পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১ কোটি অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের তাড়ানো হবে! সত্যটা কী,,
-
পত্রপত্রিকার পাতার গুরুত্বপূর্ণ খবরের বিশ্লেষণ
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- ইসিকে মলম পার্টি, পকেটমারদের নিয়েও কাজ করতে হয়: সিইসি-দৈনিক ইত্তেফাক
- শিক্ষা আইনের খসড়া-টিউশন ফি নির্ধারণ করে দেবে সরকার-দৈনিক ইত্তেফাক
- ‘গাম্বিয়ার মামলার রায় নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলে ভেটো দেবে না চীন’-দৈনিক মানবজমিন
- বাজারে চীনা পণ্যের দাম বাড়ছে-দৈনিক প্রথম আলো
- করোনাভাইরাস: চীনফেরত শিক্ষার্থী হবিগঞ্জ হাসপাতালে তালাবদ্ধ-দৈনিক যুগান্তর
- করোনাভাইরাস আফ্রিকায় ছড়ালে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে: বিল গেটস)-দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন
ভারতের শিরোনাম:
- এক কোটি অনুপ্রবেশের গল্প পরিসংখ্যানের ধোপে টেকে না
- চারটে করে বিয়ে? এক কোটি অনুপ্রবেশ? ছাপিয়ে যাবে হিন্দুদের? সত্যিটা কী...-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
- কাশ্মীর ইস্যুতে মোদির সমালোচনা! ব্রিটিশ সাংসদের ভিসা বাতিল, চরম হেনস্থা শিকার বিমানবন্দরে-দৈনিক আজকাল
- ‘বিক্ষোভ দেখান, তবে রাস্তা বন্ধ করে নয়’, শাহিনবাগ সমস্যা মেটাতে আসরে সুপ্রিম কোর্ট-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
পাঠক/শ্রোতা! এবারে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. রোহিঙ্গা ইস্যুতে গাম্বিয়ার মামলার রায় নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলে ভেটো দেবে না চীন। একথা বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এটা কী বাংলাদেশের জন্য একটা অর্জন?
২. ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ নিয়ে সৌদি উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদিল আল-জুবায়ের যে বক্তব্য দিয়েছেন তার নিন্দা জানিয়েছে হামাস। প্রশ্ন হচ্ছে- ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি নিয়ে সৌদির অবস্থানকে আপনি কেভাবে দেখেন?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর:
বাজারে চীনা পণ্যের দাম বাড়ছে-দৈনিক প্রথম আলো

পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে যমুনা ট্রেডার্সে মাঝারি আকারের একটি ড্রিল মেশিনের দাম ছিল ৩৬ হাজার টাকার মধ্যে। ১৫ দিনের ব্যবধানে যন্ত্রটির দাম বেড়েছে ছয় হাজার টাকা।
যমুনা ট্রেডার্সের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বললেন, শুধু ড্রিল মেশিন নয়, চীন থেকে আসা সব যন্ত্র ও খুচরা যন্ত্রাংশের দামই বাড়তি। এর কারণ, দেশটি থেকে আমদানি প্রায় বন্ধ। কবে আবার তা স্বাভাবিক হবে, তা কারও জানা নেই।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে গত ডিসেম্বর মাসে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে শুরুতেই বেড়ে যায় চীনা রসুন, আদা ও দারুচিনির দাম। এবার বাড়ল শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন শিল্পপণ্য, নিত্যব্যবহার্য ও ভোগ্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে পুরান ঢাকার পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্রগুলোতে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত। কারণ, তাদের কাছে যে মজুত আছে, তা শেষের পথে। নতুন করে আমদানির চালান কবে আসবে, তা অনিশ্চিত।
এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে বাংলাদেশে শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যের বড় উৎস চীন। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৫ হাজার ৬০৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যার ২৫ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। অবশ্য রপ্তানিতে চীনের বাজার বাংলাদেশের জন্য ততটা বড় নয়। সর্বশেষ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ২ শতাংশ এসেছে চীন থেকে।
