শ্রোতাদের মতামত
'গাজায় গণহত্যা চালিয়ে ইসরাইল নজিরবিহীন বিপর্যয় ও গ্লানি ঢাকার চেষ্টা করছে'
আসসালামু আলাইকুম, পত্রের প্রথমেই ইহুদিবাদী ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজায় আল-আহলি আরব হাসপাতালে ধ্বংসাত্মক বোমা হামলা চালিয়ে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে তার তীব্র নিন্দা জানাই। সকল শহীদ পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাই।
যায়নবাদী ইসরাইলের এমন যুদ্ধ অপরাধ ও পৈশাচিক গণহত্যার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। নিরপরাধ অসুস্থ শিশু, নারী ও অসহায় সাধারণ মানুষের উপর জঘন্য হত্যালীলা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়।
গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে এমকে-৮৪ নামের মার্কিন বোমা দিয়ে আঘাত হানে জালিম ইহুদিবাদী ইসরাইল। এক হাজার টনের এই ধ্বংসাত্মক বোমার আঘাতে প্রায় ৮০০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। কিন্তু এই সংখ্যা অনুমান মাত্র। বোমার আঘাতে বহু মানুষের শরীর ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাওয়ায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা বের করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ১৩ দিনে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা চার হাজারের বেশি এবং আহতের সংখ্যা অন্তত ১৩ হাজার বলে মনে করা হচ্ছে। নিহতদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।
এই জঘন্য হামলার পর কুখ্যাত নেতানিয়াহুর ডিজিটাল মুখপাত্র এক্সে পোস্ট করেন, হাসপাতালটির কাছে হামাসের ঘাঁটি আছে ভেবে ইসরাইল সেখানে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু পরে সেই পোস্ট মুছে ফেলে। ইসরাইল পরে এক বানোয়াট অভিযোগ প্রচার করতে থাকে যে ইসলামী জিহাদের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ওই হাসপাতালে আঘাত হানায় সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। বড় শয়তান আমেরিকাও তাতে সম্মতি জানায়। ইসলামী জিহাদ এই দাবিকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

বড় শয়তান আমেরিকা ও তার পশ্চিমা দোসর সরকারগুলো ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও নেতৃবৃন্দ গাজায় ইসরাইলের এই পৈশাচিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং একে যুদ্ধ-অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন।
ছোট শয়তান ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালিয়ে হামাসের সাম্প্রতিক নজিরবিহীন হামলার বিপর্যয় ও গ্লানি ঢাকার চেষ্টা করছে। গাজায় বেশ কিছু দিন ধরে পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। অন্যদিকে মিসরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং পয়েন্টও খুলতে দিচ্ছে না যাতে গাজাবাসীর জন্য জরুরি ত্রাণ সাহায্য পৌঁছাতে পারে।
যায়নবাদী ইসরাইল অতীতেও এমন বেসামরিক অবস্থানে বহু গণহত্যা চালিয়েছে। ১৯৪৮ সালে দের ইয়াসিন গণহত্যা, ৮০'র দশকে সাবরা শাতিলা গণহত্যা এবং ৯০'র দশকে কানা ক্যাম্প বা গ্রামে চালানো গণহত্যা এসবের অন্যতম। এইসব গণহত্যার দোসর হিসেবে বড় শয়তান আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তিগুলো ইসরাইলকে নির্লজ্জভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে গেছে। এখনও সেই অবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, এসব অনাচারের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর প্রতিরোধমূলক সাহসী পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাই না। মুসলিম সরকার গুলোর পাশ্চাত্যের পদলেহন ও সেবা দাসের সুযোগে ইসরাইল বার বার ফিলিস্তিনি জাতির ওপর নৃশংস গণহত্যা চালানোর সাহস পাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের জনগণ ও এমনকি অমুসলিম বিশ্বের জনগণও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের নৃশংস হত্যা, জুলুম এবং তাদের জবরদখলের বিরোধী। এতদসত্ত্বেও বেশিরভাগ মুসলিম সরকারগুলোর উদাসীনতার কারণে ফিলিস্তিনি জাতির স্বাধীনতা এবং অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ' ওআইসি ' ও 'আরব লিগ' সক্রিয় হয়ে উঠলে ও শক্ত পদক্ষেপ নিলে আজ এমন দিন দেখতে হতো না। কয়েকটি প্রভাবশালী আরব ও মুসলিম সরকার গোপনে ও প্রকাশ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের পেছনে ছুরিকাঘাত করে চলেছে। একমাত্র ইরানিই ফিলিস্তিন ও প্রতিরোধকামী দলগুলোকে সাহায্য সহযোগিতা করে চলেছে। আরব বিশ্বের বাকি দেশগুলোও যদি এমনভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকতো তাহলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের গঠন ত্বরান্বিত হতো। মজলুম ফিলিস্তিনি জাতির পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হোক; জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের বিজয় কামনা করে শেষ করছি।
এস এম নাজিম উদ্দিন
মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।