৭ ডিসেম্বর- ইরানে শিক্ষার্থী দিবস: প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার প্রতীক
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i154830-৭_ডিসেম্বর_ইরানে_শিক্ষার্থী_দিবস_প্রতিরোধ_ও_স্বাধীনতার_প্রতীক
পার্সটুডে:  ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আনুষ্ঠানিক ক্যালেন্ডারে ফার্সি ১৬ অযার বা ৭ ডিসেম্বরকে “শিক্ষার্থী দিবস” হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এটি এমন একটি দিন যা প্রতিরোধ, অধিকার আদায় এবং অভ্যন্তরীণ স্বৈরশাসন ও বহিঃশক্তির আধিপত্যবাদের মুখে শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের দৃঢ়তার প্রতীক।
(last modified 2025-12-07T13:56:16+00:00 )
ডিসেম্বর ০৭, ২০২৫ ১৮:১২ Asia/Dhaka
  • ইরানের কয়েকজন শিক্ষার্থী
    ইরানের কয়েকজন শিক্ষার্থী

পার্সটুডে:  ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আনুষ্ঠানিক ক্যালেন্ডারে ফার্সি ১৬ অযার বা ৭ ডিসেম্বরকে “শিক্ষার্থী দিবস” হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এটি এমন একটি দিন যা প্রতিরোধ, অধিকার আদায় এবং অভ্যন্তরীণ স্বৈরশাসন ও বহিঃশক্তির আধিপত্যবাদের মুখে শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের দৃঢ়তার প্রতীক।

"শিক্ষার্থী দিবস" হলো- প্রতিরোধ, স্বাধীনতা  এবং স্বৈরশাসন ও বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। এই দিনটি ১৯৫৩ সালের (ফার্সি ১৩৩২) তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শহীদ শিক্ষার্থীর স্মৃতিতে পালন করা হয় এবং সমকালীন ইরানি শিক্ষার্থী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।

ফার্সি ১৩৩২ সালের ১৬ অযারের (৭ ডিসেম্বর) অভ্যুত্থানের মাত্র চার মাস পর অর্থাৎ ২৮  মুরদাদ (১৯ আগস্ট) তারিখে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় রিচার্ড নিকসনের (সেসময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট) সরকারি সফর এবং ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। সামরিক বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায় এবং তিন জন ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থী শহীদ হন। এই ঘটনা দ্রুত শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ স্বৈরাচার ও বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হয়ে ওঠে।

শিক্ষার্থী দিবস, ছাত্রদের স্বৈরাচারী শাসন ও বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের স্মারক এবং এটি ইরানি জাতির ঐতিহাসিক স্মৃতিতে স্বাধীনতা চেতনা ও মুক্তিকামনার প্রতীক হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। প্রতি বছর এই দিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকা পুনঃমূল্যায়নের একটি সুযোগও হয়ে ওঠে। এই ঘটনার পর শিক্ষার্থী আন্দোলন ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয় এবং পরবর্তীতে জনগণের সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষার্থী দিবসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রমাণ করে যে, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল শিক্ষার ক্ষেত্র নয়, বরং এটি সচেতনতা ও ন্যায়পরায়ণতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ। আজও ছাত্র দিবসের অনুষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা এবং বিশ্ব-আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার সুযোগ হয়ে ওঠে। ১৬ অযার কেবল একটি স্মৃতি দিবস নয়; এটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে পুরো ইরানি সমাজে ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ ও স্বাধীনতাকামিতার সংস্কৃতির প্রতীক।

ইরানের সমকালীন ইতিহাসে ১৬ অযার সবসময় ন্যায়পরায়ণ ও স্বাধীকার আন্দোলনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত। আজও শিক্ষার্থী দিবস উদযাপন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা এবং বৈশ্বিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জাতীয় স্বাধীনতার প্রতিরক্ষা স্মরণ করার সুযোগ দেয়। ১৬ অযার বা ৭ ডিসেম্বর শুধু স্মরণ দিবস নয়, বরং এটি একটি প্রতিরোধ ও স্বাধীনতা সংস্কৃতির প্রতীক, যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে সমগ্র ইরানি সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে।

১৩৫৭ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর শিক্ষার্থীরা একই স্বাধীনচেতা ও মুক্তিসাধনার মনোভাব নিয়ে নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেন। ১৩৫৮ সালের ১৩ আবান (১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর) মার্কিন দূতাবাস (গুপ্তচরদের আখড়া) দখল শিক্ষার্থী আন্দোলন ছিল বিশ্ব-আধিপত্যবাদ বিরোধিতার চূড়ান্ত পরিণতি। ইমাম খোমেনী (রহ.) এই ছাত্রদের এই কর্মসূচিকে দ্বিতীয় বিপ্লব” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ইরাকের বিরুদ্ধে পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের সময়ও শিক্ষার্থীরা প্রথম সারিতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

বিপ্লবের পরও শিক্ষার্থী আন্দোলন একই মনোভাব নিয়ে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিল। দূতাবাস দখল, প্রতিরক্ষা যুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সমাজে বহুমুখী ভূমিকার প্রমাণ। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী সবসময় সমাজের 'সচেতন বুদ্ধি ও ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক' হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং যেকোনো অন্যায় ও বিদেশি প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

পরবর্তী দশকে শিক্ষার্থীরা ন্যানো, অ্যারোস্পেস ও পারমাণবিক শক্তিসহ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বহু প্রসিদ্ধ ইরানি বিজ্ঞানী এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্র হয়ে থাকে এবং শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক সচেতনতার মাধ্যমে বিদেশি প্রভাব ও চাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে।

৭ ডিসেম্বর এবং ইসলামী বিপ্লবের পর শিক্ষার্থী আন্দোলন দেখিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান শিক্ষার স্থান নয়, বরং এটি প্রতিরোধ ও ন্যায়পরায়ণতার দুর্গ। দূতাবাস দখল থেকে যুদ্ধের অংশগ্রহণ এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি—শিক্ষার্থীরা সবসময় বৈশ্বিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অগ্রদূত হয়েছেন এবং আজও এই ভূমিকা অব্যাহত রয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএআর/৭