ইরান ইস্যুতে ইউরোপের জরুরি বৈঠক: ফলাফল নিয়ে মোগেরিনি যা বললেন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং পরমাণু সমঝোতায় সইকারী ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি সবসময়ই এই চুক্তির প্রতি সমর্থন এবং এটি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে এসেছে। কিন্তু গত ৮মে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে সরে আসার পর এবং সমঝোতা অনুযায়ী ইউরোপীয়রাও তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গড়িমসি করায় এখন এটি রক্ষায় ইউরোপ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
সম্প্রতি ইরান-মার্কিন উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ'র পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গতকাল (সোমবার) ব্রাসেলসে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে ইউ'র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "এই বৈঠকে আমরা ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিশেষ ব্যবস্থা 'ইনসটেক্স' চালু করার ওপর জোর দিয়েছি এবং অর্থ লেনদেনের প্রথম কার্যক্রম আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে।" মোগেরিনি আরো বলেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য সব দেশ ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়নের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।"
ইউ'র পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেছেন, "আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ জানিয়েছে ইরান তার প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছে।" ইরান-মার্কিন উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সবাইকে সর্বোচ্চ আত্মসংযমী হতে হবে যাতে পরিস্থিতি সামরিক সংঘাতে রূপ না নেয়।"
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোগেরিনির এসব বক্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য প্রতিটি দেশেরই বক্তব্য ও ইচ্ছার প্রতিফলন এবং এ থেকে বোঝা যায় তারা পরমাণু সমঝোতাকে টিকিয়ে রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ইউ এবং পরমাণু সমঝোতায় সইকারী জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্স মনে করে এটি বহুপক্ষীয় চুক্তির সফল দৃষ্টান্ত যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য সহায়ক।
আমেরিকা দাবি করেছে ইরান পরমাণু সমঝোতা মেনে চলছে না এবং দেশটির পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই চুক্তি কার্যকর নয়। কিন্তু ইউরোপ মনে করে, ইরান তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি মেনে চলছে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ঠেকাতে এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। তাদের মতে, পরমাণু সমঝোতা ইউরোপের জন্য অনেক বড় কূটনৈতিক সাফল্য এবং এটির ধ্বংস মানেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরাজয়।
মার্কিন সরকার পরমাণু সমঝোতা ধ্বংসের চেষ্টা চালানোয় ইউরোপীয়রা ক্ষুব্ধ।
এ কারণে ব্রাসেলস বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত হলেও জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তার সঙ্গে সাক্ষাত করেননি। এ ব্যাপারে দৈনিক ওয়াশিংটন পোষ্ট লিখেছে, পম্পেও ব্রাসেলসে বৈঠকে ইরান বিরোধী আবহ তৈরির চেষ্টা করলেও তেমন পাত্তা পাননি।
তবে ইউরোপ মুখে যাই বলুক না কেন পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে তারা চেষ্টা করছে এটাও বলা যাবে না। পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে তাদের গড়িমসির কারণে গত সপ্তাহে ইরান ইউরোপকে দুই মাসের আল্টিমেটাম দিতে বাধ্য হয়েছে এবং চুক্তির কিছু কিছু ধারা বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার হুমকি দিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, "পরমাণু সমঝোতার কিছু কিছু ধারা বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার অধিকার ইরানের রয়েছে। যেহেতু ইরান এ পর্যন্ত সব কিছু মেনে চলেছে তাই ইউরোপও তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে বলে সকলের প্রত্যাশা।"
ইরানও আশা করে ইউরোপ যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। তবে তেহরান হুমকি দিয়েছে, ইউরোপ যদি গড়িমসি করে তাহলে ইরানের কাছে তারা যেন কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৪