‘ইহুদিবিদ্বেষ একটি অজুহাত’
অস্ট্রেলিয়ায় ইরানি রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার: তেহরানের পাল্টা হুঁশিয়ারি
-
ইসমাইল বাকায়ি
অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানি রাষ্ট্রদূত আহমাদ সাদেকিকে 'পারসোনা নন গ্রাটা' ঘোষণা করে সাত দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্যানবেরা সরকার। 'ইহুদি-বিদ্বেষ'-এর কথিত অভিযোগে তাকে বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি আজ (মঙ্গলবার) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ধর্মীয় বৈষম্যের কোনো স্থান তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস বা বিশ্বাসে নেই।
এর আগে আজ (মঙ্গলবার) ক্যানবেরায় সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, গত বছর সিডনি ও মেলবোর্নে সংঘটিত হামলাগুলো ছিল 'একটি বিদেশি রাষ্ট্রের পরিকল্পিত ও বিপজ্জনক আগ্রাসী পদক্ষেপ। উদ্দেশ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার সামাজিক সম্প্রীতি ধ্বংস করা। এসব ঘটনার জন্য দায়ী করে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হয়েছে।'
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, ক্যানবেরা সরকার ইতোমধ্যেই তেহরানস্থ দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে এবং সেখানে কর্মরত কূটনীতিকদের তৃতীয় দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে (আইআরজিসি) 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি বলেন, ইরান এই অভিযোগকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছে এবং 'অযথা ও অযৌক্তিক কূটনৈতিক' পদক্ষেপের মুখে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
‘ইহুদিবিদ্বেষ পাশ্চাত্যের ঘটনা’
ইরানের দীর্ঘ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যে কোনো ইহুদিবিদ্বেষ নেই উল্লেখ করে বাকায়ি বলেন, “এটি বরং একটি পাশ্চাত্য ও ইউরোপীয় ঘটনা। যদি ইতিহাসের দিকে তাকান, ধর্মের কারণে ইহুদিদের নিপীড়ন ইউরোপেই ঘটেছে; সেই ইতিহাসের দায় তাদেরই নিতে হবে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।”
বাকায়ি বলেন, ক্যানবেরার এই সিদ্ধান্ত আসলে তাদের ইরানবিরোধী নীতিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অস্ট্রেলীয় রাজনীতিক, এমনকি অ্যালবানিজ নিজেও যে নজিরবিহীনভাবে ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্য করেছেন, তা পুষিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
‘স্ন্যাপব্যাক চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার ইউরোপের নেই'
বাকায়ি তার বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ইরানের ওপর আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য করার কোনো আইনি বা নৈতিক অধিকার নেই যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির। এই তিন দেশ বারবার ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (JCPOA) ভেতরের তথাকথিত 'স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া সক্রিয় করার চেষ্টা করছে, যদিও ওই চুক্তি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছিল।
বাকায়ি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র বিশ্বাস করে, এসব দেশগুলোর কোনো অধিকার নেই পুনরায় জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ চাপিয়ে দেওয়ার। নিষেধাজ্ঞা ফিরে আসার সম্ভাবনা ঠেকাতে বা এর ক্ষতি কমাতে ইরানের হাতে একটি 'স্পষ্ট পরিকল্পনা' আছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে জেসিপিওএ থেকে বেরিয়ে যায় এবং ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইউরোপীয় তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল ফেরাতে ব্যর্থই হয়নি, বরং ওয়াশিংটনের পথ অনুসরণ করে নিজেরাও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনে। এখন তারাই অভিযোগ করছে যে, ইরান তার শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে সামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত করছে—যদিও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তারা স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় করার চেষ্টা করছে, যাতে অক্টোবরের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু ইরান, রাশিয়া ও চীন বারবার জোর দিয়ে বলেছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর চুক্তির প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে জুন মাসে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোয় তাদের আর কোনো অজুহাত থাকতে পারে না।
‘ইরান আলোচনার টেবিল ছাড়েনি’
বাকায়ি আরও বলেন, ইউরোপীয় পক্ষগুলো আলোচনায় প্রস্তুত থাকায় ইরান তাদের সঙ্গে সংলাপে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বারবার অবস্থান বদল করেছে বা সরাসরি কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে ভেঙে দিয়েছে। তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছে। তাই ইরান আলোচনার টেবিল থেকে দূরে সরে গেছে- এমন অভিযোগ কেউ করতে পারে না।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৬