‘রেডিও তেহরানের নিরপেক্ষতা ও সাফল্য শ্রোতাদের হৃদয় জয় করেছে’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম হিসেবে রেডিও তেহরান বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। দেশ-বিদেশের খবর প্রচারের সাথে সাথে ইসলাম ও ইরানকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার কাজে রেডিও তেহরান অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। এছাড়া মজলুমের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে জনমত গঠনে রেডিও তেহরানের প্রচেষ্টা ঈর্ষণীয়।
১৯৫৬ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রচার এবং ১৯৮২ সালে বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রেডিও তেহরান বিশ্ব দরবারে নিজের আধিপত্য নিশ্চিত করে। বর্তমানেও এ বেতার কেন্দ্রটি ত্রিশটি ভাষায় বেতার বা ওয়েবভিত্তিক সংবাদ ও তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, বিশ্বের অল্পসংখ্যক বেতার কেন্দ্রেরই এরূপ সক্ষমতা রয়েছে।
একটি বেতার কেন্দ্রের মূল দায়িত্ব হল জনগণের কাছে সর্বশেষ, নিরপেক্ষ, তরতাজা ও সঠিক খবর পৌঁছে দেয়া। রেডিও তেহরান সে দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমানে রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে নিয়মিতভাবেই প্রচারিত হয় বিশ্বসংবাদ, যাতে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, এশিয়া ও বিশ্বের কোথায়-কখন কি ঘটছে তার বস্তুনিষ্ঠ চিত্র পাওয়া যায়; পাওয়া যায় তরতাজা, বিচিত্র, দুর্লভ, অনুসন্ধানী ও চিন্তা-উদ্দীপক নানা খবর। বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের অনেক শ্রোতা শুধু নির্মোহ বিশ্বসংবাদের কারণেই নিয়মিত রেডিও তেহরান শোনেন। কেননা, যেখানে অধিকাংশ মুসলিম দেশ আমেরিকা-ইসরাইলের তাঁবেদারে পরিণত হয়েছে, সেখানে ইরান তাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিশ্ববাসীকে সঠিক খবর দিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বসংবাদ ছাড়াও রেডিও তেহরান থেকে নিয়মিত প্রচারিত হয় সংবাদ-ভাষ্যের অনুষ্ঠান দৃষ্টিপাত। ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ও চলমান ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ ও নির্মোহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় এতে। খবরের অন্তরালের খবর যেমন থাকে এসব বিশ্লেষণে, তেমনি থাকে সম্ভাব্য পূর্বাভাসও। শুধু ঘটনা নয়, ঘটনার পেছনের কারণ আর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা শ্রোতাদের জানিয়ে দিয়ে গণমাধ্যম হিসেবে রেডিও তেহরানের নিরপেক্ষতা ও সাফল্য শ্রোতাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে।
বিশ্বসংবাদ ও দৃষ্টিপাত ছাড়াও রেডিও তেহরান থেকে নিয়মিত প্রচারিত হয় পত্র-পত্রিকাভিত্তিক অনুষ্ঠান কথাবার্তা। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার শিরোনাম ও খবর নিয়ে প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটি গণমাধ্যম হিসেবে রেডিও তেহরানের গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। কেননা, অনেক শ্রোতার পক্ষেই একাধিক পত্র-পত্রিকা ক্রয়ের সামর্থ ও সুযোগ নেই। সে চাহিদা পূরণ করছে এ অনুষ্ঠানটি। অন্যদিকে বিশ্বসংবাদ ও দৃষ্টিপাতের বিষয় নির্বাচনের সুযোগ রেডিও তেহরানের থাকলেও, এক্ষেত্রে তা নেই। ফলে ভিন্নমতের একটি পত্রিকাতেও যে খবর আসে, তা প্রচার করে রেডিও তেহরান নিজেকে আরও গণমুখী করে তুলেছে।
কিন্তু একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম শুধু খবর প্রচারেই সীমাবদ্ধ থাকে না, জনমত গঠনেও ভূমিকা রাখে। রেডিও তেহরানও তার ব্যতিক্রম নয়। মূলতঃ আসমাউল হুসনা, আদর্শ মানুষ গড়ার কৌশল, দর্পণ, কুরআনের আলো, পাশ্চাত্যে জীবন ব্যবস্থা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, মানবতার পক্ষে, সততার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, অধিকারের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করছে রেডিও তেহরান। বিশেষ করে, ইসলামী বিশ্বে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় রেডিও তেহরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
অপরদিকে ইরানকে; ইরানের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পর্যটন, মানুষ, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি- প্রভৃতিও বাংলাদেশ-ভারত তথা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছে রেডিও তেহরান। তুলে ধরছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র আদর্শকে, আহলে বাইতের গুরুত্বকে।
উল্লেখ্য যে, বিশ্বের অনেক দেশেই সংসদ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের পর গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই রেডিও তেহরান ইরানে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ইরানের সংবিধান তাদের সে দায়িত্ব ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। ইরানের সংবিধানের দ্বাদশ অধ্যায়, আর্টিকেল ১৭৫ অনুযায়ী ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও চিন্তার প্রচারের নিশ্চয়তা দেয়’। আর রেডিও তেহরান সে স্বাধীনতা ভোগ করে গণমানুষের গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
লেখক: মোঃ শাহাদত হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।