‘দায়েশের পক্ষ থেকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের দায় পাশ্চাত্যের’
ইরান বলেছে, দায়েশ ও আন-নুসরা ফ্রন্টের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর হাতে যেসব দেশ রাসায়নিক অস্ত্র তুলে দিয়েছে তাদেরকে এর জন্য জবাবদিহী করতে হবে। নেদারল্যান্ডের হেগে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা- ওপিসিডাব্লিউ’র বার্ষিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটিতে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আলীরেজা জাহাঙ্গিরি।
তিনি বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলোই ইরাক ও সিরিয়ায় তৎপর উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রাসায়নিক অস্ত্র তুলে দিয়েছে।
এর আগে ওপিসিডাব্লিউ’র মহাসচিব আহমেত উযুমজু বলেছেন, ইরাক ও সিরিয়ায় প্রয়োগ করা রাসায়নিক অস্ত্রের নমুনা পরীক্ষা করে তার সংস্থা মনে করছে, এসব অস্ত্র দায়েশ নিজেই তৈরি করেছে।
এ ছাড়া, বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই জঙ্গি গোষ্ঠী ইরাক ও সিরিয়ায় ৭১ বার রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে। অথচ আরব ও পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করার জন্য এতদিন বাশার আল-আসাদ সরকারকে দায়ী করার চেষ্টা করে এসেছে।
নেদারল্যান্ডের হেগে ওপিসিডাব্লির সদর দপ্তরে বর্তমানে চলছে সংস্থাটির ২১তম বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলন ২৮ নভেম্বর সোমবার শুরু হয়েছে এবং ২ ডিসেম্বর শুক্রবার শেষ হবে।
সম্মেলনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো চরম মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদ। তিনি বলেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম কোনো ধরনের দালিলিক প্রমাণ ছাড়াই সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের যে বিরামহীন প্রচার চালাচ্ছে তা সমন্বিত মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।
সিরিয়ায় তৎপর দায়েশসহ অন্যান্য তাকফিরি জঙ্গি গোষ্ঠী শুরু থেকেই পাশ্চাত্যের কাছ থেকে অর্থ ও অস্ত্রসহ সব ধরনের সহযোগিতা পেয়ে এসেছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তার বিরুদ্ধে সংঘর্ষরত সব গোষ্ঠীর হাতে সর্বানুধিক অস্ত্র পৌঁছে দেয়ার সব ব্যবস্থা করেছে পাশ্চাত্য।
এমনকি এসব গোষ্ঠীর হাতে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি ও উপাদান তুলে দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি পশ্চিমা দেশগুলো। আর পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণরা এসব প্রযুক্তি দিয়ে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করে তা ইরাক ও সিরিয়ার নিরস্ত্র জনগণের ওপর প্রয়োগ করেছে। কাজেই পশ্চিমা দেশগুলো থেকে উচ্চশিক্ষিত লোকদের দায়েশের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেয়া দৈব কোনো ঘটনা নয়। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এসব তরুণকে পাশ্চাত্যই মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাশবিকতা চালানোর জন্য। কাজেই এই ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকার জবাবদিহী করা উচিত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তাদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো জঙ্গিদের হাতে রাসায়নিক অস্ত্র তুলে দিয়ে শুধু ইরাক ও সিরিয়ার নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তোলেনি সেইসঙ্গে গোটা মানবজাতির ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারণ, উগ্র তাকফিরি মতবাদে বিশ্বাসী যেসব জঙ্গি এই অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি রপ্ত করেছে তারা এরপর এসব অস্ত্র বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রয়োগ করবে।
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, পাশ্চাত্য মানবাধিকার রক্ষার যে বুলি আওড়ায় তার সঙ্গে তাদের সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের ঘটনা সাংঘর্ষিক। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, নিরীহ মানুষের ওপর এই মারণাস্ত্র প্রয়োগের দায়ে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি তাদের পৃষ্ঠপোষক পশ্চিমা সরকারগুলিরও বিচার হওয়া উচিত।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/৩০