হামাসের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী ব্যক্তির মিথ্যাচারিতা ও কুকর্ম ফাঁস
-
কোচাভ এলকায়াম লেভি
ইসরাইলের একজন আইনজীবী গত ৭ অক্টোবর হামাসের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত যৌন সহিংসতার অভিযোগ তুলেছিলেন। এর কিছু দিন পর ইসরাইল সরকার তাকে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে। এখন ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অর্থ কেলেঙ্কারি এবং হামাসের ব্যাপারে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছে।
ইসরাইলি এই আইনজীবী কোচাভ এলকায়াম লেভি তথাকথিত একটি 'সিভিল কমিশন'এর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে "গত ৭ অক্টোবর নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে হামাসের যৌন অপরাধ" শীর্ষক একটি বানোয়াট খবর ছড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে পশ্চিমা মিডিয়া ও সংবাদ সংস্থাগুলো তার উদ্ধৃতি দিয়ে এই মিথ্যা খবর সব জায়গায় ছড়িয়ে দেয় এবং কোনো প্রমাণ ছাড়াই প্রচার চালাতে থাকে যে ফিলিস্তিনের সংগ্রামী যোদ্ধারা ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর সময় পরিকল্পিতভাবে যৌন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
লেভি এমনকি সিএনএন টিভ চ্যানেলের স্পেশাল একজন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ হিসাবে উপস্থিত হয়ে হামাসের কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে বক্তব্য দেন। ইসরাইলি দৈনিক হারেতজ তার সম্পর্কে একটি নিবন্ধও প্রকাশ করে বলেছে, লেভি বিভ্রান্তিকরভাবে দাবি করেছে যে তার কোন সন্দেহ নেই যে হামাস যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে।
এরপর গত বছর ৬ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এবং প্রেসিডেন্টের সহকারী ও জেন্ডার পলিসি কাউন্সিলের পরিচালক জেনিফার ক্লেইন ৭ অক্টোবরের ঘটনাগুলো বিশেষ করে হামাসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও রিপোর্ট তৈরির জন্য ইসরাইলি ওই আইনজীবী কোচাভ এলকায়াম লেভিকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানান।
কোচাভ এলকায়াম লেভির এ রিপোর্টের কারণে তাকে ইসরাইল সরকার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রদান করে। এই পুরস্কার যেকোনো ইসরাইলি নাগরিককে সরকার দিতে পারে। ২১ মার্চ পুরষ্কার গ্রহণের পর, তিনি বলেছিলেন, 'আমাদেরকে অবশ্যই ইহুদি বিরোধিতার ক্রমবর্ধমান জোয়ারের বিরুদ্ধে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে'।
তার এ পুরস্কার গ্রহণ ও বক্তব্যের ঠিক তিনদিন পর ইসরাইলের বৃহত্তম সংবাদপত্র দৈনিক ওয়াই নেট তিক্ত সত্য ঘটনা ফাঁস করে দেয়। মূল ঘটনা হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসনের একজন সদস্যসহ এলকায়াম লেভির আর্থিক পৃষ্ঠপোষকরা ৭ অক্টোবর হামাসের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার মিথ্যা গল্প বানিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য বলেছিল।
ইসরাইলি সরকারের একজন কর্মকর্তা ওয়াই নেটকে বলেছেন, 'মানুষ এলকায়াম লেভি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে কারণ তার গবেষণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে'।
লেভি তার সংস্থা 'ডেবোরার' মাধ্যমে লাখ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছেন, তবে সরকারী তথ্য মতে, তিনি ধনী আমেরিকান ইহুদি সমর্থকদের সাথেও প্রতারণা করেছেন। যেমন জাপানে বাইডেন প্রশাসনের বর্তমান রাষ্ট্রদূতের সমস্ত অর্থ নিজের একাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন।
একজন ইসরাইলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াই নেট লিখেছে, লেভি তার 'সিভিল কমিশন' গঠনে ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের জন্য জন্য ৮০ লাখ ডলার চেয়েছিলেন এবং জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাহাম ইমানুয়েল তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিলেন। এভাবে লেভি অনেকের কাছে টাকা চেয়েছিল।
যাইহোক, পাঁচ মাসেরও বেশি তদন্তের পর, উচ্চমানের ও খ্যাতনামা হিসাবে পরিচিত এই আইনজীবী বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের বৈধতা প্রমাণ করতে পারেনি।
অন্যদিকে, বিভিন্ন খবরে জানা গেছে, লেভি জাতিসংঘের যৌন সহিংসতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেনের ইসরাইল সফরে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত লেভির রিপোর্টকে হামাসের কথিত যৌন অপরাধের "প্রমাণ" হিসাবে প্রচার করে ইসরাইল সরকার। যদিও জাতিসংঘের প্রতিনিধি প্যাটেন জোর দিয়ে বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই।
লেভির মিথ্যাচারিতা আরো প্রমাণিত হয় যখন নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয় যে, ৭ অক্টোবর হামাসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ধর্ষণের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
