একইসঙ্গে বলেছেন যে গাজার জনগণকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
নেতানিয়াহুর নির্লজ্জ মন্তব্য আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি: আরাকচি
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে আলাপকালে আরাকচি গাজার জনগণকে জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করার এবং অন্যান্য দেশে তাদের বাস্তুচ্যুত করার মার্কিন-ইহুদিবাদী পরিকল্পনাকে ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করার ঔপনিবেশিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে অভিহিত করেন এবং এই ষড়যন্ত্রের বিরোধিতা এবং মোকাবেলা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
সৌদি আরবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর নির্লজ্জ মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে আরাকচি এই বক্তব্যকে দখলদার সরকারের নজিরবিহীন বিদ্রোহের লক্ষণ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করেন।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক অন্য দেশে স্থানান্তরের যেকোনো পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তার দেশের অবিচল অবস্থানের কথা ঘোষণা দেন এবং এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ঘোষণা করার জন্য ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার মন্ত্রীদের একটি বৈঠক করার ইরানের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী: গাজার জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা "সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য"
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থনের প্রশংসা করেছেন বিশেষ করে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর ১৬ মাস ধরে চলা গণহত্যার সময় মালয়েশিয়া সরকারের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনাকে ফিলিস্তিনকে নিশ্চিহ্ন করার ঔপনিবেশিক পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি এর নিন্দা জানিয়েছেন এবং এই বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রধান ও প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোর দৃঢ় ও শক্ত অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজা থেকে লোকজনকে স্থানান্তরের যেকোনো পরিকল্পনার নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে তার দেশের অবস্থানের কথাও উল্লেখ করে বলেন যে গাজার জনগণের জোরপূর্বক স্থানান্তর জাতিগত নির্মূলের সমপর্যায়ের এবং এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যাওয়া, এর বাসিন্দাদের প্রতিবেশী আরব দেশ এবং অন্যান্য অঞ্চলে স্থানান্তর এবং গাজার উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান। ট্রাম্প পূর্বে মিশর ও জর্ডান সহ অধিকৃত অঞ্চলের প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর নেতাদের গাজার জনগণকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।#
পার্সটুডে/বাবুল আখতার/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।