তেহরান-বাকু সম্পর্ককে টার্গেট করেছে ইসরাইল
আজারবাইজানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইসরাইলি ষড়যন্ত্র: তেহরানের হুঁশিয়ারি
'ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কখনই তার সীমান্তের কাছে দখলদার ইসরাইলের উপস্থিতি ও যে কোনো ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেষ্টাকে সহ্য করবে না।' ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, আজারবাইজানসহ সকল প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ইরান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়; তবে সেইসঙ্গে এসব দেশে ইরানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতেও গভীর দৃষ্টি রাখছে তেহরান।
কারাবাখ এলাকার মালিকানা নিয়ে আর্মেনিয়ার সঙ্গে আজারবাইজানের যুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু ওই যুদ্ধের ক্ষত বা প্রভাব এখনো এ অঞ্চলে রয়ে গেছে। এ ধরনের একটি প্রভাব হচ্ছে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা যেমন বেড়েছে তেমনি দখলদার ইসরাইলের সম্প্রসারণকামী কর্মকাণ্ড ও ষড়যন্ত্রের বিস্তার ঘটেছে। তবে আজারবাইজানের মাটিতে বসে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ষড়যন্ত্র কারাবাখ যুদ্ধের আগে থেকেই চলে আসছে। উদাহরণ স্বরূপ ৯০'র দশকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ এবং ২০১৬ সালের এপ্রিলে চার দিনের যুদ্ধের সময় ককেশিয় অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যে কোনো সংঘাত কিংবা সন্ত্রাসীদের উপস্থিতিতে ইরান উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না।
ইরানের সঙ্গে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান উভয় দেশের সীমান্ত রয়েছে। এ দুই দেশের যে কোনো ঘটনাবলীর প্রভাব ইরানেও পড়ে। সে কারণে শত্রুদের যে কোনো তৎপরতার ব্যাপারে ইরান নিশ্চুপ বসে থাকতে পারে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং এ অঞ্চলের যে কোনো সংকটের ব্যাপারে ইরানের অবস্থান অত্যন্ত যৌক্তিক ও স্বচ্ছ। এ ব্যাপারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দুদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নিজের নিরাপত্তা প্রশ্নে ইরান বিন্দুমাত্র কাউকে ছাড় দেবে না এবং এ ব্যাপারে তেহরানের নীতি একেবারেই স্পষ্ট ও কাউকে পরোয়া করবে না। ইরান আজারবাইজানের একটি বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ-একথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, ইহুদিবাদীদের পাশাপাশি সন্ত্রাসীরা আজারবাইজানের বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলতে পারে বলে তেহরান উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ইরান তার সীমান্তের কাছে ইসরাইলের কোনো ধরনের উপস্থিতিকে সহ্য করবে না।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে বাকু সরকারের সাম্প্রতিক উস্কানিমূলক কথাবার্তার জবাব দিয়েছেন তিনি। তিনি ওই দেশটির কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ইরানের উদ্বেগের প্রধান কারণ হচ্ছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ও ইসরাইল সম্মিলিতভাবে ইরান ও আজারবাইজানের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
আজারবাইজানে নিযুক্ত ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহসেন পাক আইন বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে, কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি জিইয়ে রেখে এবং তেহরান ও বাকুর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির করে ইসরাইল এ অঞ্চলে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। অতীতে এবং এখনো এ দুই মুসলিম দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে ইসরাইল। আজারবাইজানের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই হচ্ছে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়। তাই ইসরাইল বেশ চিন্তিত এবং ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ কারণে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তে যে কোনো উস্কানিমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।