ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না সৌদি শাসকরা
(last modified Thu, 15 Jun 2017 11:40:23 GMT )
জুন ১৫, ২০১৭ ১৭:৪০ Asia/Dhaka

ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী ইয়্যেদ মাহমুদ আলাভি বলেছেন, "সৌদি আরব হচ্ছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অর্থের প্রধান যোগানদাতা। বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে, সৌদি আরব প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অর্থের বিনিময়ে অনেক লোক ভাড়া করে তাদেরকে দিয়ে যুদ্ধ করাচ্ছে এবং এমনকি ইরানেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।" তিনি ইরানের সিস্তান, বেলুচিস্তান ও কুর্দিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কয়েকটি চক্রকে চিহ্নিত ও গ্রেফতারের খবর দিয়েছেন।

ইরান বহু বছর ধরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে আসছে আর এ কারণে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার গুরুত্ব খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করে। ইরানের ফার্সি ক্যালেন্ডারে ৮ই শাহরিভার মোতাবেক ইংরেজি ৩০আগস্টকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী জাতীয় দিবস হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আমেরিকা ও সৌদি আরবের কাছ থেকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা নিয়ে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ আরো বহু দেশে সীমাহীন অপরাধযজ্ঞ চালিয়েছে। দায়েশ সন্ত্রাসীরা গত সপ্তাহে তেহরানে সংসদ ভবন ও ইমাম খোমেনি(র.) এর মাজার এলাকায় হামলা চালিয়ে ১৭জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে এবং এ ঘটনায় আরো অনেকে আহত হয়েছে। তেহরানে সন্ত্রাসী হামলা এবং সন্ত্রাসীদের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থনের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তেহরানে হামলার ঘটনার জন্য রিয়াদের প্রতিই অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে। কারণ কিছুদিন আগে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান একটি সাময়িকীকে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, "মধ্যপ্রাচ্যে বিরাজমান নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা ইরানের ভেতরেও ছড়িয়ে দেয়া হবে।"

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ওই বক্তব্য থেকে তাদের মূর্খতা ও অবিবেচক আচরণের প্রমাণ পাওয়া যায়। সৌদি রাজা আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর থেকে ইরানের সঙ্গে এই দেশটির সম্পর্ক ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। ইরানের ভেতরে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির হুমকি দেয়ার পর তেহরান-রিয়াদ উত্তেজনা আরো চরমে উঠেছে। বর্তমানে সন্ত্রাসীদের সমর্থকরা ইরানের অভ্যন্তরে নৈরাজ্য সৃষ্টির নানা পরিকল্পনা করছে। প্রচণ্ড ক্ষমতালোভী, উগ্র ও আগ্রাসী চরিত্রের অধিকারী বর্তমান সৌদি শাসকদের ধারণা এভাবে তারা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে পারবে।

সন্ত্রাসীদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য রিয়াদ এ পর্যন্ত প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। লেবানন থেকে শুরু করে সিরিয়া ও ইরাকে দায়েশসহ অন্যান্য যেসব সন্ত্রাসী গ্রুপ নিরাপত্তাহীনতা ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সৌদি আরব। রিয়াদ মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিরাট হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রিয়াদ সফরের পর আমেরিকার সবুজ সংকেতে সৌদি আরব ইরানসহ সমগ্র এই এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেছে।

তেহরানে সন্ত্রাসী হামলার পর বহু দেশ ইরানকে সমবেদনা জানিয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে, "তেহরানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় উল্টো ইরানকে দোষারোপ করে বলেছে, সন্ত্রাসবাদের সমর্থক দেশগুলোও নিরাপদে থাকবে না।" মিডল বেরি কলেজের পরমাণু বিশেষজ্ঞ জেফরি লুইস এ ব্যাপারে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসলে সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য বারবার ইরানকে অভিযুক্ত করে তেহরানকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরানকে কোণঠাসা করার জন্য  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেষ্টার কারণে শুধু যে তেহরান ক্ষুব্ধ তাই নয় একই সঙ্গে ইউরোপের সঙ্গেও আমেরিকার সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হতে পারে।

অবশ্য এর আগে ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গ্রুপের প্রতি আমেরিকা ও সৌদি আরবের সরাসরি সমর্থন দেয়ারও নজির রয়েছে। সৌদি নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক প্রধান প্রিন্স তুর্কি ফয়সাল গত জুলাইয়ে প্যারিসে মোনাফেক গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকদের এক বৈঠকে অংশ নিয়ে নতুন করে ইরান বিরোধী তৎপরতার বিষয়ে পরামর্শ করেছেন। এ ব্যাপারে ইন্টেলিজেন্স রিও সাপ্তাহিকের পরিচালক জেফ স্টেইনবার্গ ইরানের প্রেসটিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক প্রধান গিংগিরিচ বিপুল পরিমাণ অর্থ  নিয়ে প্যারিসে ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ওই বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন।

এদিকে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক সদস্য ও ইরান বিরোধী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর সমর্থক রেমন্ড মন্তব্য করেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার চেয়ে ইরান বিরোধী গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া সবচেয়ে উত্তমপন্থা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে আমেরিকার ইরান বিরোধী তৎপরতা অন্যদিকে আমেরিকার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সন্ত্রাসীদেরকে সৌদি আরব সমর্থন দিচ্ছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য তারা ইরানকে যে অভিযুক্ত করছে তা আসলে কোনো অভিযোগ নয় বরং রিয়াদ-ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনারই ফল। যে কোনো উপায়ে এমনকি সন্ত্রাসীদের প্রতি সরাসরি সমর্থন দিয়ে হলেও তারা ইরান বিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে। #   

পার্সটুডে/মো. রেজওয়ান হোসেন/১৫   

 

ট্যাগ