ইরানি দৈনিক আরমানে মেল্লির বিশ্লেষণ :
ইরান পশ্চিম এশিয়ায় টেকসই নিরাপত্তা গড়তে চায় যে কৌশলে
-
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী লারিজানি এবং লেবাননের রাষ্ট্রপতি জোসেফ আউন
পার্স টুডে - ইরান থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র "আরমানে মেল্লি" একটি প্রবন্ধে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে "টেকসই নিরাপত্তা"র বিষয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে।
সোমবার ইরান থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র "আরমানে মেল্লি"-তে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে: "ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী লারিজানি দায়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রথম বিদেশ সফরে ইরাক এবং লেবানন ভ্রমণ করেছেন।"
এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও স্বাধীনতা বজায় রাখার ওপর জোর দেয়া। বাগদাদে লারিজানি প্রধানমন্ত্রীসহ ইরাকি ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত ও আলোচনা করেন।
আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং বিজাতীয় গোষ্ঠীগুলোকে দুই দেশের ভূখণ্ড শোষণ থেকে বিরত রাখার জন্য একটি নিরাপত্তা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর; এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর আলোকে এই পদক্ষেপটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বৈরুতে তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার এবং লেবাননের রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতাদের সাথেও সাক্ষাত করেন। এই আলোচনার সময়, লেবাননের স্বাধীনতা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতি ইরানের সমর্থনের উপর জোর দেয়া হয় এবং আরব এই দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেকোনো বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা হয়।
প্রতিরোধ আন্দোলনকে সমর্থন এবং হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার বিদেশী চাপের বিরোধিতা সংক্রান্ত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অবস্থানও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় লারিজানির এই সফরে।
লারিজানি এমন সময় এইসব সফর করলেন যখন পশ্চিম এশিয়া নানা ধরনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এইসব চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রতি ইরানে ইসরাইলি হামলা বা ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ এবং লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলনের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের জন্য আন্তর্জাতিক চাপের প্রেক্ষাপটে। নিরাপত্তাগত পরিস্থিতির কারণে ইরান ও ইরাকের মধ্যে নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতাও বেশ জরুরি হয়ে উঠেছে।
এটা স্পষ্ট বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে টেকসই নিরাপত্তার জন্য আঞ্চলিক ও প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সংলাপ ও সমন্বয়সহ নানা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বেশ জরুরি। এরই প্রেক্ষাপটে লারিজানির সফর এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ সফর হিসেবে আলোচিত। এ বিষয়টিকে এখন মার্কিন পদক্ষেপ বা পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দেখা হচ্ছে।
ইরাক ও লেবাননে সফর প্রসঙ্গে লারিজানি বলেছেন, ইরান আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটকে তার জাতীয় নিরাপত্তা নীতি বা কৌশলের মধ্যে গুরুত্ব দিচ্ছে। মার্কিন সরকার ও ইসরাইল কোনো রাখঢাক না রেখেই বলছে যে আমরা শক্তির পথ ধরে শান্তি চাই! এর অর্থ হয় আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ কর নতুবা যুদ্ধ কর! এমন নীতি পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে। আমরা সিরিয়াতে এর বাস্তব দৃষ্টান্ত দেখেছি। অন্যদিকে ইরান এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে টেকসই নিরাপত্তার বলয় সৃষ্টি করতে চায়। এ পরিকল্পনায় আঞ্চলিক সব দেশই হবে শক্তিশালী। এরই আলোকে আমরা টেকসই নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইরাকের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর করেছি যাতে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে টেকসই নিরাপত্তা জোরদার হয়।
তিনি ইরানের ওপর মার্কিন ও ইসরাইলের আরোপিত সাম্প্রতিক যুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেছেন, এটি ছিল তাদের ধারাবাহিক পরিকল্পনার অংশ এবং তারা সব সময়ই এ অঞ্চলে অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেয়েছে। আগে তারা নানা ঘটনা ও পদক্ষেপের আড়ালে থেকে সন্ত্রাসী বা দুষ্কৃতিমূলক তৎপরতা চালাত, এবার তারা সরাসরি সক্রিয় হয়েছে।
ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আরও বলেছেন, ''তারা ভেবেছিল কোনো কোনো মতভেদ বা রক্ষণশীলতার কারণে মুসলিম দেশগুলোর মাঝে ইরান একঘরে হয়ে পড়বে, কিন্তু বাস্তবে মুসলিম জাতি ও সরকারগুলো ইরানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে ইউরোপ ইসরাইল ও মার্কিন সরকারের পক্ষ নিয়েছে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তারা ভেবেছিল তাদের কাছে সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি তাদেরকে পুরোপুরি বিচলিত বা অসহায় করে তুলেছিল। ইসরায়েলের মোকাবেলায় ইরানের কৌশল এবং সামরিক পদক্ষেপ ছিল একটি বড় সাফল্য। অবশ্য আমাদেরও দুর্বলতা ছিল। ইরানের অভ্যন্তরে শত্রু অনুপ্রবেশের বিষয়টি একটি গুরুতর বিষয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতাগুলো ছিল বেদনাদায়ক, কিন্তু আমাদের শক্তিও ছিল এবং আমাদের সেগুলির কার্যকর বা প্রভাবশালী দিকগুলোকে দেখতে হবে।"
পার্স টুডে/এমএএইচ/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।