এরদোগানের সৌদি আরব সফর: লক্ষ্য অর্জনে কি সফল হবে তুরস্ক?
(last modified Wed, 19 Jul 2023 07:19:40 GMT )
জুলাই ১৯, ২০২৩ ১৩:১৯ Asia/Dhaka
  • তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান এবং সৌদি  ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
    তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান একটি উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে সৌদি আরব সফর করেছেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে তার তিন দিনের সফরের প্রথম পর্যায়ে গত সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী জেদ্দায় পৌঁছেন।

আঙ্কারা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও ২০০ তুর্কি ব্যবসায়ী এই তিন দিনের সফরে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রয়েছেন। সৌদি আরবের পর তুরস্কের প্রতিনিধিদল কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবে। পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলোতে রজব তাইয়্যেপ এরদোগানের সফরের আসল উদ্দেশ্য হলো তুরস্কের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে পুঁজি আকর্ষণ করা। তুর্কি গণমাধ্যম ও দেশটির সরকার ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণকে এই সফরের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তিনটি পারস্য উপসাগরীয় দেশ সফরের আগে তুকি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, "তিনি এই দেশগুলোর সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি এই তিনটি দেশের সাথে বিনিয়োগ চুক্তি চূড়ান্ত করতে চান।

তুরস্কের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদলের সৌদি আরব সফর এমন এক পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন তুরস্ককে অর্থনৈতিক সংকট গ্রাস করেছে। আঙ্কারা সরকারি কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রতিটি মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২৭ লিরা। পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের নানা উত্থান-পতন সত্ত্বেও বিশেষ করে গত  ২০১৬ সালের জুলাইয়ে  তুরস্কে  ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর মনে করা হচ্ছে যে উভয় পক্ষ নিজেদের প্রয়োজনে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রসারিত করতে চায়। অন্য কথায়, তুরস্ক ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়  যখন ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট জেনারেলে সৌদি সরকারের সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দুই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল।

বিশেষজ্ঞরা কিছু তথ্যে ভিত্তিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এমনকি কাতারেরও তুরস্কের সাহায্যের প্রয়োজন বেশি। তুরস্কে সামান্য বিনিয়োগের জন্য এসব দেশ তাদের সমস্ত সামরিক প্রয়োজন তুরস্ক থেকে পাবে। একই সময়ে পারস্য উপসাগরের আরব দেশ এবং তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক এখনও দুর্বল এবং ভঙ্গুর বলে মনে হচ্ছে। এই অস্থায়ী সম্পর্কগুলো স্বল্পমেয়াদী প্রয়োজনের ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, রিয়াদের সংবাদ মাধ্যম গত বছরের জানুয়ারিতে ঘোষণা করেছে: "তুর্কি প্রেসিডেন্টের প্রশংসা করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ এই দেশ থেকে একজন শিক্ষাবিদকে বহিষ্কার করেছে।" যদিও রিয়াদ মিডিয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের নাম প্রকাশ করেনি, তবে সৌদি সরকারের এই পদক্ষেপে দেখা গেছে যে সৌদি কর্তৃপক্ষ তুরস্কের সাথে একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে ইচ্ছুক। কারণ তুরস্কের অর্থনৈতিক সঙ্কট এখনও বিদ্যমান রয়েছে এবং পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলো যারা তাদের আয়ের ৯০% এর বেশি অপরিশোধিত তেল বিক্রির মাধ্যমে জোগান দেয় তাদের একচেটিয়াভাবে তুরস্ককে নিয়ন্ত্রণ করার সম্ভাবনা এখনও থাকবে। তুর্কি প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক বৈঠকের সময় জ্বালানি, আবাসন নির্মাণ, শিক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য খাতকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে ৯টি সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষরিত হয়।

সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও ড্রোন প্রস্তুতকারী তুর্কি কোম্পানি "বায়কার" এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দিয়েছে এবং মনে হচ্ছে সৌদি আরব এরদোগানের রিয়াদ সফরের লক্ষ্য পূরণ করেছে। সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান আলে সৌদ এক টুইটার পোস্টে জানিয়েছেন, তার দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্কের কাছ থেকে ড্রোন কেনার চুক্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে বাইকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হালুক বাইরাকতার এই চুক্তিকে তার দেশের ‘সর্ববৃহৎ’ প্রতিরক্ষা ও বিমান রপ্তানির চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সৌদি আরব জ্বালানী সম্পদ বিশেষ করে অপরিশোধিত তেল সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এই অঞ্চলে নিজেদের জন্য একটি নিরাপদ অবস্থান অর্জনের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে তুরস্ক যেখানে তেমন জ্বালানী সম্পদের যোগান নেই পশ্চিম এশিয়ায় একটি জ্বালানী হাব  হিসেবে নিজেদেরকে তৈরি করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি সৌদি নেতাদের জন্য খুব একটা সুখকর প্রক্রিয়া নয়। মনে করা হচ্ছে যে  রিয়াদ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তুরস্কের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যা তারা সময়ের সাথে সাথে বাস্তবায়ন করবে।

আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ীসব মিলিয়ে মনে হচ্ছে তুরস্কের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদলের সৌদি আরব সফর আঙ্কারা সরকারের তুলনায় রিয়াদ সরকারের জন্য বেশি সুবিধা বয়ে এনেছে। পরিশেষে এটা বলা যেতে পারে যে  আঙ্কারা সরকার সৌদি আরব সফর থেকে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