ইমাম রেজা (আ.)'র দৃষ্টিতে মুমিনের বৈশিষ্ট্য 
(last modified Tue, 21 May 2024 15:05:50 GMT )
মে ২১, ২০২৪ ২১:০৫ Asia/Dhaka
  • পবিত্র মাশহাদে ইমাম রেজার মাজার প্রাঙ্গনের কাছে এক ইরানি যুব দম্পতি
    পবিত্র মাশহাদে ইমাম রেজার মাজার প্রাঙ্গনের কাছে এক ইরানি যুব দম্পতি

ইমাম রেজা (আ.) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা মামুনের কাছে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন: আল্লাহর বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ওয়াজিব বা অপরিহার্য কর্তব্য, তদ্রূপ আল্লাহর বন্ধু বা আল্লাহর ওলিদের শত্রুর সঙ্গ শত্রুতা করা ও তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশও অবশ্য-পালনীয় কর্তব্য বা ওয়াজিব।

মহানবীর (সা) আহলে বাইতের বংশধারায় হযরত আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) ছিলেন ইমাম মুসা কাযিম (আ.)'র পুত্র এবং ১২ ইমামি শিয়া মুসলমানদের অষ্টম ইমাম। তাঁর বিশ বছরের ইমামতির যুগে আব্বাসীয় শাসকরা ছিলেন যথাক্রমে হারুন আর রশিদ, আমিন ও মামুন। মামুন ইমাম রেজাকে যুবরাজের পদ গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল। অবশেষে ২০৩ হিজরিতে মামুন তাঁকে বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করে। তাঁকে যেখানে দাফন করা হয় সেই স্থানটি মাশহাদুর রেজা নামে বিখ্যাত হয় এবং বর্তমানে তা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের জিয়ারতের স্থল। 

ইমাম রেজা (আ.)'র দৃষ্টিতে মুমিনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল:

১. প্রকৃত পূর্ণাঙ্গ ইমানের অধিকারী হতে হলে ধর্ম সম্পর্কে জানা, সুপরিকল্পিত হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী জীবন-যাপন করা এবং বিপদ ও সংকটের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরা জরুরি। 
قال الرضا عليه السلام: لا يَسْتَكْمِلُ عَبْدٌ حَقيقَةَ الايمـانِ حَتّى تَكُونَ فيهِ خِصالٌ ثـَلاثٌ: اَلتـَفـَقـُّهُ فىالدّينِ، وَ حُسْنُ التَّقْديرِ فِى الْمَعيشَةِ وَالصَّبْرُ عَـلَى الرَّزايا. [تحف العقول، ص 446.]
ইমানের পরিধি:
২. ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, ইমান হচ্ছে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি, মুখ দিয়ে বলা ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে তার বাস্তবায়ন। 
َ عَنِ الرِّضا عليه السلام: اَلاْءيمـانُ هـُوَ مَعْرِفـَةٌ بِالْقـَلْبِ وَ اِقْرارٌ بِالّلِسانِ وَ عَمَلٌ بِالْأرْكانِ. [تحف العقول، ص 422.] 
আনন্দ ও ক্রোধের সময় মুমিনের আচরণ: 
৩. তিনি আরও বলেছেন, মুমিন ক্রুদ্ধ হলেও ন্যায় ও সত্য থেকে বিচ্যুত হন না এবং সুখের বা আনন্দের সময়ও তিনি বাতিল বা মিথ্যার সঙ্গে জড়িত হন না, আর ক্ষমতা বা শক্তির অধিকারী হলেও নিজের প্রাপ্য অধিকারের চেয়ে বেশি কিছু নেন না। 
وَ قالَ الرِّضا عليه السلام: اَلْمُؤمِنُ اِذا غَضِبَ لَمْ يُخْرِجْهُ غَضَبُهُ عَنْ حَقٍّ، وَ اِذا رَضِىَ لَمْ يُدْخِلْهُ رِضاهُ فى باطِلٍ، وَ اِذا قَدَرَ لَمْ يَأْخُذْ اَكْثَرَ مِنْ حَقِّهِ. [بحار الانوار، ج 75، ص 355.]
আল্লাহর বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে শত্রুতা:
৪.আল্লাহর বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ওয়াজিব বা অপরিহার্য কর্তব্য, তদ্রূপ আল্লাহর বন্ধু বা আল্লাহর ওলিদের শত্রুর সঙ্গ শত্রুতা করা ও তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশও অবশ্য-পালনীয় কর্তব্য বা ওয়াজিব।
وَ عَنِ الرِّضا عليه السلام: حـُبُّ اَوْلِياءِ اللّه ِ واجِبٌ وَ كَذلِكَ بُغْضُ اَعْدائِهِمْ وَ الْبَرائَةُ مِنْهُمْ وَ مِنْ اَئِمَّتِهِمْ. [وسائل الشيعه، ج11، ص433.]