করোনার কারণে চীনের বিকল্প না খোঁজার অনুরোধ রাষ্ট্রদূতের-দৈনিক প্রথম আলো
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনের বিকল্প না খুঁজতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
আজ সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ডিকাব টকে এই আহ্বান জানান চীনা রাষ্ট্রদূত। ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।লি জিমিং বলেন, পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের (চীনের বিকল্প) পদক্ষেপ ব্যয়বহুল, অসম্ভব ও অপ্রয়োজনীয়।চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সারা বিশ্ব এখন এক অভিন্ন শত্রুকে মোকাবিলা করছে। এটা ঠিক যে করোনভাইরাস সংক্রমণের মধ্য দিয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ জন্য কি চীনকে দায়ী করা যায়? মোটেই না।’
লি জিমিং বলেন, ‘রোগের বিস্তার চীনের উহানে, এটা সত্যি। কিন্তু এই রোগের উৎস যে চীনে, সেটা তো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তারপরও পশ্চিমা গণমাধ্যম এই রোগকে মেড ইন চায়না বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
‘গাম্বিয়ার মামলার রায় নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলে ভেটো দেবে না চীন’-দৈনিক মানবজমিন
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, রাখাইনের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা নিয়ে করা গাম্বিয়ার মামলায় আন্তর্জাতিক আদালত যে রায় দিয়েছে তা যদি নিরাপত্তা পরিষদে ওঠে বা আলোচনা হয় তবে তাতে ভেটো দেবে না চীন। তারা চায়- বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া নিশ্চিত হোক এবং একইসঙ্গে উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করুক। এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে, চীনও সেভাবেই সহযোগিতা করবে।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিকাব- এর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান।
করোনাভাইরাস: চীনফেরত শিক্ষার্থী হবিগঞ্জ হাসপাতালে তালাবদ্ধ-দৈনিক যুগান্তর
মরণব্যাধি ‘করোনাভাইরাস’ আক্রান্ত সন্দেহে মো. রায়হান আহমেদ নামে চীনফেরত এক মেডিকেল শিক্ষার্থীকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দু’দফায় তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেও পুলিশের মাধ্যমে তাকে খুঁজে আনা হয়। এখন তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের নতুন ভবনের ৫ম তলায় করোনাভাইরাস আইসোলেশন ওয়ার্ডে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রায়হান আহমেদ হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা আবদুন নূরের ছেলে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও তার পরিবার জানায়, রায়হান চীনের জিয়াংসুতে একটি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি জ্বর, কাশি ও ঘাড় ব্যথা অনুভব করেন। তাকে পরিবারের সদস্যরা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে ভর্তির পরামর্শ দেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
১৬ ফেব্রুয়ারি পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু ভর্তির কিছুক্ষণ পরই তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। পরে পুলিশের মাধ্যমে তাকে খুঁজে আনা হয়। তার কাছ থেকে ঢাকায় যাওয়ার একটি বাসের টিকিট উদ্ধার করা হয়েছে। এর পর থেকে তাকে সদর আধুনিক হাসপাতালের নতুন ভবনের ৫ম তলায় করোনাভাইরাস আইসোলেশন ওয়ার্ডে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
শিক্ষা আইনের খসড়া-টিউশন ফি নির্ধারণ করে দেবে সরকার-দৈনিক ইত্তেফাক

