'জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানিদের অবদান' অনুষ্ঠান সম্পর্কে মতামত
(last modified Sun, 08 Jan 2023 12:38:40 GMT )
জানুয়ারি ০৮, ২০২৩ ১৮:৩৮ Asia/Dhaka
  •  'জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানিদের অবদান' অনুষ্ঠান সম্পর্কে মতামত

প্রিয় মহোদয়, আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন। রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে আজকের (০৭/০১/২০২৩, শনিবার) প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো হল বিশ্বসংবাদ, দৃষ্টিপাত, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানিদের অবদান, কথাবার্তা ও ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাস। প্রতিটি অনুষ্ঠানই আমাদের খুব খুব ভালো লেগেছে। তবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানিদের অবদান অনুষ্ঠানটি আমাদের অত্যাধিক ভালো লেগেছে। এমন সুন্দর ও উপভোগ্য একটি অনুষ্ঠান শ্রোতাদের উপহার দেয়ায় রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

মূলতঃ আমাদের মত অনেক শ্রোতাই ইরানকে জানার জন্য, ইরানের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানের সাফল্য সম্পর্কে অনুধাবনের জন্য রেডিও তেহরানের অনুষ্ঠান শুনে থাকেন। তাদের জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানিদের অবদান একটি অনন্য সাধারণ অনুষ্ঠান। ইরানের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাফল্যের সাথে সাথে মুসলিমদের সাফল্য ও অবদান সম্পর্কেও আমাদের জানা হয়ে যাচ্ছে।

আজকের (০৭/০১/২০২৩, শনিবার) জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানিদের অবদান অনুষ্ঠানে মূলতঃ জ্যোতির্বিজ্ঞানে ইরানের অবদান ও সাফল্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান মৌলিক বিজ্ঞানের একটি। কিভাবে মহাজগৎ সৃষ্টি হয়েছে সে তথ্য তুলে ধরা হয় এখানে। মহাজাগতিক সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন করে দেয় জ্যোতির্বিজ্ঞান। এটি একটি প্রাচীনতম বিজ্ঞানও।

মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনের মূল হাতিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞান। প্রাচীনকাল থেকে এ বিষয়ে মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখ্য যে, প্রাচীন সভ্যতার দেশগুলোর মধ্যে পারস্যও এ ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। পারস্যের বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস অনেক পুরোনো।

ইসলাম-পূর্ব যুগেও পারস্য তথা ইরান জ্যোতির্বিজ্ঞানে বেশ উন্নত ছিল। আবু রায়হান আল বেরুণী তাঁর লেখায় প্রাচীন পারস্যের জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছেন। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ইরানি জোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ আবিস্কার করেন। এছাড়া তারা সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছিলেন। পারস্য তথা ইরানে মান মন্দিরও ছিল।

মহাকাশের গতিবিধি, গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে গবেষণার জন্য মান মন্দির ছিল প্রধান কেন্দ্র। ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে ইরানে মান মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। ইসলামি যুগে বাগদাদে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল এবং মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও এ ধরনের গবেষাণাগার স্থাপন করা হয়।

ইরানে খ্রিস্টিয় অস্টম থেকে ষোল শতাব্দী পর্যন্ত তৎকালীন শাসকদের সহায়তায় মান মন্দির নির্মিত হয়েছিল। এসময় মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাঁদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতেন। সূর্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবীর আয়তন ও পরিধি পরিমাপ করা হয়েছিল। এসময় খাজা নাসিরুদ্দিনের অনুপ্রেরণায় হালাকু খান ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মান মন্দির মারাগা মান মন্দিরটি নির্মান করেছিলেন। এ মান মন্দিরের পাশেই তৈরি করা হয় একটি সুবৃহৎ গ্রন্থাগার, যাতে প্রায় চার লক্ষ বই ছিল।

ইরানের এই মারাগা মান মন্দিরটিতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা দেয়া হত। ইরানি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এসময় রংধনু সৃষ্টির কারণ বের করেছিলেন। ইরান ও চীনের মধ্যে বিজ্ঞান ক্ষেত্রে যোগাযোগ ছিল।

আহা, অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে ইরানের প্রাচীন ও ইসলামি সময়ে চলে গিয়েছিলাম। অনুধাবন করে অবাক হচ্ছিলাম, কতটা উন্নত ছিল ইরান ও মুসলিম জাতি। ইসলামের সে ঐতিহ্য ইরান ধরে রাখলেও বিশ্বের অপরাপর মুসলিম দেশগুলো এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। আমরা ইরানের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অনান্য মুসলিম দেশগুলোকে শিক্ষা, জ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে ইসলামের মর্যাদাকে উন্নত করার জন্য এগিয়ে আসে।

 

 

ধন্যবাদান্তে,

মোঃ শাহাদত হোসেন

সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ-২৩০০, বাংলাদেশ।  

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৮