আল্লাহর সর্বজনীন এবং বিশেষ রহমত সম্পর্কে কী জানি?
মহান আল্লাহর সর্বজনীন রহমতের আওতায় যারা রয়েছেন তারা বন্ধু এবং শত্রু, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী, ভালো ও মন্দ সবাই রয়েছেন। আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির ধারা যেমন সর্বত্র বিরাজমান তেমনি তাঁর বিশেষ রহমত বা দয়া তা থেকে ভিন্ন।
আদম (আ.)-এর সৃষ্টির বর্ণনা দিতে গিয়ে ইসলামের নবী (সা)'র উত্ত্বরাধিকারী এবং আহলে বাইত (আ)'র প্রথম ইমাম আলী (আ) বলেছেন: সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার জন্য তাওবার দরজা খুলে দিয়েছেন এবং তাকে রহমতের বাণী শিক্ষা দিয়েছেন।
রহমতের গুরুত্ব ও অবস্থান এত বিস্তৃত যে কুরআনের সূরাগুলোর শুরুতে আল্লাহ এই গুণের সঙ্গে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এই নিবন্ধে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে আল্লাহর রহমত কি এবং কোন উপায়ে আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর থেকে তাঁর করুণা তুলে নিতে পারেন সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
সর্বপ্রথম আল্লাহর রহমতের পরিধি সম্পর্কে জানা উচি ত যে রহমতের মাঝে আধ্যাত্মিক দিক থাকে এবং কখনও তা দুনিয়া ও আখেরাতের বস্তুগত দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। কোরানে রহমতের অনেক অর্থ রয়েছে। কখনও এটি নির্দেশিত বিষয় উল্লেখ করা হয়, কখনও শত্রুর খপ্পর থেকে পরিত্রাণ, কখনও বরকতময় বৃষ্টি, কখনও কখনও অন্যান্য দয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে বেহেশত এবং কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ দয়া।
আল্লাহর রহমতের প্রকারভেদ
আল্লাহর রহমত দুই প্রকারঃ
আল্লাহর সাধারন বা সর্বজনীন রহমত:
আল্লাহর এই রহমতের আওতায় বন্ধু এবং শত্রু, বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী, ভাল এবং মন্দ নির্বিশেষে সব ধরনের স্বভাবের মানুষ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাঁর অতুলনীয় রহমতের বৃষ্টির ধারা এত ব্যাপক যে তা সবার কাছে পৌঁছে যায় এবং সর্বত্র তাঁর রিযিক বিস্তৃত হয় এবং তিনি মুমিন বা অবিশ্বাসী নির্বিশেষে অসুস্থদের আরোগ্য করেন।
আল্লাহর বিশেষ রহমত:
আল্লাহর আরেকটি রহমত হল তার বিশেষ রহমত। এই ধরনের করুণা বা দয়া তাঁর ধার্মিক ও বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। কারণ তাদের বিশ্বাস ও সৎকর্মের কারণে তারা আল্লাহর করুণা ও ক্ষমা এবং বিশেষ দয়া পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে যেগুলো নানা অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা বা বাপে কলুষিত আত্মা উপভোগ করতে পারে না।
ইমাম জাফর সাদেক সাদেক (আ) একটি বর্ণনায় বলেছেন: আল্লাহ হলেন সমস্ত কিছুর প্রতিপালক, সমস্ত সৃষ্টির প্রতি পরম করুণাময়, বিশ্বাসীদের জন্য পরম করুণাময়। অর্থাৎ, আল্লাহ হলেন সমস্ত কিছুর প্রভু, তিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টির প্রতি করুণাময় এবং বিশেষ করে বিশ্বাসীদের প্রতি তিনি অতি দয়ালু। .
আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণগুলো কি কি?
আল্লাহর রহমতের ধারণা এবং তার ব্যাপকতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বলতে হয় যে তাঁর রহমত দুই ধরনের -একটি সাধারণ এবং অন্যটি বিশেষ। এছাড়া এটি বিবেচনা করতে হবে যে আল্লাহর রহমত সব সময় এবং সর্বত্র প্রতিটি ঘটনা এবং সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহর গোপন জ্ঞান এবং গোপনীয়তার উপর ভিত্তি করে বিস্তৃতি লাভ করে। অতএব যে ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত কারও কাছ থেকে তুলে নেওয়া হয় বা কেউ তাঁর রহমতের ছায়ায় অন্তর্ভুক্ত হয় তা আলাদা বৈশিষ্ট বহন করে। এছাড়া কেউ সঠিকভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে জানে না কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে তুলে নেয়া হয় এবং কোন ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয় না; বিশেষ করে সাধারণ রহমত (রহমত রহমানিয়াহ) এতই ব্যাপক এবং সাধারণ যে প্রতিটি ঘটনা, এমনকি নাস্তিক এবং খোদাভীরুরাও আল্লাহও অনুগ্রহের ছায়ায় থাকে। অতএব খোদায়ী রহমত, বিশেষত আল্লাহর সাধারন রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনাগুলো সম্পূর্ণভাবে এবং সঠিকভাবে চিহ্নিত করা কখনই সম্ভব হবে না।
এই প্রসঙ্গে কিছু হাদিস দেখায় যে কিছু পরিস্থিতিতে আল্লাহর রহমত মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হতে পারে। যেমন ইসলামি ঐতিহ্যে আছে যে, মানুষের প্রতি দয়া না দেখানোর ফলে আল্লাহর রহমত কেড়ে নেওয়া হয়: মিন লা ইয়ারহাম নাস লা রাহমাহ আল্লাহ: অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না সে আল্লাহর রহমত পাবে না। প্রাণী ও অন্যান্য প্রাণীর প্রতি দয়া না দেখানোর বিষয়েও এ বিষয়টি বলা হয়েছে।
এটি ছিল আল্লাহ সাধারণ করুণা বা রহমত সম্পর্কে। সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমতের বিষয়ে যা কেবলমাত্র বিশ্বাসী ও ধার্মিকদের জন্য দেওয়া হয় এটা স্বাভাবিক যে যতক্ষণ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি ইমান, তাকওয়া, সৎকর্ম এবং অন্যান্য ভালো অবস্থার অধিকারী হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর বিশেষ রহমত তার জন্য মঞ্জুর করা হবে এবং এটা যে কারণেই হোক না কেন। একজন ব্যক্তি তার ঈমান ও তাকওয়া থেকে বঞ্চিত হলে তাকে রহমত থেকেও বঞ্চিত করা হবে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।