শ্রোতাদের মতামত
'রংধনু আসর শুনে মনে হচ্ছিল কথিকা নয়, যেন ছায়াছবি দেখছি'
প্রিয় মহোদয়, আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন। রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে ০১/০৯/২০২২, বৃহস্পতিবার প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো হল বিশ্বসংবাদ, দৃষ্টিপাত, রংধনু আসর ও কথাবার্তা। তন্মধ্যে রংধনু আসর আমাদের সবচেয়ে প্রিয়।
এটি মূলতঃ ছোটদের অনুষ্ঠান হলেও ছোট-বড় সবাই এ অনুষ্ঠানটি পছন্দ করে। কেননা এর প্রতিটি গল্প যেমন শিক্ষামূলক, তেমনি আনন্দদায়কও বটে।
রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে যেসব অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হল প্রিয়জন আর দ্বিতীয় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হল রংধনু আসর। রংধনুর প্রতিটি আসর গল্প, কথিকা ও শিশুদের গান-আবৃত্তিতে ভরপুর থাকে। রংধনুর গত আসরে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি তথ্যবহুল কথিকা প্রচারিত হয়। আমাদের দারুণ ভালো লেগেছে এ কথিকাটি।
আশরাফুর রহমানের পরিকল্পনায় এবং আকতার জাহান ও গাজী আব্দুর রশিদের উপস্থাপনায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংগ্রামী জীবন ও কবিতা শুনতে পেরে আমার মত অগণিত শ্রোতা আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট (১২ ভাদ্র) এ মহান কবি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট ছিল কবির ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি হওয়া সত্বেও তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী যতটা গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত ছিল, তা আমরা করতে পারিনি। এমতাবস্থায় রেডিও তেহরান তাঁর উপর একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান প্রচার করে আমাদেরকে সে দায়ভার হতে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের থেকে আমরা জানতে পারি যে, কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের কবি। তিনি ছিলেন সমাজের অসহায় ও নির্যাতিত মানুষের মুখপাত্র। একজন দুঃখী মানুষ হিসেবে নির্যাতিত ও দুঃখীদের দুঃখ-কষ্ট তিনি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন। তাই নির্যাতনের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কবি ছিলেন সোচ্চার। অন্যদিকে দুঃখকে জয় করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল কবির।
রংধনু আসর জুড়েই ছিল কবির শিক্ষা, সংগ্রাম, পেশা ও কবি হয়ে ওঠার কথা। অনুষ্ঠানটি এতটাই প্রাণবন্ত ছিল যে, মনে হচ্ছিল কথিকা নয়, যেন একটা ছায়াছবি দেখছি। অল্প পরিসরে নজরুর যেন আমাদের কাছে জীবন্ত হয়ে ওঠেন। কবি ছিলেন দূরন্ত প্রকৃতির ও চঞ্চল। তাই কোন স্থানেই তিনি স্থির হতে পারেন নি। কোন বাঁধন তাঁকে আটকাতে পারেনি। সে কথা অনুষ্ঠানের পরতে পরতে ফুটে ওঠেছে।
দরিরামপুর থেকে পালিয়ে নজরুল ভর্তি হন রানিগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ হাই স্কুলে। সেখানে বন্ধু হিসেবে পান শৈলজা নন্দকে। এসময় নজরুল গল্প লিখতেন আর শৈলজা নন্দ লিখতেন কবিতা। তাঁরা একজন আরেকজনকে তাদের লেখা দেখাতেন, মতামত নিতেন। একজন আরেকজনের প্রশংসা করতেন। একসময় শৈলজা নন্দ কবিতা বাদ দিয়ে গল্প লেখা শুরু করেন, আর নজরুল গল্প বাদ দিয়ে কবিতা। তাই বলা যায়, এটি ছিল নজরুলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট।
চমৎকার একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নজরুলকে এভাবে আবিস্কার করতে পেরে দারুণ রোমাঞ্চিত হয়েছি। হৃদয় নিংড়ানো এমন একটি তথ্যবহুল অনুষ্ঠান উপহার দেয়ায় রেডিও তেহরানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
ধন্যবাদান্তে,
মোঃ শাহাদত হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ- ২৩০০, বাংলাদেশ।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৫