যে কারণে আরব দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা করলেন লেবাননের সংসদ স্পিকার
(last modified Thu, 16 Dec 2021 14:00:18 GMT )
ডিসেম্বর ১৬, ২০২১ ২০:০০ Asia/Dhaka

লেবাননের পার্লামেন্ট স্পিকার নাবি বেরি কয়েকটি আরব দেশের পররাষ্ট্র নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, লেবানন যখন কয়েকটি আরব দেশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন তখন ওই দেশগুলোই আবার ইসরাইল বিরোধী নিষেধাজ্ঞা এবং অবরোধ তুলে নিয়েছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্র নীতিতে এমনভাবে পরিবর্তন এসেছে যে তাদের মধ্যে আরব জাতীয়তাবাদের আর কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের প্রতি আরব দেশগুলোর সমর্থন, দামেস্কের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান, ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন ও গণহত্যা, কাতারের সঙ্গে চারটি আরব দেশ অর্থাৎ সৌদি আরব, আমিরাত, বাহরাইন ও মিশরের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা, লেবাননের পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য ওই দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করা, মুসলমানদের প্রধান ও এক নম্বর সমস্যা ফিলিস্তিন ইস্যুটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া প্রভৃতি ঘটনা থেকে বোঝা যায় আরব দেশগুলোর মধ্যে নিজস্ব স্বকীয়তা বা আরব পরিচিতি নেই বললেই চলে।

এ ছাড়া, রাজতন্ত্র শাসিত কয়েকটি আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তার এবং ইসরাইলের সাথে কোনো কোনো আরব দেশের গোপন সম্পর্ক থেকে বোঝা যায় আরব শাসকরা আরব পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে (ইহুদিবাদীদের) হিব্রু পরিচিতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। অথচ এক সময় আরব শাসকরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতো। এ কারণেই একসময় আরব বিশ্বের একটা মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল।

আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্র নীতিতে এভাবে পরিবর্তন আসায় লেবাননের পার্লামেন্ট স্পিকার নাবি বেরি এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বৈরুতে লেবাননের সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করেছেন, 'এটা কি করে সম্ভব যে, ইসরাইল আগ্রাসী চেহারায় আবির্ভূত হলেও আরব দেশগুলো তাকে স্বাগত জানাতে পারে! অথচ এ দেশগুলোই আবার লেবাননের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে'! লেবাননের পার্লামেন্ট স্পিকার আরো বলেছেন, 'আরবদের পরিচিতি টিকিয়ে রাখার জন্য লেবানন অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে, তাদেরকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে এবং এখনো লেবানন অবরুদ্ধ'।

কোনো কোনো আরব দেশের এ ন্যক্কারজনক পরিণতির আরেকটি ভয়াবহ দিক হচ্ছে, তারা অন্য দেশের সরকার ও জনগণের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। অথচ লেবানন নিজেই বহু সমস্যায় জর্জরিত। এমনকি বিশ্বব্যাংকও লেবাননে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব দেশগুলো লেবাননের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরো করে রাখায় লেবাননের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ফিলিস্তিনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে আরব দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় ইসরাইল নির্বিঘ্নে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটছে। ইয়েমেনেও তারা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এ অবস্থা চলতে থাকলে আরবদের নিজস্ব পরিচিতি ও ইসলামি পরিচিতি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ আরো বাড়বে। এতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে দখলদার ইসরাইল। #      

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