অক্টোবর ১২, ২০২৩ ২০:১৮ Asia/Dhaka

যুদ্ধের ময়দানে বড় ধরনের পরাজয় আর বিপর্যয়ের দুর্বলতা ও কলঙ্ক ঢাকতে ইহুদিবাদী ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ জোরদার করেছে।

গাজায় নিহত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১৩৫৪-তে উন্নীত হয়েছে  এবং এদের প্রায় ষাট শতাংশই নারী ও শিশু।    

কিন্তু দখলদার ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী বিশ্বের কাছে এটা প্রচার করছে যে তারা বেসামরিক জনগণের ওপর নয় বরং হামাসের সেনাদের টার্গেট করেই গাজায় হামলা চালাচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হল ইসরাইল আসলে গোটা ফিলিস্তিনি জাতির সঙ্গে নৃশংসতা ও পৈশাচিকতা অব্যাহত রেখেছে এবং গাজায় অব্যাহত গণহত্যা অভিযানই তার প্রমাণ। শুধু তাই নয় গাজায় জাতিগত শুদ্ধি অভিযান জোরদার করতেই ইসরাইল সেখানে পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরই অজুহাত হিসেবে ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত ফিলিস্তিনি সংগ্রামী বা মুজাহিদদেরকে পশু বলে উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে এরই আলোকে আচরণ করার কথা বলেছেন। 

এ ছাড়াও ইসলামী জিহাদ ও হামাসকে সন্ত্রাসী বা মানবতা-বিরোধী হিসেবে তুলে ধরতে ইসরাইল ও তাদের পশ্চিমা সহযোগী সরকারগুলোর নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা কোনো কোনো মিডিয়া নানা মিথ্যা খবর বা অপবাদ প্রচার করছে। যেমন, সম্প্রতি ইসরাইলের পক্ষ থেকে কোনো কোনো বানোয়াট ছবি প্রকাশ করে প্রচার করা হয়েছে যে ফিলিস্তিনিরা বা হামাসের সেনারা ইসরাইলি শিশুদের শিরশ্ছেদ করেছে। এ ছাড়াও এইসব মহল থেকে দাবি করা হয়েছে যে সংগ্রামী ফিলিস্তিনিরা বহু ইসরাইলি নারীকে ধর্ষণ করেছে! মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এইসব তথ্যের আলোকে হামাসকে দায়েশ বা আইএস-এর চেয়েও বড় রক্ত-পিপাসু বা সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ পরে হোয়াইট হাউজই স্বীকার করেছে যে বাইডেন বা হোয়াইট হাউজের কেউই এ ধরনের ছবি দেখেননি এবং এইসব সংবাদকে স্বীকৃতিও দেননি!

ইসরাইলি নৃশংসতার শিকার ফিলিস্তিনি শিশু 

 নারী ও শিশুসহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিকতার বিরোধী এবং যুদ্ধ-অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলো তা তুলে ধরছে না। পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমগুলো ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধকে দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে উল্লেখ করলেও দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সন্ত্রাসী হামলা বা হিংস্র আচরণ হিসেবে তুলে ধরছে। নিজ ভূমে পরবাসী করে রাখা ফিলিস্তিনিরা যে ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান নৃশংসতার জবাবে মজলুম হিসেবেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় পাল্টা হামলা হিসেবে সাম্প্রতিক অভিযানগুলো চালিয়েছে সে বাস্তবতাকেও উপেক্ষা করছে পশ্চিমা সরকারগুলো ও তাদের নিয়ন্ত্রিত সংবাদ-মাধ্যম। ফিলিস্তিনিরা গত সাত দশক ধরে প্রায়ই ইসরাইলি নৃশংস হামলায় নিহত হলেও কখনও সেসবকে হত্যাযজ্ঞ হিসেবে তুলে ধরেনি পশ্চিমা মিডিয়া। অথচ ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের হাতে নিহত দখলদার সেনা ও সন্ত্রাসী ইসরাইলিদের প্রাণহানিকে খুব নৃশংস ঘটনা বা হত্যাযজ্ঞ বলে প্রচার করছে। 

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হল মুসলিম বিশ্বের সরকারগুলোর মধ্যে ইরান, ইরাক ও ইয়েমেনসহ খুব অল্প বা গুটি-কতেক সরকার ইসরাইলের বিরুদ্ধে কড়া নিন্দা বা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আরব লীগও ইসরাইলী অপরাধযজ্ঞ থামাতে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আরব লিগ আর  ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি নিষ্ক্রিয় ও মেরুদণ্ডহীন সংস্থার মতই আচরণ করছে। অথচ মুসলিম সরকারগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইল ও তার সহযোগী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বহু আগেই ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা ও মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসাকে মুক্ত করা সম্ভব হত। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী বলেছিলেন, মুসলমানরা বা আরবরা এক বালতি করে পানি ঢাললেও ইসরাইল ভেসে যেতো। 

এদিকে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সামরিক সহযোগিতা ও অস্ত্র চালান পাঠানো অব্যাহত রয়েছে। এরই আলোকে ইসরাইল সম্ভবত গাজায় স্থল-অভিযান চালানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীত ও বর্তমানে ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলা ও গেরিলা বা কমান্ডো অভিযানগুলো ঠেকাতে চরম ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে ইসরাইল গাজায় স্থল হামলা চালাতে গেলে আরও ব্যাপক পরাজয় বা বিপর্যয়ের শিকার হবে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১২ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