৩১ দফা না জুলাই সনদ
ক্ষমতায় এলে বিএনপির অগ্রাধিকার কোনটি-জানালেন তারেক
-
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি ক্ষমতায় এলে বা সরকার গঠন করতে পারলে ৩১ দফা না কি জুলাই সনদ, কোনটি অগ্রাধিকার পাবে, সে বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে অবশ্যই ঐকমত্য কমিশনে যেগুলোতে সবাই মিলে একমত হয়েছে, সেগুলোতে প্রথমে জোর দেবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা যেগুলোতে একমত হয়েছি, প্রথমে আমরা সেগুলোর ওপরেই জোর দেব। সেটা আপনি যে নামেই বলেন না কেন, স্বাভাবিকভাবে আমরা ঐকমত্য কমিশনে যেগুলোতে সবাই মিলে একমত হয়েছি, সেগুলোতে ইনশা আল্লাহ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথমে জোর দেব।’
পশ্চিমা গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আজ মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। এই পর্বে তারেক রহমান সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, ওয়ান ইলেভেন এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারপর আপনি যেটা ৩১ দফার (রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির রূপরেখা) কথা বললেন, অবশ্যই ৩১ দফা আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জনগণের প্রতি। আমরা তো আমাদের ৩১ দফার মধ্যে যেগুলো এটার (জুলাই সনদ) সঙ্গে মিলে গেছে, সেগুলো তো করবই। এর বাইরে যেগুলো ৩১ দফায় থাকবে, সেগুলোও বাস্তবায়ন করব। কারণ, ওটা তো আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। এটাও যেমন পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট, ওটাও আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট।’
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়গুলো নিয়ে বা বাস্তবায়নের পথ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একটা বিতর্ক আছে। অনেক দল বলছে যে নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি দেওয়া বা বাস্তবায়ন করা। আর বিএনপি বলছে, নির্বাচিত সংসদ সেটা করবে। এই জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়টা কী, বিএনপির চিন্তাটা এখন কী—এমন প্রশ্ন ছিল তারেক রহমানের প্রতি।
জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘দেখুন, এখানে আবার আমাকে বলতে হচ্ছে, আমরা কিন্তু কোনো হাইড অ্যান্ড সিক করছি না। যদি আমাদের সে রকম অসৎ উদ্দেশ্য থাকত, মনের ভেতরে থাকত একটা, বলতাম আরেকটা যে ঠিক আছে, ওকে, অসুবিধা নেই। তারপর ইনশা আল্লাহ আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমরা হয়তো করতাম না। তো আমরা যেটা মনে করছি, সেটাই বলছি।’
সাম্প্রতিক নেপালের ঘটনার উদাহরণ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, তারা কিন্তু এত কিছুর মধ্যে যাচ্ছে না, তারা বলছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা সংস্কার যা-ই আছে—জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি এসে সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
সেই সূত্র ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘তারপরও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সবকিছু বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলো বসেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আহ্বান করেছে। এখানে যতটুকু হয়েছে, আমরা বলেছি, এখন যতটুকু হয়েছে, যেগুলো শুধু আইন দিয়ে করলে হয়ে যায়, সেগুলো হয়ে যাক। যেগুলোর সাংবিধানিক এনডোর্সমেন্ট লাগবে, সেগুলো আমরা মনে করি যে নির্বাচিত সংসদ হওয়ার পর সেখানে গ্রহণ করাটাই ভালো হবে।
কারণ হিসেবে তারেক রহমান বলেন, নির্বাচিত সংসদের কথা বলা হচ্ছে, আবার যদি তাকে বাদ দিয়ে আউট অব দি বক্স কিছু করা হয় এবং এটা রেওয়াজ হয়ে যায়, তাহলে এটা সাংবিধানিকভাবে, আইনগতভাবে হোক বা যেকোনো দিক থেকে হোক, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশের জন্য সামগ্রিকভাবে ক্ষতির একটি কারণ হবে। সে জন্য বিএনপি এটার সঙ্গে একমত নয়।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, বিএনপি ৩১ দফা ও জুলাই সনদকে একসঙ্গে দেখছে। তবে সাংবিধানিক ও আইনগত সীমারেখা মেনে, দেশের স্বার্থ ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এগোতে চায় দলটি।#
পার্সটুডে/জিএআর/৭