ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ; রোমের ইথিওপিয় গণহত্যা থেকে তেলআবিবের গণহত্যায় সহযোগিতা
-
নেতানিয়াহুর পাশে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি
পার্সটুডে-দুই ইতালীয় মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীকে গাজায় গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি মঙ্গলবার বলেছেন যে তাকে এবং তার দুই মন্ত্রীকে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হাজির করা হয়েছে। "আমি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনিও তাইয়ানি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিডো ক্রুস্তো এবং লিওনার্দো মিলিটারি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবার্টো সিনোলানিকে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হাজির করা হয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইতালি তিনটি দেশের মধ্যে অন্যতম, যারা ইসরায়েলি শাসকদের কাছে "প্রধান ধরনের প্রচলিত অস্ত্র" সরবরাহ করেছে। সিপ্রি ইনস্টিটিউট আরও জানিয়েছে যে এই সময়ের মধ্যে ইতালি যে অস্ত্র সরবরাহ করেছে তার মধ্যে বেশিরভাগই হেলিকপ্টার এবং নৌবাহিনীর অস্ত্র রয়েছে। ইতালি এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যা মার্কিন নেতৃত্বাধীন অস্ত্র কর্মসূচির আওতায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ তৈরিতে জড়িত।
গাজার গণহত্যায় ইসরাইলের সাথে রোমের সহযোগিতার বিষয়টি ইতিহাসের অন্য প্রান্তে চলে যায়, কারণ ১৯৩৫ সালের অক্টোবরে মুসোলিনির নেতৃত্বে ইতালির ইথিওপিয়া আক্রমণ ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর একটি ঔপনিবেশিক যুদ্ধ। ওই যুদ্ধ এমিলিউড বোনোর নেতৃত্বে ইতালীয় সৈন্যদের দ্বারা হাইল্লা সালাসির নেতৃত্বাধীন ইথিওপিয়া আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
এটি ছিল ইথিওপিয়ায় ইতালির দ্বিতীয় আক্রমণ। ১৮৯৬ সালে ইতালির প্রথম আক্রমণে ইথিওপিয়া আক্রমণকারীরা শক্তিশালী যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং শক্তিশালী বিমান বাহিনী নিয়ে এসেছিল, তবে তারা ইথিওপীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে নি এবং পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। প্রায় ৪০ বছর পর, ইতালি আবারো ইথিওপিয়া আক্রমণ করে, কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই, ইথিওপিয়া দখল করে, এবং হর্ন অফ আফ্রিকা ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করে। যদিও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই হামলার নিন্দা করা হয়েছিল, কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি, এমনকি ইতালির অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছিল! যাই হোক না কেন, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যখন বেশিরভাগ ইথিওপীয়দের কাছে আত্মরক্ষার জন্য কেবল ধনুক ও তীর ছিল তখন ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা দখল করা ইতালির একটি বিরাট বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। ইতালীয় সেনাবাহিনী ইথিওপিয়া দখল করার পর, সবচেয়ে নিষ্ঠুরভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে। ইয়ান ক্যাম্পবেল তার বই "ইতালির জাতীয় লজ্জা"য় লিখেছেন যে, ১৯৩৬ সালের জুন মাসে ইতালির সেনাবাহিনী ইথিওপিয়ার রাজধানীতে প্রবেশের পরই ইতালির নেতা আদেশ দিয়েছিলেন যে "সব বন্দী বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা করা হবে"। দূরবর্তী শহরগুলোতে এবং অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে বন্দীদের মধ্যে গণহত্যা অব্যাহত ছিল। ক্যাম্বেলের মতে, উচ্চশিক্ষিত বা উচ্চবিত্ত বংশোদ্ভূত হওয়ার কথা প্রকাশ করা ইথিওপীয়দের জন্য মারাত্মক ছিল।
১৯৩৭ সালের ১৯-২১ ফেব্রুয়ারি, এই তিন দিনে আদ্দিস আবাবায় ১৯ হাজার পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বা ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, অন্যরা তাদের ক্লাবগুলো পুড়িয়ে দেওয়ায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। তবে, তাদের মধ্যে অনেকেকে ডোবায়, পুকুরে, গর্তে কিংবা নদীতে ফেলে দিয়ে ডুবিয়ে মারা হয়েছে!
১৯৪৬ সালে, ইথিওপিয়ার নতুন স্বাধীন সরকার জাতিসংঘের কাছে প্রমাণ উপস্থাপন করে যে ইতালির শাসনামলে তাদের অর্ধ মিলিয়ন নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিল।#
পার্সটুডে/এনএম/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।