রেডিও তেহরানের ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী:
বাংলাভাষী শ্রোতাদের জন্য বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের নিশ্চিত উৎস রেডিও তেহরান: শিবেন্দু পাল
রেডিও তেহরান, আই আর আই বি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস,পার্স টুডে বাংলা বিভাগ এর ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলা বিভাগ রেডিও তেহরানের শ্রোতাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও অকৃত্রিম শুভেচ্ছা। ২০২২ সালের ১৭ই এপ্রিল রেডিও তেহরান, আই আর আই বি বাংলা বিভাগ ৪০ বছর পূর্ণ করলো। এ এক অনন্য নজির । বিশ্বের মুষ্টিমেয় কয়েকটি বেতার এই নজির সৃষ্টি করতে পেরেছে।
সুদীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগ ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষের অন্যতম বেতার-গণমাধ্যম হয়ে উঠেছে। অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে শ্রোতাদের মনোরঞ্জনের সাথে সাথে ইরানের মানুষ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে বেশী বেশী জানার ও বোঝার সুযোগ করে দিচ্ছে আমাদের সকলের প্রিয় রেডিও তেহরান। বাংলাভাষী মানুষকে অত্যন্ত সহজভাবে ইসলামি সংস্কৃতি, কোরান শেখার পাশাপাশি বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা করে চলেছে। সেইসঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ ও ইরানের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বকে আরো জোরদার করছে।
প্রতিদিনের এক ঘণ্টার অধিবেশনে থাকে বিশ্ব সংবাদ, দৃষ্টিপাত, কথাবার্তা, ভারত ও বাংলাদেশের সংবাদদাতাদের রিপোর্ট, সংবাদ ও বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার- আলাপন, বিনোদন, স্বাস্থ্যকথা, ছোটোদের আসর রংধনু , পাশ্চাত্যে জীবন ব্যবস্থা , কোরানের আলো, শ্রোতাদের চিঠি পত্রের জবাব প্রদান ও শ্রোতাদের সঙ্গে কথপোকথন মূলক অনুষ্ঠান প্রিয়জন ।
বিশ্বব্যাপী রেডিও তেহরান এর সংবাদদাতাদের পাঠানো বস্তুনিষ্ঠ সর্বসাম্প্রতিক সংবাদ ও প্রতিবেদন ভারত ও বাংলাদেশে বাঙালি শ্রোতাদের জন্য নির্ভরযোগ্য সংবাদের এক নিশ্চিত উৎস। আর সেই সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে অজস্র তথ্য সরবরাহ। মাল্টি-মিডিয়ার এই যুগে রেডিও তেহরান, ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমেই পালন করছে অগ্রণী ভূমিকা। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ বেতার সাংবাদিক ও সম্প্রচারকদের মেধায় রেডিও তেহরান বাংলা হয়ে উঠেছে সকলের প্রিয়।
“কত অজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাই-
দূর কে করিলে নিকট, বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।।”
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এই অংশটি আমার বেতার জীবনকে ভীষণ নাড়া দেয়। ছোটবেলা থেকে বাড়িতে আমাদের রেডিও শোনার একটা রেওয়াজ ছিল। বাবা-মা, দিদিরা রেডিওতে মূলত অল ইন্ডিয়া রেডিও আকাশবাণীর খবর, গান, গল্প-নাটকের অনুষ্ঠান শুনত। আমিও শুনতাম। তখন টেলিভিশন এর তেমন প্রচলন ছিল না। আর আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না বলে টেলিভিশনও ছিল না। আমি তখন স্কুলে পড়ি,১৯৯৫ সাল-অল ইন্ডিয়া রেডিও আকাশবাণীর কিশোর কিশোরীদের