সৌদি সরকারের অসহযোগিতার কারণে তিনি ইন্তেকাল করেন
ইরানি রাষ্ট্রদূতের ইন্তেকাল সৌদি নির্মমতার আরেকটি দৃষ্টান্ত
ইয়েমেনে নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত হাসান ইরলু তেহরানে ইন্তেকাল করেছেন। তার এ মৃত্যুর ঘটনা ইয়েমেনে সৌদি আরবের নানান অপরাধযজ্ঞের আরেকটি বড় দৃষ্টান্ত।
সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট গত প্রায় সাত বছর ধরে ইয়েমেনে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে এবং সেইসাথে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে দরিদ্র ওই দেশটির ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ফলে রাজধানী সানার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বহু বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। যদিও ইয়েমেনের জনগণ বহুবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সানার বিমান বন্দরের কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানিয়েছে এবং এমনকি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছে কিন্তু তারপরও সৌদি আরব তাতে মোটেই কর্ণপাত করছে না। ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ নেতা আব্দুল মালেক হুথি রিয়াদের এ আচরণের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, সৌদি সরকার সানার আকাশ পথ বন্ধ করে দিয়েছে অথচ দখলদার ইসরাইলের বিমান চলাচলের জন্য সৌদির আকাশ পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
সর্বশেষ সানায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতের শাহাদাতের ঘটনা থেকে আবারো ইয়েমেনে সৌদি বর্বরতার চিত্র ফুটে উঠেছে। করোনায় আক্রান্ত ইরানি রাষ্ট্রদূতের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠার পর দুই দিন আগে তাকে ইরাকের একটি বিমানে করে সানা থেকে ইরানে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সৌদি আরব অনেক দেরিতে রাষ্ট্রদূতকে তেহরানে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়। বলা যায় রিয়াদ ইচ্ছা করেই ইরানি রাষ্ট্রদূতের অবস্থা খুব বেশি শোচনীয় হয়ে ওঠার পরই কেবল তাকে তেহরানে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিব যাদেহ বলেছেন, 'রাষ্ট্রদূত শহীদ হাসান ইরলু ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং তখন তিনি সাদ্দামের রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার শিকার হয়েছিলেন। এরপর সানায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি করোনা রোগে আক্রান্ত হন এবং সৌদি সরকারের অসহযোগিতার কারণে সময়মত চিকিৎসা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি ইন্তেকাল করেন'।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানও বলেছেন, কয়েকটি দেশ বিশেষ করে সৌদি আরব করোনা রোগে আক্রান্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতের চিকিৎসার জন্য তেহরানে ফিরে আসার পথে বাধা দিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারান। তিনি বলেন, এ থেকে সৌদি আরবের নির্মমতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি একজন অসুস্থ কূটনীতিককেও তারা ছাড় দেয়নি।
সৌদি বর্বরতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের ফলে দরিদ্র ওই দেশটির চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কাঠামো ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধও সেখানে পাওয়া যায় না। চিকিৎসা সামগ্রী না থাকার কারণেই রাষ্ট্রদূত হাসান ইরলুককে তেহরানে ফিরিয়ে আনা হয়। ইয়েমেনের জনগণও করোনাসহ আরো বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছে। সৌদি নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো ওষুধই সেখানে যেতে পারছে না। অন্যদিকে ইয়েমেনের জনগণ তীব্র খাদ্য সংকটেও জর্জরিত। সেখানে বহু জায়গায় দুর্ভিক্ষ চলছে এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে এটা একবিংশ শতাব্দির সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রাজেডি।
তবে জাতিসংঘের নীরবতার কারণেই সৌদি আরব এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি জাতিসংঘ ইরানি রাষ্ট্রদূতের ইন্তেকালের বিষয়েও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।