৫. আল্লাহর সর্বোত্তম বান্দাহ বা দাস
আল্লাহর সর্বোত্তম বান্দাহ বা দাস হলেন তাঁরা যারা সৎ বা ভালো কাজ করলে হন আনন্দিত এবং কখনও কোনো মন্দ কাজ করে ফেললে তওবা করেন, তাঁদেরকে কখনও কিছু দেয়া হলে তাঁরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, বিপদ-আপদের শিকার হলে ধৈর্য ধরেন এবং ক্রুদ্ধ হলে ক্ষমা ও দয়া করেন।  
سُئِلَ عَنْ خِيارِ الْعِبادِ، فَقالَ عليه السلام: اَلَّذينَ اِذا اَحْسَنُوا اسْتَبْشَرُوا، وَاِذا اَساؤُوا اسْتَغْفَرُوا، وَ اِذا اُعْطُوا شَكَرُوا، وَ اِذَا ابْتَلَوْا صَبَرُوا، وَ اِذا غَضِبُوا عَفَوا. [مسند الامام الرضا عليه السلام، ج 1 ص 284.]
 ৬.আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা 
দয়া ও দাক্ষিণ্যের জন্য যারা মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না তারা আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়। 
وَ قالَ عَلِىُّ بنُ مُوسى عليه السلام: مَنْ لَمْ يَشْكُرِ الْمُنْعِمَ مِنَ الْمَخْلُوقينَ، لَمْ يَشْكُرِ اللّه َ عَزَّ وَ جَلَّ. [عيون اخبار الرضا عليه السلام، ج 2، ص 27.]
৭.পার্থিব হালাল বিষয়ের কল্যাণ নেয়া
 ইমাম রেজা (আ) আরও বলেছেন, নিজেদের জন্য দুনিয়া থেকে এতটা কল্যাণ বা উপকার গ্রহণ কর যাতে মনের হালাল চাহিদাগুলো পূরণ করতে পার এবং যাতে সুবিবেচনাবোধ বজায় থাকে ও অপচয় না ঘটে। আর এভাবে ধর্মীয় বিষয়গুলোতে সাহায্য অনুসন্ধান কর।  
وَ قالَ الرِّضا عليه السلام: اِجْعَلُوا لِأَنْفُسِكُمْ حَظّا مِنَ الدُّنْيا، بِاِعْطائِها ماتَشْتَهى مِنَ الْحَلالِ وَ مالَمْ يَنَلِ المُرُوَّةَ وَلاسَرَفَ فيهِ، وَاسْتَعينوُا بِذلِكَ عَلى اُمُورِالدّينِ. [فقه الرضا عليه السلام، ص 337.]
 ৮. পিতার সঙ্গে বিনম্রতা

পিতার আনুগত্য কর ও তাঁর সঙ্গে ভালো আচরণ কর ও তাঁর কল্যাণে নিয়োজিত হও এবং তাঁর সঙ্গে বিনম্র ও নতজানুসুলভ আচরণ কর, তাঁকে সম্মান কর ও তাঁর সামনে কণ্ঠস্বর নিচু রাখ।

#وَ قالَ الرِّضا عليه السلام: عَلَيْكَ بِطاعَةِ الأَبِ وَ بِرِّهِ وَ التَّواضُعِ وَ الخُضُوعِ وَالاْءعْظامِ وَ الاْءكْرامِ لَهُ وَ حَفْضِ الصَّوْتِ بِحَضْرَتِهِ. [فقه الرضا عليه السلام، ص 334.]


পার্সটুডে/এমএএইচ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন