ইরানে বিশ্ব বিজ্ঞান জাদুঘর ও বিজ্ঞানকেন্দ্র বিষয়ক দিবস পালিত
(last modified Mon, 14 Nov 2016 10:22:08 GMT )
নভেম্বর ১৪, ২০১৬ ১৬:২২ Asia/Dhaka
  • ইরানে বিশ্ব বিজ্ঞান জাদুঘর ও বিজ্ঞানকেন্দ্র বিষয়ক দিবস পালিত

গত ১০ নভেম্বর ছিল বিজ্ঞান জাদুঘর ও বিজ্ঞান-কেন্দ্র বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত ইরানেও পালিত হয়েছে ইউনেস্কো এবং জাদুঘরগুলোর বিশ্ব-পরিষদ ঘোষিত এই বিশেষ বিশ্ব-দিবস।

ইরানের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক কর্মকর্তারা এই দিনে জাদুঘর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ইরানের নানা সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন

জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা  ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছিল ‘শান্তি ও উন্নয়নের সেবায় বিজ্ঞান’ শীর্ষক বিশ্ব-দিবস। ২০০১ সালে সংস্থাটির সাধারণ সম্মেলনে এই দিবস পালনকে একটি আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শান্তি ও উন্নয়নের সেবায় বিজ্ঞানকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অঙ্গীকারগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং সমাজের কল্যাণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া।

চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে এই দিবস তথা ‘শান্তি ও উন্নয়নের সেবায় বিজ্ঞান’ শীর্ষক বিশ্ব-দিবস উদযাপন করা হয়েছে নানা ধরনের জাদুঘর ও বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপের মধ্য দিয়ে। কারণ নানা ধরনের জাদুঘর ও বিজ্ঞান-কেন্দ্র বিজ্ঞান-চর্চা এবং বিজ্ঞান-বিষয়ক যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞান ও সমাজের প্রতি অঙ্গীকার বিষয়ক তৎপরতা জোরদারের বিষয়টিকে ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বিজ্ঞান সম্মেলনের অন্যতম ইতিবাচক প্রভাব বলে মনে করা যায়।

‘শান্তি ও উন্নয়নের সেবায় বিজ্ঞান’ শীর্ষক বিশ্ব-দিবস পালন টেকসই উন্নয়ন বা প্রবৃদ্ধি অর্জনে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং বৈজ্ঞানিক নানা বিতর্কে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেয়ার চিন্তা থেকেই উৎসারিত হয়েছে।

ইরানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক জাদুঘর

‘শান্তি ও উন্নয়নের সেবায় বিজ্ঞান’ শীর্ষক বিশ্ব-দিবস মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে জ্ঞান-বিজ্ঞানের গুরুত্বের বিষয়টি সাধারণ জনগণের কাছে আগের চেয়েও ভালোভাবে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কিত নানা বিতর্কে অংশ নিতে জনগণকে করবে উৎসাহিত। 

এ ধরনের দিবস পালন জনগণকে বিজ্ঞানের নানা অগ্রগতি ও নানা আবিষ্কার সম্পর্কে করবে অবহিত এবং এর ফলে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ধারাও হবে উৎসাহিত।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের রয়েছে বিচিত্রময় ও বিপুল শাখা আর ইতিহাস। ‘শান্তি ও  উন্নয়নের সেবায় বিজ্ঞান’ শীর্ষক বিশ্ব-দিবস জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনার বিষয়গুলোতে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ এনে দিয়েছে। আর এ বিষয়টি গণতন্ত্রের ভিত্তি ও জনগণকে শক্তিশালী করার অন্যতম শর্ত।

জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনার বিষয়গুলোতে জনগণকে শরিক করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিজ্ঞান-কেন্দ্র ও জাদুঘরগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর ও মোক্ষম। এইসব প্রতিষ্ঠান  কেবল যে তথ্য যোগায় তা নয়, শিক্ষণ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।   

নানা ধরনের জাদুঘর ও বিজ্ঞান-কেন্দ্র মানুষের কাছে তুলে ধরে বিশ্বের অনেক অজানা তথ্য ও রহস্যময় বিষয়। এসব কেন্দ্র মানুষের সৃষ্টিশীলতা জোরদার করে এবং তাদের জ্ঞান-স্তরকে গভীর করে। এ ছাড়াও এসব কেন্দ্র জনগণের জ্ঞান-বিজ্ঞান শেখার গুণগত মান বাড়িয়ে দেয়। 

জাদুঘর ও বিজ্ঞান-কেন্দ্র সমাজের ওপর জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভাব সম্পর্কে সম্ভাব্য নেতিবাচক ধারণা বা ভুল ধারণাগুলোও দূর করে। যুব সমাজকে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার দিকে আকৃষ্ট করা ও তাদেরকে সামষ্টিক জ্ঞানের উন্নয়নে উৎসাহিত করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হল জাদুঘর ও বিজ্ঞান কেন্দ্র।

জ্ঞান-বিজ্ঞান, নীতিমালা ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা সামাজিক নানা সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন, বিজ্ঞান-গবেষণা একটি দেশ বা সমাজের জ্বালানী, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সংকট সমাধান করতে পারে। 

জাদুঘরগুলো কেবল অতীতের নানা নিদর্শনই তুলে ধরে তা নয়, আজকাল জাদুঘরগুলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে নানা মত-বিনিময় ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

অতীতে বিজ্ঞান জাদুঘরগুলো ফসিল, প্রাকৃতিক নানা বিষয়, মৃত্তিকা-তত্ত্ব, ভূতত্ত্ব ও শিল্প বিষয়ক নানা নিদর্শন তুলে ধরত। কিন্তু আজকাল জাদুঘরগুলো কেবল বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন বা আবিস্কার তুলে ধরারই কেন্দ্র নয়, একইসঙ্গে তা প্রযুক্তির জাদুঘর হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

মিউনিখ জাদুঘর

বিজ্ঞান জাদুঘরের ইতিহাসে প্রথম আধুনিক বিজ্ঞান জাদুঘর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে মিউনিখের জাদুঘর। এটি প্রতিষ্ঠিত  হয় বিংশ শতকের প্রথমদিকে। ১৯৫৯ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্ট লুইসের বিজ্ঞান ও প্রকৃতির ইতিহাস বিষয়ক জাদুঘর। বর্তমানে এ জাদুঘরের নাম সেন্ট লুইস বিজ্ঞান-কেন্দ্র। ১৯৬৯ সনে ফ্রাঙ্ক ওপেনহাইমার তার নতুন পরীক্ষাগারকে পরস্পরের ওপর ক্রিয়াশীল বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলোর প্রদর্শন-কেন্দ্রে পরিণত করেন। জাদুঘর ও বিজ্ঞান-কেন্দ্রগুলোর পারস্পরিক প্রভাবের প্রক্রিয়া বিশ্বজুড়ে অব্যাহত থাকে। ১৯৯০’র দশক থেকে এ পর্যন্ত থাইল্যন্ডের জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘরের মতই দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জাদুঘর ও বিজ্ঞান-কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন ঘটতে থাকে।  এ সময়ে এইসব কেন্দ্রের দর্শনীয় উন্নয়ন ঘটেছে।

ইরানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয় এখন থেকে প্রায় ৬ বছর আগে।  বিজ্ঞানের নানা মূল ভিত্তি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি তুলে ধরে বৈজ্ঞানিক ভাবনার বিকাশ ঘটানো এবং জীবনমানের উন্নয়ন ও চেতনার বিকাশ এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য। ইসলামী ও ইসলাম-পূর্ব যুগের  ইরানি বিজ্ঞানীদের নানা উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি সমসাময়িক যুগের নানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও মৌলিক সূত্র তুলে ধরাও এ জাদুঘরের অন্যতম লক্ষ্য।

সমসাময়িক যুগের প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস তুলে ধরা এই জাদুঘরের তৃতীয় প্রধান লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক অনেক জিনিস পুনর্গঠন করা হয়েছে। ইরানি গবেষক ও বিজ্ঞানীরা অতীতে ব্যবহার করতেন এমন অনেক যন্ত্রপাতি এবং সাজ-সরঞ্জাম পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। আর এইসব জিনিস দর্শকদের কাছে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে তারা এসব নিয়ে কাজ করতে পারেন এবং এভাবে বিজ্ঞানের নতুন অগ্রগতিগুলোকেও সহজেই বুঝতে পারেন।

ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক জাদুঘরটি রয়েছে তেহরানের সিয়োমে তির সড়কে। শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘর। শুক্রবার ও শনিবার খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।  সবাইকে আকর্ষণীয় এ জাদুঘর পরিদর্শনের আমন্ত্রণ রইল।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/১৪

 

ট্যাগ