খালেদা জিয়ার কারাবন্দি জীবনের ১ বছর পূর্ণ হল: রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে তাকে পুরানো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সেখানে একটি অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ স্যাঁতস্যাতে পরিবেশে একমাত্র বন্দি হিসেবে জীবন কাটাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

আগে থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ ৭৩ বছর বয়সী এ নেত্রী কারাগারে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেছেন, অসুস্থ খালেদা জিয়া চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। হাত-পা ও চোখ ফুলে গেছে। একা চলতে পারেন না।
বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, কারাবন্দি বেগম জিয়াকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে তার প্রতি চরম প্রতিহিংসার পরিচয় দিচ্ছে সরকার। তবে, দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থেকেও তার মনোবল এতটুকুও টলেনি।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৪টি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরে ৩২টি মামলা দায়ের হয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।

তার বিরুদ্ধে দয়েরকৃত মামলাগুলির মধ্যে দুটিতে সাজা দেয়া হয়েছে, ১৬টি অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। আর বাকি মামলার কোনোটিতে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে, কোনোটি তদন্তের পর্যায়ে আছে। গতকালও একটি মামলায় বিশেষ আদালতে হাজির করা হয় বেগম জিয়াকে। তার আইনজীবীরা বলছেন, কারামুক্ত হতে বেগম জিয়াকে আরো চারটি মামলায় জামিন পেতে হবে।
এদিকে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হলেও আইনি লড়াই কিংবা আন্দোলন; কোনোটাতেই সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, গণ আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত করা হবে নেত্রীকে। আর সরকারি দল বলছে, আন্দোলন করতে ব্যর্থ বিএনপির আশ্রয় আদালতই।

বেগম জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়েছে আদালত। শাস্তিও তারাই দিয়েছে। এখন আদালতই পারে তাকে মুক্তি দিতে। এটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। কাজেই রাজনৈতিকভাবে এখানে সরকারের করণীয় কিছু নেই।
নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য যে ধরনের আন্দোলন বিএনপির করা উচিত ছিল তা আমরা করতে পারিনি। তবে শীঘ্রই দল গুছিয়ে তারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলনে নামবে।

এ প্রসঙ্গ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সরকার বিচারিক কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করলে এক সপ্তাহের মধ্যে বেগম জিয়া জামিনে মুক্ত হবেন। অন্যথায় আন্দোলন ছাড়া তাঁর মুক্তির কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ। ।
এদিকে, খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও সারাদেশে বিএনপি'র বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আজ ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ (শুক্রবার) বিকেলে রাজধানীতে ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বিএনপি'র উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।এছাড়া আগামী কাল ৯ ফেব্রুয়ারী দেশব্যাপী একই দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/৮
- খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন