রেডিও তেহরানকে কেন ভালোবাসি?
https://parstoday.ir/bn/news/letter-i106698-রেডিও_তেহরানকে_কেন_ভালোবাসি
বেতার ভুবনে আমি: ভারতের কোচবিহার সীমান্তবেষ্টিত কুড়িগ্রামের কালজানি তীরবর্তী সবুজ ছোট্ট গ্রাম উত্তর ধলডাঙ্গা। আজও যেখানকার মানুষ দেশের দৈনিক পত্র-পত্রিকার চেহারাও দেখতে পায় না। অনলাইন সংশ্লিষ্ট শব্দগুলোও যেখানে নেটওয়ার্ক নাগালের আড়ালে, সেখানে বিশ্বকে জানার একমাত্র মাধ্যম বলতে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু আর মার্কনি প্রদত্ত উপহার ঐ ছোট্ট ও সস্তা রেডিও যন্ত্রকেই বোঝায়। বিশ্বের সর্বত্র সর্বকালের, সর্বস্তরের মানুষের কাছেই যার অবদান ও অবস্থান আজও সবার শীর্ষে।
(last modified 2025-09-26T18:07:30+00:00 )
এপ্রিল ১৬, ২০২২ ১৩:০৬ Asia/Dhaka
  • রেডিও তেহরানকে কেন ভালোবাসি?

বেতার ভুবনে আমি: ভারতের কোচবিহার সীমান্তবেষ্টিত কুড়িগ্রামের কালজানি তীরবর্তী সবুজ ছোট্ট গ্রাম উত্তর ধলডাঙ্গা। আজও যেখানকার মানুষ দেশের দৈনিক পত্র-পত্রিকার চেহারাও দেখতে পায় না। অনলাইন সংশ্লিষ্ট শব্দগুলোও যেখানে নেটওয়ার্ক নাগালের আড়ালে, সেখানে বিশ্বকে জানার একমাত্র মাধ্যম বলতে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু আর মার্কনি প্রদত্ত উপহার ঐ ছোট্ট ও সস্তা রেডিও যন্ত্রকেই বোঝায়। বিশ্বের সর্বত্র সর্বকালের, সর্বস্তরের মানুষের কাছেই যার অবদান ও অবস্থান আজও সবার শীর্ষে।

নীরব শ্রোতা হয়ে বেতারে প্রবেশ:

১৯৭০-এর মাঝামাঝি। পারিবারিক বিধি-নিষেধের দেয়াল টপকিয়ে চুপিচুপি পাশের বাড়িতে গিয়ে রেডিও শুনতাম। কৈশোরে স্বভাবতই ঝোঁক থাকে বিনোদনের দিকে। কিন্তু আমার ভালো লাগত বেতারের সংবাদ।

আশি'র দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বেতারের একজন নীরব শ্রোতাই ছিলাম। অতঃপর বিভিন্ন বেতারের চিঠিপত্রের অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে স্পৃহা জাগে ডি-এক্সিং করার। যোগাযোগ স্থাপিত হয় বহির্বিশ্বের বিভিন্ন বেতারে। 

সখ্যতা স্থাপনের অমলিন স্মৃতি:

১৯৮৬'র শেষার্ধে কোনো একদিন। প্রতিবেশী এক ব্যাংকার মারফত খবর পেয়ে বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ভূরুঙ্গামারী সোনালী ব্যাঙ্কের এক সিনিয়র কর্মকর্তা আব্দুল খালেক ভাইয়ের সাথে দেখা করি। অতঃপর অভিভূত হই এজন্য যে, তিনি তার অপর দুই সহকর্মী শ্রোতা পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার ব্যাংক কর্মকর্তা আক্কাছ আলী ভাই ও আব্দুল্লাহ ভাইকে একই সময়ে হাজির করে তাদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। রেডিও তেহরান থেকে প্রচারিত তথ্যপূর্ণ ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান তথা এ বেতারের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের মাঝে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে আব্দুল খালেক ভাই আমাকে রেডিও তেহরানে লেখালেখি শুরু করতে পরামর্শ দেন। আর ঠিক তখন থেকেই প্রিয় রেডিও তেহরানের সাথে সখ্যতা স্থাপন। যদিও তিনি নিজে কখনো কোনো বেতারেই লিখতেন না। পরবর্তীতে সম্ভবতঃ নব্বইয়ের দশকের শেষপ্রান্তে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি (রহ.)-এর জীবনাদর্শভিত্তিক বিশেষ ধারাবাহিক 'দিশারী' অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে প্রায়শঃই খালেক ভাইয়ের সাথে আলোচনা হতো। সেসময় প্রিয়জন প্রচারিত হতো সপ্তাহে দু'দিন (সোম ও শুক্রবার)।