বর্তমানে ইচ্ছেমতো টিউশনসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণ করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়তি ফি পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। সরকার শিক্ষার উন্নয়নে নানা সুযোগ-সুবিধা দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফিয়ের কারণে শিক্ষাগ্রহণ এখন ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বেতনসহ অন্যান্য ফি আদায় বন্ধে নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তাই এবার শিক্ষা আইনের খসড়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের লাগাম টেনে ধরার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
ইসিকে মলম পার্টি, পকেটমারদের নিয়েও কাজ করতে হয়: সিইসি-দৈনিক ইত্তেফাক
দেশের জনপ্রতিনিধিদের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, গুলিস্থান ও মহল্লায় হকারদের থেকে টাকা দেয়া ব্যক্তিরাও কিছুদিন পর পাতি নেতা, উপনেতা, নেতা ও কমিশনার হয়ে যায়। বৈশ্বিক চিন্তা করলেও আমাদের কাজ করতে স্থানীয়ভাবে। কেননা, আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনকে মলম পার্টি, পকেটমার, পাতি নেতা, ব্যাগ টানা পার্টি ও ক্যাসিনো মেম্বার নিয়ে কাজ করতে হয়।’
করোনাভাইরাস আফ্রিকায় ছড়ালে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে: বিল গেটস-দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন
আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে মিশরে। দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিতের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বিল গেটস সতর্ক করে বলেছিলেন, আফ্রিকায় নতুন এ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। খবর টেলিগ্রাফের। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা সিয়াটলে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের বার্ষিক বৈঠকে এ সতর্ক বানী করেন। আফ্রিকা অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। ছড়িয়ে পড়লে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ কারণ এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কিংবা পর্যবেক্ষণের মতো সামর্থ্য নেই ওই অঞ্চলের অনেক দেশের। প্রসঙ্গত, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে গত ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসে আজ সোমবার পর্যন্ত মারা গেছে ১৭৭০ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে মোট ৭০ হাজার ৫৪৮ ব্যক্তি।
এবার ভারতের কয়েকটি খবর তুলে ধরছি
এক কোটি অনুপ্রবেশের গল্প পরিসংখ্যানের ধোপে টেকে না-চারটে করে বিয়ে? এক কোটি অনুপ্রবেশ? ছাপিয়ে যাবে হিন্দুদের? সত্যিটা কী...-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা

রাজ্যের বিজেপি সভাপতি ঘোষণা করেছেন, এক কোটি মুসলমান ‘অনুপ্রবেশকারী’-কে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এনআরসি করে তাড়ানো হবে। বলা হচ্ছে যে মুসলমানদের চার জন করে স্ত্রী, অতএব তাঁদের পরিবারে অনেক সন্তান জন্ম নেয়, ফলে অদূর ভবিষ্যতে তাঁরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হবেন। অনেক ‘শিক্ষিত’ মানুষও এই লাগাতার প্রচারে বিশ্বাস করে ফেলছেন। আসল সত্যটা কী?
২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এই পত্রিকাতে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে আমরা লিখেছিলাম যে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান, উভয় গোষ্ঠীরই জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার লাগাতার কমছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলির ক্ষেত্রেও মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হারের কোনও স্পষ্ট প্রবণতা নেই। কিছু সীমান্তবর্তী জেলার ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার রাজ্যে মুসলমানদের গড় বৃদ্ধির হারের থেকে বেশি, আবার কিছু জেলায় কম। উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যাচ্ছে, যে জেলাগুলিতে হিন্দুদের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার বেশি, সেই জেলাগুলিতেই মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হারও বেশি। ‘ব্যাপক অনুপ্রবেশ’-এর তত্ত্ব পরিসংখ্যানের ধোপে টেকে না। এই নিবন্ধে আমরা আরও বিস্তৃত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
পশ্চিমবঙ্গের জনশুমারির ফল অনুযায়ী ১৯৫১-৬১ দশকে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার ছিল ৩২.৮%, ভারতের ক্ষেত্রে যা ছিল ২১.৬৪%। অর্থাৎ, ভারতের থেকে পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার বেশি ছিল। এর জন্য অনেক কারণ দায়ী— যেমন, পূর্বপাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তুদের আগমন। আবার দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে শ্রমজীবী মানুষের পশ্চিমবঙ্গে চলে আসাও একটি কারণ। কিন্তু ১৯৬১-৭১ দশকেই দেখা যাচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার (২৪.৮%) প্রায় ভারতের বৃদ্ধির হারের (২৬.৮৭%) সমান হয়ে গিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ১৯৭১-৮১ দশকে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার (২৩.১৭%) ভারতের তুলনায় (২৪.৬৬%) কমে গিয়েছে এবং এই প্রবণতা বজায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার ভারতের থেকে লাগাতার কম থেকেছে শুধু নয়, ভারত এবং আমাদের রাজ্যের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হারের মধ্যে ফারাক বেড়েছে। ২০০১-১১ দশকে ভারতের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৬৪%, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের বৃদ্ধির হার ১৩.৯৩%।
অর্থাৎ, ১৯৫১-৭১ সালে পূর্বপাকিস্তান থেকে মানুষ এই রাজ্যে এলেও তার পরে কোনও বড় ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটেনি। ঘটলে, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার ভারতের থেকে কম হত না। জনসংখ্যাবৃদ্ধির তথ্য থেকে উদ্বাস্তু আগমন বা অনুপ্রবেশের সম্পূর্ণ চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়, কারণ এই হার রাজ্যের উন্নয়ন, শিক্ষা, মহিলাদের ক্ষমতায়ন ইত্যাদির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই আমাদের তাকাতে হবে ‘অনুপ্রবেশ’-এর তথ্যের দিকে।
এই তথ্য সহজলভ্য নয়। তবু বিভিন্ন গবেষক যে তথ্যভাণ্ডার নির্মাণ করেছেন, আমরা তার দিকে তাকাব। ২০০৮ সালে হার্ভার্ড, ইয়েল এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক গবেষণা করে দেখার চেষ্টা করেন যে দেশভাগের পরে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে পরিব্রাজনের চিত্র কেমন। তাদের গণনা বলছে, ১৯৩১ থেকে ১৯৫১ সালের মধ্যে গোটা ভারতে আগত মোট পরিযায়ী মানুষের সংখ্যা ৭৩ লক্ষ। আবার বহু মানুষ ভারত থেকে চলেও গিয়েছেন। অর্থাৎ, বিজেপি যে এক কোটি ‘অনুপ্রবেশ’-এর গালগল্প শোনাচ্ছে, এই তথ্য তাকে মিথ্যা প্রমাণ করে।
১৯৭১ সালে প্রকাশিত বই দি অ্যাগনি অব ওয়েস্ট বেঙ্গল-এ রণজিৎ রায় সংসদে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানান যে পূর্বপাকিস্তান থেকে ১৯৬০ সাল অবধি ভারতে আগত মানুষের সংখ্যা ৪১.১৭ লক্ষ, যাঁদের মধ্যে ৩১.২১ লক্ষ মানুষকে এই রাজ্যেই পুনর্বাসন দেওয়া হয় এবং বাকি প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে ভিন্রাজ্যে পাঠানো হয়। ১৯৭০ সাল অবধি পূর্বপাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের সংখ্যা হয় ৫২.১৪ লক্ষ। এই উদ্বাস্তুদের অধিকাংশই হিন্দু। বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় ১ কোটি উদ্বাস্তু ভারতে চলে আসতে বাধ্য হন। এঁদের অধিকাংশই স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন হওয়ার পরে ফিরে যান বলে সরকার দাবি করে।
