প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির সহধর্মিনী ‘জামিলেহ’: অনুপ্রেরণার বাতিঘর
(last modified Sat, 25 May 2024 13:31:36 GMT )
মে ২৫, ২০২৪ ১৯:৩১ Asia/Dhaka
  • জামিলেহ আলামুল হুদা
    জামিলেহ আলামুল হুদা

তিনি সদ্য শহীদ প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির সহধর্মিনী। মুসলিম নারীদের শালীনতার প্রতীক ‘হিজাব’ দরদী সময়ের এক অনন্য সাহসিনী তিনি। তাঁর নাম জামিলেহ আলামুল হুদা। ১৮ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর।

জামিলেহ'র জন্ম ইরানের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর মাশহাদে ১৯৬৫ সালে। মুসলিম এই নারী একজন প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে যেমনি আদর্শবান, ঠিক তেমনি নারীদের অগ্রযাত্রায় এক অনন্য পৃথিকৃৎ। শিক্ষাজীবনে দর্শন বিভাগে সর্বোচ্চ ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।

জামিলেহ আলামুল হুদা

মুসলিম মেয়েরা যাতে শিক্ষা-দীক্ষা এবং কর্মজীবনে নিজেদের শালীনতা বজায় রেখে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য জামিলেহ'র কথাবার্তায় সবসময় নীতি-নৈতিকতার কথা খুঁজে পাওয়া যায়। ইরানের মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে তিনি যে অবদান রেখে চলেছেন তারই স্বীকৃতিস্বরূপ জামিলেহ আলামুল হুদা বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লিডারশীপ এন্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট’ ডিপার্টমেন্টের মেম্বার নির্বাচিত হন।

সদ্য শহীদ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি যেমনি মানবতাবাদী একজন মানুষ ছিলেন ঠিক তেমনি স্ত্রী জামিলেহ নিজ মুসলিম স্বজাতিদের প্রতি অত্যন্ত দরদি। ফিলিস্তিনে যেন ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে না জড়ায় ফ্রান্স, সেজন্য একবার তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর স্ত্রীর কাছে চিঠিও লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে জামিলেহ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে লিখেন- ‘প্রিয় মিসেস ম্যাক্রোঁ, অনুগ্রহ করে একজন সদয় এবং আত্মত্যাগী নারী হিসেবে (যিনি ফ্রান্সের নারী, মা ও কন্যাদের প্রতিনিধিত্ব করেন) আপনার স্বামীকে বলুন যেন অসহায় ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের হত্যার সহযোগী না হন। আমি আপনার মানবিক প্রচেষ্টার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পুরস্কার প্রার্থনা করছি।’

ফরাসি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ব্রিজিথ তোনিয়ো ও রায়িসির স্ত্রী জামিলেহ আলামুল হুদা

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির স্ত্রী জামিলেহ আলামুল হুদা মুসলিম মেয়েদের জন্য এক আদর্শের নাম। মেয়েরা যাতে ঘরে-বাইরে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে নিপীড়নের শিকার না হয় সেজন্য মুসলিম এই নারী সাহসিনীর বক্তব্য বিশ্বের প্রত্যেক মেয়ের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। পশ্চিমা নারী স্বাধীনতা যেখানে মেয়েদেরকে নিপীড়নের মুখে ঠেলে দেয়, তখন ইসলাম যে মেয়েদেরকে সঠিক মর্যাদা দিয়েছে এই বার্তাটি ২০২৩ সালে জামিলেহ আলামুল হুদা ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ববাসীকে জানান দিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন- স্বাধীনতার নামে নারীরা কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’

এ সময় তিনি তথাকথিত নারী অধিকারকর্মীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলেন, ‘নারী অধিকার সংস্থাগুলো পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাগুলোর ওপর খুব বেশি আলোকপাত করে যেখানে পরিবারের বাইরে সংঘটিত সহিংসতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

এবিসি নিউজে জামিলেহ আলামুল হুদার সাক্ষাৎকার

মেয়েদের অকৃত্রিম বন্ধু প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির সহধর্মিনী জামিলেহ আলামুল হুদা সেদিন বিশ্বকে বলেছিলেন- আমরা নারীরা নারীই থাকব। কেন আমাদেরকে পুরুষের মতো হতে হবে? মূলত, এই কথার মাধ্যমে তিনি নারীকে পণ্য বানানোর যে পশ্চিমা রীতিনীতি তা থেকে মেয়েদেরকে মুক্ত করার স্পষ্ট বার্তা দেন।

পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে এবিসির সাংবাদিক তার কাছে জানতে চেয়েছিল- যেসব নারীরা হিজাব পরতে চান না তাদের ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন? সে প্রশ্নের জবাবে জামিলাহ উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হিজাব না পরাটা নারীদের জন্য অসম্মানের।’

মেয়েদের হিজাব সম্পর্কে জামিলেহ আলামুল হুদা সেদিন বিশ্বকে স্পষ্টভাবে বলে দেন- ‘হিজাব আমাদের একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য আমাদের মাঝে ব্যাপকভাবে গৃহিত। জীবনের সর্বত্রই মেয়েদের পোশাক কোড রয়েছে।’

 

লেখা:

সামিয়া আফরিন

শিক্ষার্থী, উত্তরা, ঢাকা।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৫

ট্যাগ