তিউনিসিয়ায় সংবিধান সংস্কারের গণভোটে মাত্র ২৭ শতাংশ ভোটারের অংশ নেয়ার রহস্য!
(last modified Tue, 26 Jul 2022 13:54:06 GMT )
জুলাই ২৬, ২০২২ ১৯:৫৪ Asia/Dhaka
  • তিউনিসিয়ায় সংবিধান সংস্কারের গণভোটে মাত্র ২৭ শতাংশ ভোটারের অংশ নেয়ার রহস্য!

তিউনিসিয়ায় সংবিধান সংশোধন বিষয়ক গণভোটে দেশটির প্রায় ২৭ শতাংশ ভোটার অংশ নিয়েছেন। তিউনিসিয়ার স্বাধীন সুপ্রিম নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক জরিপে এ খবর দেয়া হয়েছে। 

দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাইস সায়িদের উত্থাপিত সংবিধান সংশোধন বিষয়ক প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদনের প্রশ্নে অনুষ্ঠিত এই গণভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল  সেখানকার বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল।

এই গণভোটকে তিউনিসিয়ার রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের লগ্ন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০১১ সালে দেশটিতে গণ-জাগরণের পথ ধরে যে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল কয়েকটি পশ্চিমা সরকারের প্রতিকূলে, তা গত কয়েক মাস ধরে চলা এই সংবিধান বিষয়ক বিতর্ককে কেন্দ্র করে এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে। 

তিউনিসিয়ায় গত কয়েক মাস আগেই রাজনৈতিক সংকট জোরদার হয়ে ওঠে যখন প্রেসিডেন্ট কাইস সায়িদ দেশটির সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ-স্পিকারকে পদচ্যুত করে সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোট আয়োজনের কথা জানান।  

এ ছাড়াও তিনি সংসদ সদস্যদের দায়মুক্তির আইন বাতিল করেছেন ও সংবিধান নজরদারির কমিটিকেও বরখাস্ত করেছেন। সায়িদ কায়িস বিচার বিভাগে শুদ্ধি অভিযানের নামে ৫৭ জন বিচারপতিকেও কথিত আর্থিক দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সহযোগী হওয়ার দায়ে পদচ্যুত করেছেন। অথচ তিউনিসিয়ার জনগণ এসব পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং গণভোটের আয়োজনসহ এসব পদক্ষেপকে দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে গণ-আন্দোলনের অর্জিত সাফল্যগুলো ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী তথা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। প্রেসিডেন্ট সায়িদের বিরোধী রাজীনৈতিক দলগুলো এসব পদক্ষেপকে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত ও কেন্দ্রীভূত করার এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণ ও সংসদের অংশগ্রহণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার  রাজনৈতিক অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছে। 

প্রেসিডেন্ট সায়িদের প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনীতে প্রেসিডেন্টকেই মন্ত্রী নিয়োগ দানের ও পদচ্যুত করার একচেটিয়া ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অথচ এসব বিষয় দেখার বা তদন্ত করার দায়িত্ব হল সংসদের। এ ছাড়াও প্রস্তাবিত নতুন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার কোনো প্রক্রিয়া রাখা হয়নি। নতুন এ সংবিধানে বিচার-বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টকে।

লক্ষণীয় বিষয় হল সংবিধান সংশোধন বিষয়ক এই গণভোটে তিউনিসিয়ার মাত্র ২৭ শতাংশ ভোটার অংশ নিয়েছেন। আর এ থেকেই প্রেসিডেন্টের নীতিমালার প্রতি জনগণের বিরোধিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিউনিসিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও দেশটির জনগণ বিক্ষুব্ধ।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট সায়িদ গণভোটের পরে বলেছেন, এরপর তিনি সবকিছুর আগে নির্বাচনী আইনের সংস্কার সংক্রান্ত খসড়া তৈরি করবেন। তিনি গণভোট সম্পর্কে তার বিরোধীদের বক্তব্যকে ভ্রান্তিপূর্ণ এবং এই গণভোটকে এক নতুন রিপাবলিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থার ভিত্তি বলেও দাবি করেছেন! 

এ অবস্থায় তিউনিসিয়ায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংকট অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৬
 

ট্যাগ