জুন ১৩, ২০২৪ ১৬:৫২ Asia/Dhaka
  • হজের রয়েছে বহুমুখী দর্শন ও তাৎপর্য
    হজের রয়েছে বহুমুখী দর্শন ও তাৎপর্য

হজ নানা রহস্য ও হিকমাতে ভরপুর এমন এক ইবাদাত যাতে রয়েছে অনেক দিক ও মাত্রার গুরুত্ব। যেমন, আল্লাহর দাসত্ব বা বন্দেগি, ঐক্য ও ঐকতান।

হজ প্রথা হযরত ইব্রাহিমের স্মৃতি। হজ দুই ধরনের: ওমরাহ ও ফরজ হজ। বিশ্বের মুসলমানরা ফরজ হজ পালনের জন্য জিলহজ মাসের প্রথম দিকে পবিত্র কাবার শহর মক্কামুখি হন। আর ওমরাহ হজ সারা বছরের যে কোনো সময় আদায় করা যায়। সব ধরনের সামর্থ্য থাকলে একজন মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ।

প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন মানুষ কাবা ঘর প্রদক্ষিণ করেন 

হজের নানা কল্যাণ

হজের দর্শন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, যাতে বিভিন্ন ধরনের কল্যাণের সাক্ষ্য হতে পার...। এইসব কল্যাণের মধ্যে রয়েছে বস্তুগত, আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক এবং ব্যক্তিগত নানা কল্যাণ। যেমন, হজ মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সমস্যাগুলো পর্যালোচনার সুযোগ এনে দেয় এবং এতে জোরদার হয় মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতি। সাংস্কৃতিক লেনদেনও ঘটে হজকে কেন্দ্র করে। 

আল্লাহর প্রেমময় দাসত্ব 

হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দর্শন আল্লাহর দাসত্বের ঘোষণা দেয়া একনিষ্ঠ ও প্রেমময় চিত্তে। ইহরাম বাঁধা, কাবা ঘরের তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ ও কুরবানিসহ অন্যান্য তৎপরতায় এ বিষয়টি ফুটে উঠে।

পরকালের প্রতি মনোযোগ 

পবিত্র কাবা ঘর

সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরে হজযাত্রী সব ধরনের পার্থিব মোহ ও আকর্ষণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিজেকে আধ্যাত্মিক ও আসমানি পর্যায়ে উন্নীত করেন।

মুসলমানদের সহমর্মিতা 

হজের সময় সারা বিশ্বের মুসলমানরা হন একত্রিত। সমচিন্তা ও সহমর্মিতার ঢেউ খেলে যায় তাদের মধ্যে। কিভাবে বিশ্বের মজলুম ও দুর্বল মানুষদের সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে ঘটে বিশ্লেষণ ও মত-বিনিময়। মুসলিম বিশ্বের যে বিশাল শক্তিমত্তা তা দেশ ও জাতিগুলোর সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে পারে। 

মহানবীর (সা) পবিত্র বংশধর ইমাম জাফর আস সাদিক্ব বলেছেন: 'হজ এমন এক খোদায়ি বিধান যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ধর্মের প্রতি আনুগত্য ফুটে উঠে ও পার্থিব নানা কল্যাণও অর্জন করে মানুষ। হজ মৌসুমে সারা দুনিয়ার মানুষ একত্র হওয়ায় জানতে পারে একে-অপরকে এবং জাতিগুলো পরস্পরের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উৎপাদন থেকেও হয় উপকৃত। এ ছাড়াও তারা মহানবীর (সা) অবদান এবং তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য ও প্রামাণ্য বিষয় জানতে পারে। তারা মহানবীর নানা স্মৃতি ও অবদানকে সযত্নে রক্ষা করেন যাতে সেসব বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা পায়। প্রত্যেক জাতি যদি কেবল নিজ নিজ পরিবেশ সম্পর্কে কথা বলে তাহলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে ও তাদের শহরগুলো হবে বিলীন।... এই হচ্ছে হজের দর্শন।' 

ইসলামী সমাজের সুরক্ষা

হজের মৌসুম: মুসলমানদের ঐক্যের মৌসুম  

হজ ইসলামকে শক্তিশালী করে ও শক্তিশালী করে মুসলিম উম্মাহকে। হজ নানা শাস্তি থেকে বিশ্বের মুসলমানদের রক্ষা কর। তাই ইসলামী বর্ণনায় বলা হয় কাবা ঘরকে পরিত্যাগ করা হলে ও হজ বন্ধ হয়ে গেলে ধ্বংস হবে সমাজ এবং নাজিল হবে আল্লাহর শাস্তি। তাই মুসলিম সরকারের উচিত হজ পালনে জনগণকে উৎসাহ দেয়া এবং কোনো ব্যক্তির যদি আর্থিক সামর্থ্য নাও থাকে তাকেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে হজে পাঠানো। 

মুসলমানদের দারিদ্র নিরসন ও ঐক্যের মাধ্যম হজ

হজের ফলে মুসলিম সমাজের দারিদ্র দূর হয়। হজের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করেন ব্যক্তিরা ও দরিদ্রদের সহায়তা করতে যে কুরবানি করেন তাঁরা  ঈদের দিনে এবং হজ থেকে ফিরে এসে যেসব খাদ্য বিতরণ ও দানশীলতায় মগ্ন হন তাঁরা তাতে সমাজের দারিদ্র দূর হয়।

মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া

হজযাত্রীরা জালিম, খোদায়ী নানা বাস্তবতা ও সত্য গোপনকারী ও মুশরিকদের প্রতি ঘৃণা  প্রকাশ করেন। এটি হজের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তাঁরা  বিশ্বের সব মজলুম ও বঞ্চিতদের প্রতিও সংহতি ঘোষণা করেন। 

হজ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন 

হজে রয়েছে সব ধরনের ইবাদাতের কল্যাণ। আসলে নামাজ, রোজা ও হজ-এসবের উদ্দেশ্য হল আমাদের হৃদয় ও মন-প্রাণে আল্লাহর স্মরণকে বদ্ধমূল করা। হযরত ইব্রাহিম ছিলেন মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের এক অতি উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টান্ত। কাবা ঘরের পাশেই মাকামে ইব্রাহিম নামক স্থান সেই অতি উচ্চ মর্যাদার স্মারক বা স্মৃতি হিসেবে বিরাজ করছে। তিনি নিজের জন্য ও সন্তানের জন্য এই অবস্থান চেয়েছিলেন আল্লাহর কাছে। 

মরহুম আল্লামা তাবাতাবায়ির বিশ্বাস পবিত্র কুরআনে হযরত ইব্রাহিমের ঘটনা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে ঠিক সেই বিশেষ অবস্থার চিত্রটি আমাদের বোঝার চেষ্টা করা উচিত। আমরা যদি এ বিষয়ে গবেষক বা অনুসন্ধানী হই তা হলে বুঝতে পারব যে হযরত ইব্রাহিম আল্লাহর দাসত্বের এক পরিপূর্ণ পথ-পরিক্রমা সম্পন্ন করেছিলেন। তাঁর ওই আধ্যাত্মিক পথ-পরিক্রমা ছিল নিজের আমিত্বের দেশ থেকে আল্লাহর নৈকট্যের দিকে যাত্রা এবং পার্থিব কামনা-বাসনাগুলোকে পেছনে ফেলে রাখা ও শয়তানের কুমন্ত্রণাগুলো থেকে মুক্ত হওয়া। আর এভাবে আল্লাহর নৈকট্যের পর্যায়ে উপনীত হওয়া।   #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

     

ট্যাগ