হযরত ফাতিমা (সা. আ.)'র জন্মদিনকে 'নারী ও মাতৃ দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী
https://parstoday.ir/bn/news/letter-i118452-হযরত_ফাতিমা_(সা._আ.)'র_জন্মদিনকে_'নারী_ও_মাতৃ_দিবস'_পালনের_সিদ্ধান্ত_যুগান্তকারী
মহোদয়, গতকাল (১৩ই জানুয়ারি, ২০২৩) মানবজাতির অনন্য গৌরব ও শ্রেষ্ঠ মহামানবী হযরত ফাতিমা যাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা'র পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করার জন্যে ধন্যবাদ জানাই।
(last modified 2025-10-08T09:10:00+00:00 )
জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ ১৯:৪৮ Asia/Dhaka
  • হযরত ফাতিমা (সা. আ.)'র জন্মদিনকে 'নারী ও মাতৃ দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী

মহোদয়, গতকাল (১৩ই জানুয়ারি, ২০২৩) মানবজাতির অনন্য গৌরব ও শ্রেষ্ঠ মহামানবী হযরত ফাতিমা যাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা'র পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করার জন্যে ধন্যবাদ জানাই।

জনাব নাসির মাহমুদ ও আক্তার জাহান পরিবেশিত বিশেষ আলোচনায় এই মহা মানবীর নানা দিক তুলে ধরে ইসলামের এক গৌরবময় ব্যক্তিত্বের প্রতি রেডিও তেহরান-এর যথার্থ সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন আমাদের মুগ্ধ করেছে।

ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয় ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হযরত ফাতিমা যাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা'র শুভ জন্মদিন 'মাতৃদিবস' ও 'নারী দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। একজন মহামানবীর আদর্শকে সমুজ্জ্বল রাখতে ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এ অনন্য নজির স্থাপন করার জন্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানেরকে কুর্নিশ জানাই।

জমাদিউসসানি মাসের বিশ তারিখ; এই দিন নুবুওয়াতের পঞ্চম বর্ষে মহানবীর গৃহ আলো করে প্রথম উম্মুল মুমিনীন  হযরত খাদিজাতুল কুবরার (সা. আ.) গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন হযরত ফাতিমা মার্যিয়াহ্, রাযিয়া, তাহিরা, যাকিয়া, সিদ্দিকা (পরম সত্যবাদিনী) যাহরা বাতূল্ (সা. আ.) ।

বিশ্বনবীর পুত্র সন্তানরা শৈশবেই ইন্তিকাল করায় মক্কার কাফিররা যখন মহানবীকে আবতার বা নির্বংশ বলে বিদ্রূপ করতো তখন মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন হযরত ফাতিমা যাহরা। পবিত্র কুরআনে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে 'কাওসার' হিসেবে যার অর্থ মহত্ত্ব আর নেয়ামতের চির-প্রবহমান ঝর্ণা।

মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা সন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা। ‘ফাত্ম্’ শব্দের অর্থ রক্ষা করা। এ সম্পর্কে মহানবী বলেন: ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।

'ফাতেমাতু বাদয়াতু মিন্নি’ 'ফাতেমা আমারই অংশ'- রাসুল (সা.)।

-এ হাদিস মোতাবেক হজরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা কত বড় মর্যাদাবান মহীয়সী, তা সহজেই জানা যায়। তিনি ছিলেন শেরে খোদা আলী রাদিআল্লাহু আনহুর ‘স্ত্রী’, জান্নাতের যুবকদের নেতা হজরত ইমাম হাসান ও হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহুমার ‘মা’।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা, ‘ ফাতেমা জান্নাতবাসী নারীদের নেত্রী,' হবেন।

তিনি ছিলেন যাহরা বা প্রস্ফুটিত জান্নাতি ফুল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তার নাম যাহরা এ জন্য যে, তার মাধ্যমে আকাশবাসী আলোকিত হয়েছে। আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র সুশোভিত হয়েছে। আর তা ছিল তার দুনিয়া বিমুখতা, পরহেজগারি এবং ইবাদতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার ফল। আর এ সব গুণিই তাঁকে অনন্য নারী রূপে প্রতীয়মান করেছে।

তিনি ছিলেন সিদ্দিকা। যিনি জীবনে মিথ্যা বলেননি। তার আদর্শের পথে চলতে গেলে বিশ্বের কোনো নারী-পুরুষ কোনো দিন মিথ্যা বলা, মিথ্যার আশ্রয় নেয়া সম্ভব নয়।

তিনি ছিলেন ‘আল মুবারাকা’ বা বরকতের আধার। তিনি ছিলেন আল মারদিয়া। আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েই পরকালে শাফায়াতের অধিকার দেবেন।

তিনি ছিলেন ‘আয যাকিয়া’ বা কলুষমুক্ত। সমগ্র বিশ্বের নারী জগতে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত মহীয়সী। তিনি ছিলেন উম্মুল আইম্মাহ বা ইমামগণের মা। তার বংশধারায় এ পৃথিবীতে এসেছে শতশত ইমাম।

তিনি ছিলেন নারী জাতির ইমান, আমল, শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানবতার আদর্শ। তার পরিবারের ওপর এ জন্যই প্রতি নামাজে দরূদ পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একজন আদর্শ মা হতে হলে, হজরত ফাতেমা যাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ একজন আদর্শ মা-ই পারে আদর্শ জাতি উপহার দিতে।

হযরত ফাতিমা ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোষহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ অনেক মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবীর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা'র অন্য একটি উপাধি উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁকে সর্বযুগের নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণেই ফাতিমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিতেন মহানবী (সা)।

রাসুলে খোদা বলেছেন, 'ফাতিমা  আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতিমা কে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়।'

হযরত ফাতিমা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সংসারের যাবতীয় কাজ তিনি নিজের হাতে করতেন। মশক দিয়ে পানি তুলতে তুলতে তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি যাঁতার মাধ্যমে এত পরিমাণ আটা তৈরি করতেন যে, তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আর সেই আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে সেগুলো মদীনার দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ফাতিমার কাপড়ের পোশাকে থাকতো তালি। পার্থিব কোন বস্তুই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারত না। আর এজন্যই রাসূল (সা.) তাঁকে ‘বাতুল’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

মহানবীর (সা) স্ত্রী আয়শা বিনতে আবুবকর বলেছেন: কথা-বার্তায় ও চাল-চলনে রাসুলে খোদার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যার মিল দেখা যেত তিনি হলেন ফাতিমা। ফাতিমার প্রতি মহানবীর ভালোবাসা ও স্নেহ এত গভীর ছিল যে, যখনই তিনি ফাতিমাকে দেখতেন তখন বলতেন: আমি ফাতিমার কাছ থেকে বেহেশতের সুঘ্রাণ পাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে প্রচারিত "ইয়া যাহরা, ইয়া যাহরা....." গানের টুকরো অংশটি ছিল অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ও চমকপ্রদ। পুরো গানটি শুনতে পেলে আরো ভালো লাগতো।

হযরত ফাতিমা যাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা'র পবিত্র জন্মদিবস উপলক্ষে সকলকে জানাই সালাম ও প্রাণঢালা মুবারক-বাদ।

 

শুভেচ্ছান্তে,

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন,

বারুইপাড়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।