২০১১ সালের জনগণনার সময় পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী প্রায় ২২ লক্ষ মানুষ জানান যে তাঁদের জন্ম বাংলাদেশে। এঁদের মধ্যে ৫০% (১১ লক্ষ) মানুষ নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। অনুমান করা চলে, তাঁরা মূলত মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। মুসলমান প্রধান জেলাগুলি যেমন মালদহ, মুর্শিদাবাদে বাংলাদেশকে নিজের জন্মস্থান বলা মানুষের সংখ্যা নগণ্য। বাংলাদেশে জন্মেছেন বলেই এই মানুষগুলি বেনাগরিক হতে পারেন না। দেশভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে মানুষ এই রাজ্যে এসেছেন। কিন্তু জনসংখ্যাবৃদ্ধির হারের তথ্য, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা প্রকাশিত গবেষণাপত্র, রণজিৎ রায় প্রদত্ত সরকারি তথ্য এবং ২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্ট জানাচ্ছে— পশ্চিমবঙ্গে কয়েক কোটি অনুপ্রবেশকারী আছে, এ কথাটি ডাহা মিথ্যা।
১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল ১৪.২%, যা ২০০১ থেকে ২০১১ সালে কমে হয় ১০.৮%। একই সময়ে মুসলমানদের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ২৫.৯% থেকে কমে হয় ২১.৮%। অর্থাৎ, সম্প্রদায়-নির্বিশেষে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে।
২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গে সার্বিক জন্মহার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট বা টিএফআর, অর্থাৎ এক জন মহিলা তাঁর জীবনে গড়ে মোট যতগুলি সন্তানের জন্ম দেবেন) ছিল ২.৬, যা ২০১১ সালে কমে হয় ১.৭ এবং ২০১৫-১৬ সালে হয় ১.৮। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মহার এই বছরগুলিতে ছিল যথাক্রমে ২.২, ১.৭ এবং ১.৬। মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ২০০১ সালে জন্মহার ছিল ৪.৬, যা মাত্র দশ বছরে কমে হয় ২.২ এবং ২০১৫-১৬ সালে হয় ২.১। অর্থাৎ, প্রতি মুসলমান মায়ের সন্তানসংখ্যা বিগত ১৫ বছরে কমেছে দুইয়ের বেশি। পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের মধ্যে জন্মহারের পতনের পরিমাণ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। যার ফলে মুসলমানদের জন্মহার প্রায় হিন্দুদের জন্মহারের কাছাকাছি চলে এসেছে। শিক্ষার প্রসার, গর্ভনিরোধকের ব্যবহারবৃদ্ধি, সন্তানদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার আকাঙ্ক্ষা জন্মহারের এই তাৎপর্যপূর্ণ পতনের জন্য দায়ী।
যদি জেলাভিত্তিক হিসেব নিই, দেখব যে মুসলমান প্রধান জেলা, অর্থাৎ যেখানে জনসংখ্যায় মুসলমানদের অনুপাত ২০% বা বেশি, সেখানেও মুসলমানদের জন্মহার দুইয়ের কাছাকাছি। এই জেলাগুলোর মধ্যে কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, বর্ধমান, কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনাতে এই হার দুইয়ের চেয়ে কম। ২০০১ থেকে ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে এই মুসলমান প্রধান জেলাগুলির অধিকাংশের ক্ষেত্রেই এক জন মুসলমান মায়ের সন্তানসংখ্যা কমেছে গড়ে দুইয়ের বেশি।
প্রচুর সন্তানের জন্ম দেওয়ার যে অপবাদ মুসলমান সমাজ সম্পর্কে দেওয়া হয়, তা ভিত্তিহীন। হিন্দুদের জন্মহার অনেক বছর ধরেই নিম্নগামী। ২০০১ সালের পর থেকে মুসলমানদের জন্মহার দ্রুত কমার ফলেই পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক জন্মহার কমে বর্তমানে ভারতে সর্বনিম্ন হয়েছে।
অনেক শিক্ষিত বাঙালি হিন্দুর মুখেও প্রায়ই শোনা যায় যে মুসলমানেরা নাকি চারটে করে বিয়ে করেন। ২০১৫-১৬ সালের জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে গণনা করে দেখা যাচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গে ১.৬৪% হিন্দু স্ত্রী জানিয়েছেন যে তাঁদের স্বামীদের আরও অন্তত এক জন বিবাহিত স্ত্রী আছেন। গোটা দেশে এই গড় ১.৪৪%। মুসলমান নারীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ২.৭৭% স্ত্রী জানিয়েছেন যে তাঁদের স্বামীদের আরও অন্তত এক জন বিবাহিত স্ত্রী আছেন। সর্বভারতীয় গড় ২.