'হযরত যায়নাব (সা. আ.)-এর জন্ম‌দিন উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানটি ছিল উপভোগ্য'
(last modified Wed, 08 Feb 2023 03:28:32 GMT )
ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩ ০৯:২৮ Asia/Dhaka
  • 'হযরত যায়নাব (সা. আ.)-এর জন্ম‌দিন উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানটি ছিল উপভোগ্য'

সালামুন আলাইকুম। আশা ও প্রার্থনা করি মহান আল্লাহ'র অশেষ রহমতে আপনারা সকলে ভালো ও সুস্থ আছেন। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রিয় নাতনি, আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) ও বে‌হেশ‌তের নারী‌নেত্রী হযরত ফা‌তিমা জাহরা (সা. আ.)-এর কন্যা হযরত যায়নাব (সা. আ.)-এর প‌বিত্র জন্ম‌দিন উপলক্ষ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি রেডিও তেহরান থেকে প্রচারিত বিশেষ পরিবেশনাটি উপভোগ করলাম।

ইসলামের ইতিহাসে ক্ষণজন্মা এই মহীয়সী নারী সম্পর্কে জানতে পেরে আমার ভালো লাগল। আহলে বাইত-এর এই মহীয়সী নারী সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি! চিরায়ত ইসলামী আলোচনায় এই মহীয়সী নারী সম্পর্কে খুব কম আলোচনা করার কারণে আমাদের জানার পরিধিও খুবই সীমিত। বিশেষ দিনের এই মহতী আলোচনার মাধ্যমে আমাদের জানার সুযোগ করে দেবার জন্যে রেডিও তেহরানকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।

হযরত যাইনাব (সা. আ.) ষষ্ঠ হিজরির ৫ জমাদিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন হযরত আলী (আ.) এবং হযরত ফাতেমা (সা. আ.) এর তৃতীয় সন্তান। তাঁর জন্মের সংবাদে খুশি হয়ে মহানবী (সা) বলেছিলেন,  "আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, এই কন্যার নাম রাখো যাইনাব (সা. আ.) অর্থাৎ বাবার অলংকার। রাসূলে খোদা (সা.) যাইনাব (সা.)কে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন, "এই মেয়েটিকে সম্মান করবে, কেননা সেও খাদিজার মতো। "

একথা সত্যি যে, ইসলামের ইতিহাসে যাইনাব (সা. আ.) হযরত খাদিজা (সা. আ.) র মতোই ইসলামের দুর্গম পথে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং দ্বীনের সত্যতাকে তুলে ধরার জন্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। কারবালার মহাবিপ্লব যাইনাব (সা. আ.)কে ছাড়া যে অপূর্ণ থাকত তা নয়; এ বিপ্লবের বার্তা ও প্রকৃত ইতিহাসও চিরতরে হারিয়ে যেত। 

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বিষাদ ও দুঃখ-ভারাক্রান্ত দিনগুলোতে ও বিশেষ করে আশুরার অপরাহ্নেও অশেষ ধৈর্য নিয়ে খোদায়ী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কিংবা আশুরার বিপ্লবের পরও জালিম শাসকের সামনে নির্ভিক চিত্তে সত্যের সুরক্ষা ও আহলে বাইতের মহত্ত্ব আর অসহায়ত্ব তুলে ধরার জন্য যাইনাব (সা. আ.)'র পবিত্র নাম এক উজ্জ্বল তারকার ন্যায় চিরভাস্বর হয়ে আছে।

মহতী গুণ, ইমামদের প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসায়, এবাদতে, প্রজ্ঞায় ও জ্ঞানে, খোদাভীরুতায় ও সতীত্বে এবং সত্যের পক্ষে নির্ভিকতায় ও বাগ্মীতায় কেবল রমনীকুলের জন্যই নয়, বরং সকল মানুষের জন্যেও যাইনাব  (সা. আ.) অনুকরণীয় এক আদর্শ। বিনয় ও নম্রতা, সত্যবাদিতা ও ভদ্রতা ছিল তাঁর চরিত্রের বিশেষ ভূষণ। যে কোনো বিপদের সময় অন্যদের জীবন রক্ষার জন্য নিজ জীবনকে বিপন্ন করা ছিল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ রীতি। পিপাসায় কাতর হওয়া সত্ত্বেও তিনি কারবালায় নিজের অংশের পানিটুকু দান করেছিলেন শিশুদেরকে। কারাবালার সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও অশেষ ধৈর্য নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবিচল ছিলেন এই সাহসী নারী।

যাইনাব  (সা. আ.)) কারবালায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, শত্রুদের সুপথে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে। আবার কখনও সেই কঠিন সংকটের শিকার ও বিপদাপন্ন মুমিনদের সান্তনা দিয়েছেন। কখনও ব্যস্ত থেকেছেন পরবর্তী ইমাম ও রাসূলের আহলে বাইতের শেষ বাতি তথা ইমাম হোসাইন (আ.)'র পুত্র ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ.)-কে রক্ষার কাজে।

কারবালা বিপ্লবের আশুরা-পরবর্তী অধ্যায় পরিচালনা করেছেন হযরত যাইনাব  (সা. আ.)। কারবালা থেকে কুফায় ও সিরিয়া যাওয়ার পথে সেযুগের জালেম শাসকদের সামনে ও জনগণের সামনে যেসব ভাষণ ও বক্তব্য রেখেছিলেন আলী-দুহিতা যাইনাব  (সা. আ.) সেগুলো তাঁর উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মহত্ত্বসহ আরো কিছু অসাধারণ গুণ তুলে ধরেছে। সময়-উপযোগী নানা সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা ফুটে উঠেছে বিভিন্ন সময় বা উপলক্ষে।

ইবনে জিয়াদ যখন পরিহাস করে প্রশ্ন করে যে, তোমার ভাই হোসাইনের ব্যাপারে আল্লাহর আচরণকে কেমন দেখলে? যাইনাব  (সা.) খোদাপ্রেমে পরিপূর্ণ হৃদয়ে বলেছিলেন, "আমি সৌন্দর্য ছাড়া আর কিছুই দেখিনি, আল্লাহ চেয়েছিলেন যে তাঁরা শহীদ হবেন, তাঁরা তাঁদের চির-বিশ্রামস্থলে ছুটে গেছেন, আল্লাহ শিগগিরই তোমাকে ও তাঁদেরকে পুনরুত্থিত করবেন, সেদিন তুমি দেখবে যে কে প্রকৃত বিজয়ী হয়েছে।"

হযরত যাইনাব (সা. আ.) তাঁর পিতা ইমাম আলী (আ.)'র দেয়া শিক্ষার আলোকে দ্বীনের ব্যাপারে সচেতনতা, দুর্দশায় ধৈর্য ধারণ এবং সৎ জীবন যাপনের মাধ্যমে ঈমানের আদর্শ তুলে ধরেছিলেন। যাইনাব (সা. আ.)'র দৃষ্টিতে সত্যের পথে দাঁড়ানো এবং আল্লাহর পথে জীবন বিলানো এমন এক সৌন্দর্য যা মানবতার চিরন্তন প্রশংসার দাবিদার।

হযরত যাইনাব (সা.) র প্রতি জানাই অসংখ্য সালাম ও দরুদ।

 

শুভেচ্ছান্তে,

এস এম নাজিম উদ্দিন

বারুইপাড়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৮