ইস্ফাহান প্রদেশের অপরূপ গ্রাম ‘মেসর’ বা মিশর
(last modified Sun, 24 Jul 2016 15:36:14 GMT )
জুলাই ২৪, ২০১৬ ২১:৩৬ Asia/Dhaka
  • ইস্ফাহান প্রদেশের অপরূপ গ্রাম ‘মেসর’ বা মিশর

‘মেস্‌র’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে পিরামিড ও নীল নদীর দেশ হিসেবে সুপরিচিত উত্তর আফ্রিকার আরব-মুসলিম দেশ মিশরের ছবি। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হল ইরানের কেন্দ্রীয় মরুভূমি অঞ্চলের নায়িন জেলায় "মেস্‌র" বা মিশর নামের একটি গ্রাম আছে।

নদীর মোহনা বা সংকীর্ণ প্রণালীর পাশে অবস্থিত সমতল ভূমির এ গ্রামটি যেন বালুময় মরুভূমিতে একটি স্বর্গীয় নিকুঞ্জ বা বেহেশতের দ্বীপ। ইরানের "মেস্‌র" গ্রামটি ইস্ফাহানের উত্তরাঞ্চল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চিত্রময়, স্বপ্নিল ও মিছরির মত মিষ্টি সৌন্দর্য্যে ভরপুর এ গ্রামে রয়েছে প্রায় ৪৪ টি পরিবার।

ইরানের "মেস্‌র" বা মিশর গ্রামটি ইরানের "দাশতে কাভির" বা কাভির মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও শুস্ক। এখানকার জনগণের পেশা কৃষিকাজ ও পশুপালন। কৃষি-পণ্য ও ফলের জন্য "মেস্‌র" বা মিশর গ্রামটির খ্যাতি রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত প্রধান কৃষি-পণ্য হল- গম, খেজুর, ডালিম, জাফরান, রসুন এবং গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ফসল। সীমিত মাত্রায় মাছের চাষও হয় এই গ্রামে।

ইরানের প্রথাগত গ্রামগুলোর মত এ গ্রামের সড়ক বা অলি-গলি সংকীর্ণ ও আঁকা-বাঁকা নয়। প্রশস্ত সড়ক-পথে এ গ্রামে প্রবেশ করার পর সড়কের দুই পাশের আবাসিক ভবনগুলো এবং গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে-যাওয়া খাল আপনার নজর কাড়বে। ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি কূপ থেকে এই খাল দিয়ে মেস্‌র গ্রামের মিঠা পানি সরবরাহ করা হয়। এখানকার ভবনগুলোর স্থাপত্য-শৈলী প্রথাগত বা ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির। ফলে বৈদ্যুতিক কুলার ছাড়াই গ্রীষ্মকালে ঘরগুলোকে ঠাণ্ডা রাখা যায়। বিশেষ করে বাতাস প্রবেশের জন্য ভবনের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় এবং খড়-কূটা মেশানো কাদামাটি দিয়ে এসব ঘরবাড়ি নির্মিত হওয়ায় ঘরের ভেতরের আবহাওয়া সহনীয় বা আরামদায়ক থাকে। উজ্জ্বল রংয়ের এই বাড়ীগুলোও বেশ দৃষ্টি-নন্দন। এ গ্রামের আশপাশের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে একটি লবন হ্রদ, নল-খাগড়ার বন, "তাখতে আব্বাসি" ও "তাখতে আরুস" এবং একটি পাহাড়ী খাদের কথা উল্লেখ করা যায়।

ইরানের "মেস্‌র" বা মিশর গ্রাম থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে রয়েছে নল-খাগড়ার ঝোঁপ বা বন। একটি নয়নাভিরাম ঝর্ণার ফলে এই বন সৃষ্টি হয়েছে। এই ঝোঁপের কোনো কোনো নল-খাগড়া ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু। এই ঝর্ণা এখানকার পশু-পাখির পানি-পানের কেন্দ্র। এই ঝর্ণার সুবাদে এখানে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা। বালুময় মরুভূমিতে নল-খাগড়ার এই ঝোঁপ বা বন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক অনন্য ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে।

Image Caption

"সালকনুন" নামের একটি পাহাড়ী খাদ "মেস্ র" বা মিশর গ্রামের আরেকটি বড় আকর্ষণ। এটি এই গ্রামের উত্তর অংশে রয়েছে। এই খিরি-খাদটি আশপাশের পাহাড়ের চেয়ে নীচু ও বেশ গভীর। এর একাংশে রয়েছে একটি জলাশয় বা বিল। এই খাদের গভীর ঢাল, কঙ্করময় বালি বা ছোট পাথরের আবরণ এবং আশপাশের বালির টিলা এক অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা করেছে। আর এইসব অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন প্রকৃতি-প্রেমী বহু দেশী-বিদেশী পর্যটক।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৪

ট্যাগ