জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার আটকের কারণ জানাল ইরান
-
ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার স্টেনা ইমপেরো
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসলামি ইরানের প্রতিনিধি নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে হরমুজ প্রণালীতে ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার আটকের কারণ তুলে ধরে বলেছেন, "ওই তেল ট্যাংকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।"
চিঠিতে তিনি বলেছেন, "১৯ জুলাই শুক্রবার ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার স্টেনা ইমপেরো হরমুজ প্রণালীতে প্রবেশের পর ইরানের একটি মাছ ধরা নৌকাকে ধাক্কা দেয়। এর ফলে নৌকার আরোহীরা মারাত্মক আহত হয় এবং এদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এরপর ইরানি কর্তৃপক্ষ জাহাজে বার্তা পাঠায়, কিন্তু ইরানের বার্তাকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বিপদজনক উপায়ে জাহাজ এগোতে থাকে। তারা নেভিগেশন ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে এক পর্যায়ে ভয়াবহ পদক্ষেপ নেয় এবং জাহাজের জন্য নির্দিষ্ট লাইন পরিবর্তন করে উল্টো দিকে চলতে থাকে। এভাবে তারা পালানোর চেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় ইরান ট্যাংকারটিকে আটক করতে বাধ্য হয়।"
হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। এই বাহিনী কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই আন্তর্জাতিক এই জলপথ দিয়ে নির্বিঘ্নে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। ইরান হরমুজ প্রণালীতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করায় আইআরজিসি ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার আটক করেছে।
ইরানের মাছ ধরার নৌকাকে ধাক্কা দেয়া, ইরানের বার্তাকে কোনো গুরুত্ব না দেয়া, নেভিগেশন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া, নির্দিষ্ট লাইন পরিবর্তন করে উল্টো দিকে জাহাজ চালানোর মাধ্যমে ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করেছে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলের পানিসীমায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব ইরানসহ এ এলাকার সব দেশের ওপর বর্তায়। বর্তমানে ইরানের হাতে আটক ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারের ২৩জন ক্রু নিরাপদে রয়েছে এবং ইরানের বিচার বিভাগের নির্দেশে ওই তেল ট্যাংকারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
আইন লঙ্ঘন করায় হরমুজ প্রণালীতে ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার আটকের ঘটনা মোটেই রাজনৈতিক নয় এবং এটা পাল্টা প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ নয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি যেমনটি বলেছেন, "এই প্রণালী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ নিয়ে আমরা কোনো ঠাট্টা মশকরা করি না।"
ব্রিটেনের নৌ সেনারা জিব্রালটার প্রণালীতে বেআইনিভাবে ইরানের যে সুপার তেল ট্যাংকার আটক করেছে তার সঙ্গে তার সঙ্গে ইরানের এ পদক্ষেপের কোনো তুলনা চলে না। কেননা ব্রিটেন যে অজুহাতে ইরানের তেল ট্যাংকার আটক করেছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বলা হচ্ছে, ইরানের ওই জাহাজ সিরিয়ার দিকে যাচ্ছিল। অথচ ইউরোপ ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশই সিরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। এ অবস্থায় ইরানের তেল ট্যাংকার আটক ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এ কারণে ইরানের সঙ্গে ব্রিটেনের ওই পদক্ষেপের কোনো তুলনা চলে না।
জিব্রাল্টার প্রণালীর সঙ্গে হরমুজ প্রণালীর বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী জাহাজ, তেল ট্যাংকার ও অন্যান্য জাহাজ হরমুজ প্রণালীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। এ অবস্থায় এ প্রণালীকে রাজনৈতিকিকরণ গ্রহণযোগ্য নয় এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে সবাই বাধ্য। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৫