আমেরিকা বিশ্বে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, মার্কিন সরকারের নীতি বিশ্ব অঙ্গনে এই দেশটিকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। তিনি গতকাল(রবিবার) দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে এক সংবাদ সম্মেলনে রিয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের ইরান বিরোধী বক্তব্যের জবাবে এ কথা বলেছেন। জারিফ বলেন, বর্তমানে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দেশও পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে ওয়াশিংটনের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রিয়াদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আজ-জুবায়ের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছেন, তার ভাষায় ইরান যাতে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে না পারে সেজন্য দেশটির বিরুদ্ধে আমরা নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এক টুইট বার্তায় তার মিত্রদেরকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য কারোর সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।
আমেরিকা প্রায় দশ বছর আগে আন্তর্জাতিক সমাজকে ধোঁকা দিয়ে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএকে ব্যবহার করে ইরানের বিরুদ্ধে অন্যায় নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে এবং তিনটি কারণে অতীতে ফিরে যাওয়া আমেরিকার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রথমত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান তার প্রতিশ্রুতি পালন করায় দেশটির পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে মার্কিন দাবি সবার কাছেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, হুমকি ও চাপ মোকাবেলায় ইরানের শক্তি-সামর্থ্যের বিষয়টি সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। আর তৃতীয়ত, বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক পরমাণ সমঝোতার প্রতি রয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজের পূর্ণ সমর্থন।
ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা বাতিল করার যে পরিকল্পনা করেছিলেন তাতে তিনি ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা পিছিয়ে আসলেও মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন। অথচ আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন এমনকি ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন, আল কায়দা ও দায়েশ সন্ত্রাসীদের সৃষ্টির পেছনে তাদের হাত রয়েছে।
ইরানের ওপর ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময় আমেরিকা ইরাকি বাহিনীকে রাসায়নিক অস্ত্র যুগিয়েছিল। এরও আগে ১৯৫৩ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইরানের বৈধ সরকারকে উৎখাতে আমেরিকার হাত ছিল। এ ছাড়া, বর্তমানে ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাত করার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের ৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ এবং ইরানের তাবাসে আমেরিকার সামরিক হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যায়। এসব ঘটনা থেকে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার অন্যায় আচরণের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন ইরান বিরোধী অযৌক্তিক বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন, বর্তমান বাস্তবতা উপলব্ধি করতে তারা ব্যর্থ। আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্রান্সিস ফুকোইয়ামা বিশ্বে আমেরিকার অবস্থান বা মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, মানব সভ্যতার বিকাশ ও নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরির জন্য আমেরিকা কথিত উদার নৈতিকতাবাদ চাপিয়ে দেয়ার যে চেষ্টা করেছিল তা ব্যর্থ হয়েছে।"
পার্সটুডে/মো. রেজওয়ান হোসেন/২৩