করাচিতে ইরান-পাকিস্তান বাণিজ্যিক সম্মেলন: ১০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i155140-করাচিতে_ইরান_পাকিস্তান_বাণিজ্যিক_সম্মেলন_১০_বিলিয়ন_ডলার_বাণিজ্যের_লক্ষ্যমাত্রা
পার্সটুডে: করাচিতে অনুষ্ঠিত ইরান ও পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্মেলনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
(last modified 2025-12-15T14:51:54+00:00 )
ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫ ২০:৪৭ Asia/Dhaka
  • করাচিতে ইরান-পাকিস্তান বাণিজ্যিক সম্মেলন: ১০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা

পার্সটুডে: করাচিতে অনুষ্ঠিত ইরান ও পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্মেলনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

পার্সটুডে জানিয়েছে, করাচিতে ইরানের কনসাল জেনারেল আকবর ঈসা জাদেহ ও কাজভিন চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পাকিস্তান ফেডারেশন অব চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফপিসিসিআই)-এর সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের বৈঠকে যৌথ বাণিজ্যিক কমিটি গঠন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

পাকিস্তানের ফেডারেশন অব চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ- ফেডারেশনের বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সক্রিয় উপস্থিতিতে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণসংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য দেন।

এই বৈঠকটি যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ পর্যালোচনা, বেসরকারি খাতের সহযোগিতা জোরদার এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই দেশের বাণিজ্যিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ, গুরুত্বপূর্ণ খাতে যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করা হয়। আলোচনাগুলো মূলত বেসরকারি খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো, যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ও শিল্প খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা উদ্যোক্তাদের প্রতি ধারাবাহিক সমর্থন, আইনগত ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করা এবং ইরান-পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান বাড়ানোর ওপর জোর দেন। পাশাপাশি, দুই দেশের চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে প্রতিনিধিদল বিনিময় ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, বিশেষ করে বেসরকারি খাতের সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিনিয়োগ সহজীকরণের দিকে, আলোচনার মূল বিষয় ছিল।

এই বৈঠকের একটি শক্তিশালী দিক ছিল- ইরান ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ওপর জোর। অংশগ্রহণকারীরা এই ধরনের যোগাযোগ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং যৌথ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা করেন। একই সঙ্গে, দুই দেশের চেম্বার অব কমার্স অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সক্রিয় ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা তুলে ধরে যৌথ প্রকল্প অনুসরণে পূর্ণ প্রস্তুতির কথা জানান।

দুই দেশের প্রতিনিধিদল ও বেসরকারি খাতের সদস্যরা বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করে কৃষি, পেট্রোকেমিক্যাল, তরল গ্যাস (এলপিজি) ও জ্বালানি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যৌথ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি বাণিজ্যিক কমিটি গঠনের ওপর গুরুত্ব দেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা অত্যন্ত ব্যাপক এবং করাচিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ দুই দেশের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর দৃঢ় সংকল্পেরই প্রতিফলন।

দীর্ঘ সীমান্ত ও সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিক মিল থাকা দুই প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ইরান ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের বহু সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি খাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। বিপুল তেল ও গ্যাস সম্পদের অধিকারী ইরান পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদা পূরণে সক্ষম। অপরদিকে, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও শিল্পোন্নয়নের কারণে পাকিস্তান ইরানের জ্বালানি রপ্তানির জন্য একটি বড় বাজার। তরল গ্যাস, পেট্রোকেমিক্যাল ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য বাড়াতে এবং চোরাচালান ও অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য কমাতে সহায়ক হতে পারে।

কৃষি খাতও সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। ইরান কৃষি ও খাদ্যপণ্য উৎপাদনে উচ্চ সক্ষমতা রাখে, আর পাকিস্তান চাল, উষ্ণমণ্ডলীয় ফল ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে। এই পণ্যগুলোর পারস্পরিক বিনিময় শুধু দুই দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণই করবে না, বরং তৃতীয় দেশের বাজারে যৌথ রপ্তানির সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে।

দুই দেশের পরিপূরক শিল্প খাতেও সহযোগিতার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। ইরান অটোমোবাইল, শিল্প যন্ত্রাংশ, খনি ও নির্মাণ খাতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, অন্যদিকে পাকিস্তান বস্ত্র, পোশাক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ক্রীড়া সামগ্রী উৎপাদনে দক্ষ। এসব সক্ষমতার সমন্বয় যৌথ শিল্প প্রকল্প গড়ে তোলা এবং উভয় দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।

লজিস্টিক ও পরিবহন ক্ষেত্রেও ভৌগোলিক নিকটতা এবং স্থল ও সমুদ্র সীমান্তের উপস্থিতি বাণিজ্য ব্যয় কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। ইরান ও পাকিস্তানের বন্দরগুলোর মধ্যে সরাসরি নৌপরিবহন পুনরায় চালু করা এবং সীমান্ত বাজার উন্নয়ন বাণিজ্যকে সহজ করতে পারে। শুল্ক তথ্যের ইলেকট্রনিক বিনিময় এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আমলাতান্ত্রিক বাধা দূরীকরণ এবং রপ্তানি-আমদানি প্রক্রিয়ায় গতি আনতে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম।

এই পুরো প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করাচির বৈঠকে দুই দেশের চেম্বার অব কমার্স যৌথ কমিটি গঠন এবং উদ্যোক্তাদের সমর্থনের ওপর জোর দিয়েছে। বেসরকারি খাত ও অর্থনৈতিক কূটনীতির মধ্যে এই ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাই ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, দুই দেশের নেতৃত্বের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিতদের প্রতি ধারাবাহিক সমর্থন আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও জটিল আইনি বিধির মতো চ্যালেঞ্জ অতিক্রমের পথ সুগম করবে। এই সদিচ্ছা যদি বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও যৌথ বিনিয়োগের সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য অর্জন শুধু সম্ভবই নয়, বরং ইরান-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাও হবে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৫