জন্য সন্ধিক্ষণ এর প্রশ্ন-উত্তর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম ও অল ইন্ডিয়া রেডিও আকাশবাণীর শ্রোতা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে রেডিও শোনা কিছুটা নিয়মিত হয়। বাবার মুখে শুনেছি বিভিন্ন দেশ থেকে রেডিও শোনার কথা-ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি, রেডিও তেহরান, চিন আন্তর্জাতিক বেতার, এর কথা। কিন্তু তখন বুঝতাম না। একদিন সন্ধে বেলা রেডিও শুনতে শুনতে কেমন যেন একটু অন্য রকমের বাংলা ভাষার অনুষ্ঠান পেলাম। মনের মধ্যে ভীষণ কৌতূহল জেগে উঠলো। মনোযোগ দিয়ে জানতে পেলাম রেডিও তেহরান। এই সময় প্রতিবেশী শ্রোতাবন্ধু জয়দীপ ব্যানারজী ও কর্মস্থলে বর্ষীয়ান শ্রোতাবন্ধু আব্দুর রসিদ বিশ্বাস ও বিভিন্ন শ্রোতাদের সক্রিয় সহযোগিতা আমাকে রেডিও তেহরানের শ্রোতা করে তুলেছে।
সাক্ষাতকার, রেডিওতে অনুষ্ঠান শোনার পাশাপাশি অনুষ্ঠান সম্পর্কিত মন্তব্য ও রেডিও তেহরান কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা, রেডিও তেহরান স্টুডিও থেকে ফোন এ সাক্ষাতকার এবং প্রিয়জন আসরে তা প্রচারের ঘটনা মনের গহীনে একটা আলাদা অনুভূতি এনে দেয়। প্রিয়জন আসরে প্রচারিত সাক্ষাতকার আমার সংগ্রহে আছে যা মাঝে মাঝে শুনি।
QSL কার্ড, ক্যালেন্ডার ও স্যুভেনির সংগ্রহ রেডিও শ্রোতাদের একটি অন্যতম নেশা। বেতার কেন্দ্র থেকে চিঠি পেতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি নতুন বছরের ক্যালেন্ডার, বিভিন্ন সুভিনিওউর, রিশেপশন রিপোর্ট পাঠিয়ে ভেরিফিকেশন কার্ড বা QSLকার্ড পেলে আরও ভালো লাগে। রেডিও তেহরান শ্রোতাদের সুদৃশ্য নতুন বছরের ক্যালেন্ডার পাঠায় যা শুধুমাত্র আমাদের কাছে ক্যালেন্ডার নয়, ইরানের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরে। এরকম বেশ কয়েক বছরের ক্যালেন্ডার ও বিভিন্ন স্যুভেনির আমার সংগ্রহে আছে যা মাঝে মাঝে দেখে তৃপ্তি লাভ করি।
ক্লাব কর্মকাণ্ডে মিতালী লিসেনার্স ক্লাব সারা বছর নানারকম কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছে। থালাসেমিয়া শিশুদের জন্য সেচ্ছায় রক্তদান শিবির, দুস্থ ছাত্রছাত্রীদের খাতা, পেন বই বিতরন, ছাত্রছাত্রী ও শ্রোতাদের মধ্যে রেডিও বিষয়ক আলোচনা, সেমিনার, প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন নতুন শ্রোতার মাঝে অনুষ্ঠানসূচি বিতরণ করা হয়।
এই সুদীর্ঘ সফল পথ চলায় আমি রেডিও তেহরান এর সকল নেতৃবৃন্দ ও উপস্থাপক-উপস্থাপিকা ও কর্মীবৃন্দকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। তাঁদের অবিচল নিষ্ঠা ও অক্লান্ত পরিশ্রম আর ভালোবাসায় রেডিও তেহরান হয়ে উঠেছে সকলের প্রিয় ও বিশ্ব সেরা বেতার কেন্দ্র। তাই আজকের এই শুভ অবকাশে আমি রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগ এর কার্যক্রম আর অনুষ্ঠানমালার উৎকর্ষ ও শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি। সেইসঙ্গে আমার প্রাণের বেতারকেন্দ্র রেডিও তেহরান ক্রমবর্ধমান শ্রোতা আনুকুল্যে সিক্ত হোক এবং ছুঁয়ে যাক সাফল্যের নতুন নতুন শিখর ।
শুভেছান্তে-
শিবেন্দু পাল
সভাপতি, মিতালী লিসনার্স ক্লাব
৪৯/৩৬ ডঃ সুন্দর গোপাল ধর লেন
খাগড়া, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।
পশ্চিমবঙ্গ , ভারত। ৭৪২১০৩
পেশা- শিক্ষকতা