প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা
'৪১ বছর আগে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানটির কথা আজও হৃদয়ের খাতায় লিখা আছে'
‘আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ'-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৯ জন। বিজয়ীদের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো পার্সটুডেতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। আজ প্রকাশিত হলো কুষ্টিয়ার 'বাংলাদেশ ডিএক্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল'-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ মোখলেছুর রহমান-এর লেখা।
উদর পূর্তি আর নিদ্রার জন্যই আমাদের জন্ম হয় নাই। নিজকে জানার জন্য, নিজকে চেনার জন্য এবং নিজকে বিকশিত করার লক্ষ্যেই এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর সব কিছুই আমাদের কম-বেশি জানা উচিত। তাই বিশ্বকে জানার জন্য এবং নিজকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান শোনা শুরু করি।
আজ থেকে ৪১ বছর আগের কথা! তখন আমি একজন কলেজের ছাত্র ছিলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি বহির্বিশ্বের রেডিও শোনা, পত্র-পত্রিকা, ডাক টিকিট সংগ্রহ, পত্রমিতালী এবং গল্পের বই পড়া এগুলোয় ছিল আমার প্রিয় সখ।
১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোন এক দিন ক্লাস না থাকায় কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ছিলাম। হঠাৎ ডাক পিয়ন এসে আমার হাতে বেশ কিছু চিঠিপত্র ও পত্রিকা দিয়ে দ্রুত চলে গেলেন। উল্লেখ্য যে, আমি ১৯৭৬ সাল থেকে নিয়মিত বিভিন্ন বেতারের অনুষ্ঠান শুনতাম এবং চিঠি লিখতাম। সে জন্যই আমি বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র থেকে, পেনফ্রেন্ডদের কাছ থেকে এবং বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রচুর চিঠি ও পত্র-পত্রিকা পেতাম।
তো ডাক পিয়ন আমাকে চিঠিপত্র ও পত্রিকা দিয়ে চলে যাওয়ার পর; আমি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগ, ঢাকা ধানমন্ডি থেকে প্রকাশিত "নিউজ লেটার" নামক পত্রিকাটি পড়তে পড়তে মাঝের পাতায় একটি ঘোষণা দেখতে পেয়েছিলাম যে, "তেহরান বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনুন"। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বেতার ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তেহরান বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে সম্প্রতি বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের জন্য ৪৫ মিনিটব্যাপী বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে যাচ্ছে। আগামী ১৭ই এপ্রিল ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সময় প্রতিদিন সন্ধ্যা ০৬:৩০ মিনিট থেকে ০৭:১৫ মিনিট পর্যন্ত শর্টওয়েভ ১৯ ব্যান্ডে অর্থাৎ ১৫০৮৪ কিলোহার্টজে।"
উপরোক্ত ঘোষণাটি পড়ে আমি দারুণভাবে এক্সসাইটেড হয়েছিলাম! রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান শোনার ঘোষণাটি এক টুকরো কাগজে লিখে আমার পড়ার টেবিলের সামনে রেখে ছিলাম, যাতে আমি নির্দিষ্ট দিন, তারিখ ও সময়ে অনুষ্ঠান শুনতে পারি। তখন থেকেই আমি সময় গণনা শুরু করি। অবশেষে একদিন পেয়ে গেলাম ১৯৮২ সালের ১৭ই এপ্রিল সন্ধ্যা ০৬:৩০ মিনিটে সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ! শর্টওয়েভ ১৯ মিটার ব্যান্ড কাঙ্ক্ষিত বেতারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শোনার জন্য আমি রেডিও'র নব ঘুরাতে ঘুরাতে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু কিছুতেই রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান ধরতে পারছিলাম না! হাল ছেড়েই দিয়ে ছিলাম, রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান মনে হয় আজ আর শুনতে পারব না! কিছুক্ষণ পর আবার রেডিও'র নব ঘুরাতেই ক্ষীণস্বরে বাংলা ভাষায় কথা শুনতে পেলাম। সাথে সাথে ফাইন টিউনিং এ্যাডজাস্ট করে কান পেতে মনোযোগ সহকারে থাকলাম, কয়েক মিনিট অনুষ্ঠান শোনার পর বুঝতে পারলাম এটিই আমার কাঙ্ক্ষিত বেতার "রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান"।
১৯৮২ সালের ১৭ এপ্রিলের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান আমি মাত্র ১৫ মিনিট মত শুনতে পেরেছিলাম। তাও আবার সেটা উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠান!!! কী যে আনন্দ! কি যে শিহরণ লেগে ছিল! সেটা আমার ক্ষুদ্র ভাষায় প্রকাশ করা মোটেও সম্ভব নয়। সেই ৪১ বছর আগের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানটির কথা আজও আমার হৃদয়ের খাতায় লিখা আছে। প্রথম শ্রবণকৃত অনুষ্ঠানটির নাম ছিল "কোরানী শিক্ষার নুরানী ঝলক ও ইসলামী অর্থব্যবস্থা।" রেডিও তেহরানের আশির দশকের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো আজও আমার হুদয়ে নাড়া দেয়। যেমন- পল্লবিত কিশলয়, পরশ পাথর, সবুজপাতা, কষ্টিপাথর, জাগরণ ও সমীরণ।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ ৪১ বছরে এসে পৌঁছেছে। সুদীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান সকল কলাকুশলীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রেডিও তেহরান তার বলিষ্ঠ কণ্ঠে বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ সংবাদ, শিক্ষণীয়, মনোমুগ্ধকর, তথ্য ও তত্ত্বে ভরা অনুষ্ঠানসমুহের মাধ্যমে শ্রোতাদের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলা বিভাগের অগ্রযাত্রা আরও সুন্দর হোক! দীর্ঘায়িত হোক এবং কণ্টক মুক্তহোক! আমি চার দশক ধরে রেডিও তেহরানের সাথে আছি এবং থাকবো- এই প্রত্যাশাই করি।
লেখক:
মোঃ মোখলেছুর রহমান ('বি' ক্যাটাগরিতে বিজয়ী)
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ ডিএক্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল
পোঃ বহলবাড়িয়া-৭০৩০, জেলা : কুষ্টিয়া।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১১