০৫%। অর্থাৎ, মুসলমান সমাজে স্বামীর একাধিক স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করা মহিলার সংখ্যা ৩ শতাংশের কম। অধিকাংশ মুসলমান পুরুষের চারটে বিয়ে, এই কথাটা নিখাদ মিথ্যা। উল্লেখযোগ্য হল, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান, উভয়ের ক্ষেত্রেই একাধিক স্ত্রী থাকার অনুপাত ভারতের গড় অনুপাতের থেকে বেশি। সার্বিক ভাবে রাজ্যে মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং তাঁদের অধিকারের বিষয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনা জনপরিসরে হওয়া প্রয়োজন।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে প্রচারের একটিও পরিসংখ্যানের ধোপে টেকে না, সেগুলির ভিত্তিতে যে রাজনীতি চলে, তার স্বরূপ বুঝতে সমস্যা হয় না।(অর্থনীতি বিভাগ ও জনসংখ্যাতত্ত্ব বিভাগ, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ়, কলকাতা)
কাশ্মীরে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ফেরাল ভারত-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা

জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিক বার তাঁর সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে ভারত। এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিয়ো গুতেরেসের মধ্যস্থতার প্রস্তাবও খারিজ করল দিল্লি। জানি।য়ে দিল, এ ব্যাপারে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। বরং কাশ্মীর নিয়ে মাথা ঘামানোর বদলে, পাকিস্তান বেআইনি ভাবে ভারতের যে অঞ্চল দখল করে রেখেছে, রাষ্ট্রপুঞ্জকে তা মুক্ত করার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছে নয়াদিল্লি।
‘বিক্ষোভ দেখান, তবে রাস্তা বন্ধ করে নয়’, শাহিনবাগ সমস্যা মেটাতে আসরে সুপ্রিম কোর্ট-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
শাহিনবাগ (Shaheen Bagh) সমস্যা মেটাতে এবার সরাসরি হস্তক্ষেপের পথে সুপ্রিম কোর্ট! দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, কেউ বিক্ষোভ দেখালে তাতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু, তা রাস্তা বন্ধ করে, বা ট্রাফিক জ্যাম করে নয়। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য শাহিনবাগের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দু’জন মধ্যস্থতাকারীও নিয়োগ করেছে সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের দুই বর্ষীয়ান আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে এবং সাধনা রামচন্দ্রনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে ট্রাফিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানসূত্র বের করার।
কাশ্মীর ইস্যুতে মোদির সমালোচনা! ব্রিটিশ সাংসদের ভিসা বাতিল, চরম হেনস্থা শিকার বিমানবন্দরে-দৈনিক আজকাল
কাশ্মীর ইস্যুতে একসময়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছিলেন ব্রিটিশ সাংসদ। এবার সেই লেবার পার্টির ব্রিটিশ সাংসদ ডেবি আব্রাহামের ভিসাই করে দিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত কাজে দু’দিনের জন্য ভারতে এসেছিলেন তিনি। সোমবার সকালে দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পর তাঁর ই–ভিসা বাতিল করা হয়েছে বলে জানানো হয়। ডেবি আব্রাহাম জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে নামার পরই আমার সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়। এমনকী অপরাধীর মতোও ব্যবহার করা হয় এবং আমাকে ডিপোর্টি সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি বুঝতেই পারছি না এখানে ঠিক কী হচ্ছে! আদৌও আমাকে আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে কিনা। আমি জানি না কী হতে চলেছে।’
গত বছর আগস্ট মাসে কাশ্মীর থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার পর কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনায় নেমেছিলেন ডেবি আব্রাহাম। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তাহলে কি সেই কারণেই ব্রিটিশ সাংসদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করছে মোদি সরকার? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৭