ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড ২ টন ওজনে পৌঁছেছে
(last modified Thu, 12 Jun 2025 12:42:09 GMT )
জুন ১২, ২০২৫ ১৮:৪২ Asia/Dhaka
  • ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড ২ টন ওজনে পৌঁছেছে

এখন পর্যন্ত ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ ওয়ারহেড ওজন ১,৮০০ কিলোগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু এখন ২ টন ওয়ারহেডসহ একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার মাধ্যমে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

একটি সরকারি বৈঠকের অবকাশে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষা সহায়তা মন্ত্রী আমির আজিজ নাসিরজাদেহ বলেন, প্রতিরক্ষা বিষয়ে আমাদের খুব ভালো সাফল্য রয়েছে এবং অপারেশনাল বাহিনী তাদের প্রস্তুতি পূর্ণ করেছে। আমাদের সর্বশেষ সাফল্য ছিল এক সপ্তাহ আগে ২ টন ওয়ারহেডসহ একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা।  

পার্সটুডে অনুসারে, অবশ্যই, এখন পর্যন্ত, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ ওয়ারহেড ওজন ১,৮০০ কিলোগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন, এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার মাধ্যমে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা শক্তি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফার্স নিউজ এজেন্সির মতে, চলতি ফার্সি বছরের খোরদাদ মাসের চতুর্থ  দিনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষা ও সহায়তা মন্ত্রী খোররামশাহর-৪ (খাইবার) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচন করেন। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র পরিবারের সর্বশেষ উন্নত সংস্করণ এবং এক ধরণের আনগাইডেড পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ক্ষেপণাস্ত্র যা এর চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

খোররামশাহর-৪ (খাইবার) একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যার পাল্লা প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার

খোররামশাহর-৪ (খাইবার) ক্ষেপণাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য

খোররামশাহর-৪ (খাইবার) একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যার পাল্লা প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৩ মিটার লম্বা ১.৫ মিটার ব্যাস এবং ৩০ টন ওজনের। এর ওয়ারহেডের ওজন ১,৮০০ কিলোগ্রামেরও বেশি এবং বায়ুমণ্ডলে এর গতি প্রায় ম্যাক ৮ এবং বায়ুমণ্ডলের বাইরে ম্যাক ১৬।

প্রায় ৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেডটি এখন পর্যন্ত নির্মিত বৃহত্তম এবং সবচেয়ে কার্যকর ওয়ারহেডগুলো মধ্যে একটি যা এক টনেরও বেশি বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম। খোররামশাহর-৪ ক্ষেপণাস্ত্র ইঞ্জিনটি একটি উন্নত আরভান্ড ধরণের যা হাইপারগোলিক (স্ব-প্রজ্বলন) জ্বালানি ব্যবহার করে। কৌশলগত ক্ষমতা উন্নত করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প বিশেষজ্ঞরা জ্বালানি ট্যাঙ্কের ভিতরে এই ক্ষেপণাস্ত্রের ইঞ্জিন স্থাপন করেছেন যা ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ মিটারে কমিয়ে এনেছে।

খোররামশাহর-৪ (খাইবার)

বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর খোররামশাহর-৪ নির্দেশিকা ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়

উচ্চ নির্ণায়ক ক্ষমতা, রাডার ফাঁকি, ট্র্যাজেক্টোরি সংশোধন ক্ষমতা এবং ক্ষেপণাস্ত্রের কর্মক্ষমতার উপর ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থার অকার্যকরতাও খোররামশাহর-৪ এর বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতকারী ওয়ারহেডের উচ্চ গতির কারণে শত্রু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে ওয়ারহেড সনাক্ত করা, ট্র্যাক করা এবং ধ্বংস করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এই ক্ষেপণাস্ত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এর মধ্যবর্তী নির্দেশিকা,যাতে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর ক্ষেপণাস্ত্রের নির্দেশিকা ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায় এবং এতে শত্রুর ইলেকট্রনিক যুদ্ধের কোনও সম্ভাবনা থাকে না। এই ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য পূর্ববর্তী প্রজন্মের মধ্যে পার্থক্য হল এটি মধ্যবর্তী পর্যায়ে (বায়ুমণ্ডলের উপরে উড়ান) সঠিকতা প্রদান করে। কৌশলগত ক্ষমতা তৈরির জন্য, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সবচেয়ে উন্নত তরল জ্বালানি ইঞ্জিনগুলোর একটি দিয়ে সজ্জিত এবং এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে ইঞ্জিনটি জ্বালানি ট্যাঙ্কে অবস্থিত যা ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ মিটারে কমিয়ে এনেছে।

খাইবার; ৮০টি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার জন্য একটি ক্ষেপণাস্ত্র

আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ খোররামশাহর-৪ এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেন,  "একটি খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর এটি লক্ষ্যবস্তু এলাকার ৮০টি পয়েন্টে আঘাত করে। আমরা যদি এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে ১০০টি নিক্ষেপ করি তাহলে তারা শত্রু অঞ্চলে ৮,০০০ রকেটে পরিণত হবে এবং ৮,০০০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করবে।"

ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি সীমাবদ্ধ নয়

অবশ্যই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি সীমাবদ্ধ নয় তবে বিভিন্ন পাল্লা এবং ক্ষমতা সম্পন্ন বিভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ১৭০০ কিলোমিটার পাল্লার 'এমাদ', ১৬৫০ কিলোমিটার পাল্লার 'কদর এইচ',১৯৫০ কিলোমিটার পাল্লার 'কদর এফ',৮০০ কিলোমিটার পাল্লার 'কিয়াম',১৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার 'খাইবারশাকান',১৪০০ কিলোমিটার পাল্লার 'হাজ্জ কাসেম', ২০০০ কিলোমিটার পাল্লার 'সাজিল' এবং ১৬৫০ কিলোমিটার পাল্লার 'পাভেহ' ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি।

খোররামশাহর-৪ (খাইবার)

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিরক্ষা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কয়েকটি উপাদান নিয়ে গঠিত যার মধ্যে সবচেয়ে মৌলিক হল ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা যার ফলে ইরান এই ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। অন্যদিকে উচ্চ উচ্চতায় উড়তে, দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে থাকতে এবং বিভিন্ন অস্ত্র বহন করতে সক্ষম ইরানি ড্রোনগুলো সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা ও অপারেশনাল ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, নতুন ইলেকট্রনিক যুদ্ধ প্রযুক্তি এবং নেভিগেশন সিস্টেমের উন্নয়নের সাথে সাথে এই অগ্রগতি ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান নিরাপত্তা ও সামরিক শক্তি হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে এবং আঞ্চলিক ও আন্তঃআঞ্চলিক হুমকির বিরুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ তৈরি করেছে।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র সম্প্রতি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিষয়েও গুরুতর শক্তি প্রদর্শন করেছে। পারমাণবিক,সামরিক,নিরাপত্তা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা থেকে বিপুল সংখ্যক গোপনীয় নথির অভূতপূর্ব হস্তান্তর ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার একটি কার্যকরী অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয় যা দেখায় যে ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষেত্রের পাশাপাশি,গোয়েন্দা ক্ষেত্রেও ইরান এই অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় শক্তি।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।