ইরানি তেল ও বিশ্ববাজার সম্পর্কে বাইডেনের ভিত্তিহীন দাবির রহস্য
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন দাবি করেছেন বিশ্ববাজারে ইরান ছাড়াই অন্য দেশগুলোর মাধ্যমে জ্বালানী তেল ও তেলজাত পণ্যের যোগান এত পর্যাপ্ত যে বিশ্বের দেশগুলো ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ইরান থেকে তাদের কেনাকাটা কমিয়ে দিলেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক নোটে বাইডেন ওই দাবি করেছেন।
২০১২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজকে প্রতি ছয় মাস পর পর এটা দেখাতে হয় যে বিশ্ববাজারে যথেষ্ট পরিমাণে জ্বালানী তেলের যোগান রয়েছে।
বাইডেন এমন সময় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বার্তা পাঠালেন যখন তেহরানের ওপর একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে ভিয়েনায় ইরান ও চার যোগ এক গ্রুপের বৈঠক শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বাইডেনের এই বার্তা ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার অশুভ ইচ্ছাই তুলে ধরছে।
অন্যদিকে বাইডেনের এই দাবি যে বিশ্ব বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য ইরানের জ্বালানী তেলের আর দরকার নেই –পুরোপুরি ভিত্তিহীন একটি দাবি। এ ধরনের দাবি তোলার পরিবেশ তৈরি করতেই খুব দ্রুত উল্লেখযোগ্য মাত্রায় জ্বালানী তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে বাইডেন সম্প্রতি জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর প্রধান জোট 'ওপেক প্লাস'-এর কাছে যে দাবি জানিয়েছিলেন ওই জোট তাতে সাড়া দেয়নি।
ইরানি তেলের বিরুদ্ধে ওবামার ২০১২ সালের নিষেধাজ্ঞা যেমন কার্যকর হয়নি তেমনি ২০১৮ সালে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ট্রাম্প তেহরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে ইরানি তেলের রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনার ও তেলের আয় থেকে বঞ্চিত করার যে ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাও অনেকাংশেই সফল হয়নি। আর বাইডেনেরও এ ধরনের প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে না।
যেসব দেশ ইরানের তেল কিনবে তাদের ওপর শাস্তি আরোপের মার্কিন হুমকিও অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়নি। কারণ মার্কিন হুমকি উপেক্ষা করে অনেক দেশই ইরানি তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। যেমন, চীন গত তিন মাসে প্রতি দিন প্রায় ৮ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে ইরান থেকে যা আগের বছরের এ সময়ে কেনা ইরানি তেলের প্রায় দুই গুণ।
এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রেখে ইরান বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ইরানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে চলতি বছরের চলতি মাস নাগাদ তিন হাজার ১০০ কোটি ডলার হয়েছে। ইরানের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও গত বছরের শেষ থেকে এ পর্যন্ত শতকরা ৭০০ ভাগ বেড়ে প্রায় ৮ গুণ হয়েছে।
এসব তথ্য থেকে বোঝা যায় ইরান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বেশ সাফল্যের সঙ্গেই বানচাল করছে, বিশেষ করে ইরানের জ্বালানী তেল খাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তেমন কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