প্রসঙ্গত অতীব দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, যে ভাইটির অনুপ্রেরণায় আমি আজও রেডিও তেহরানের মায়াজালে বন্দী, তথ্য প্রযুক্তির চলতি ধারায় বহুমুখী মিডিয়ার ফলাফল প্রত্যক্ষ করার পূর্বেই তিনি না ফেরার জগতের বাসিন্দা হয়ে গেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে রাখুন।

মজলুম জনতার নির্ভীক কণ্ঠস্বর রেডিও তেহরান:

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বব্যাপী সহস্র অযুত মিডিয়ার অবস্থান সত্ত্বেও মজলুম জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে বস্তুনিষ্ঠ কথা বলতে একমাত্র যে মাধ্যমটি ২৪ ঘণ্টা তৎপর তার নাম রেডিও তেহরান। এ জন্যই মূলতঃ এ মাধ্যমকে এত ভালোবাসি। ইসলামী দুনিয়ার সার্বক্ষণিক হালচাল জানানোর পাশাপাশি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা দেশটির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে এমনকি ঘরে বসে ইরান ভ্রমণ করতে রেডিওর অনুষ্ঠানমালা যেভাবে আমাকে সহায়তা করছে সেজন্য অবশ্যই আমি রেডিও তেহরানের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ।  

রেডিও তেহরান মানবতার দিশারী:

একথা অনস্বীকার্য যে, উন্নত জীবন গড়তে, আদর্শ পরিবার ও সমাজ গঠনে রেডিও তেহরান এক সফল অভিভাবক। রেডিও তেহরানের নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্ব সংবাদ যেভাবে ইসলামী বিশ্বের সর্বসাম্প্রতিক অবস্থাসহ গোটা বিশ্ব পরিস্থিতিকে শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরছে প্রতিনিয়ত; ঠিক সেভাবেই এর সাপ্তাহিক সব অনুষ্ঠানমালাও আমাদের বহুমুখী জ্ঞানের ভাণ্ডারকে যারপরনাই করছে সমৃদ্ধ। সুতরাং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে আহ্বান, "রেডিওর মাঝে সোনা লুকিয়ে আছে, খুঁজে খুঁজে বের করুন"। আর রেডিও তেহরানই হোক সবার নিত্য দিনের পথ প্রদর্শক।

শেষের কথা:

রেডিও তেহরানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি সবিনয়ে আবেদন, অনলাইনের সুযোগ বঞ্চিত অসংখ্য শ্রোতাদের কথা ভেবে এবং শেকড়ের টানে সব মাধ্যমের পাশাপাশি উন্নত ও উচ্চ শক্তি সম্পন্ন শর্টওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি সংযোজন করে সকল শ্রোতাকে অনুষ্ঠান শোনার সুযোগ করে দেয়া হোক। আইআরআইবি বাংলা বিভাগ তার সুবর্ণজয়ন্তী, হীরকজয়ন্তী পেরিয়ে একসময় শতবার্ষিকী উদযাপন করবে, ১৭ এপ্রিল ২০২২-এ ৪০তম বার্ষিকীর শুভলগ্নে এমনটাই আমার একান্ত প্রত্যাশা।

 

আব্দুল কুদ্দুস মাস্টার

শাপলা শর্টওয়েভ রেডিও শ্রোতা সংঘ

উত্তর ধলডাঙ্গা, ভূরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।