স্থল অভিযানের ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিতেই গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা
(last modified Wed, 01 Nov 2023 12:33:33 GMT )
নভেম্বর ০১, ২০২৩ ১৮:৩৩ Asia/Dhaka

গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্বরোচিত গণহত্যার ২৬তম দিন চলছে। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকামী সংগঠন এবং গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণে অনুপ্রবেশকারী ইহুদিবাদী বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সামরিক যান ধ্বংস এবং বহু ইহুদিবাদী সৈন্যদের হত্যা করা হয়েছে। প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো ইসরাইলের অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে আবার রকেট হামলা শুরু করেছে।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার ১১ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩২৬ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।  গতকালের লড়াইয়ে আরও দুই সৈন্য গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গালান্ট বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের এই মৃত্যু ‘খুবই কঠিন’ ও ‘বেদনাদায়ক’ আঘাত।  সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে গালান্ট বলেন, ‘দীর্ঘ ও জটিল একটি সামরিক অভিযানের জন্য আমরা প্রস্তুত।’

এদিকে, হামাসের সামরিক ইউনিট ইজ্জেদ্দিন আল-কাসাম ব্যাটালিয়নের মুখপাত্র যখন ঘোষণা করেছিলেন যে ইহুদিবাদী সৈন্যদের ২০টির টিরও বেশি যানবাহন ধ্বংস করা হয়েছে এই ক্ষেত্রে এটি অনুমান করা যেতে পারে যে ইসরায়েলি সৈন্যদের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে অনেক বেশি।

স্থল অভিযানের এই ভয়াবহ ব্যর্থতার ক্ষতিপূরণের জন্য এবং সেইসঙ্গে আল-আকসা তুফানের মতো অভূতপূর্ব এবং যুগান্তকারী অভিযানের কারণে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা গাজার আশপাশ এলাকা থেকে যখন পালাতে বাধ্য হচ্ছে তখন  ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে গাজার  আবাসিক এলাকায় বিমান ও কামান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার বেসামরিক এলাকাগুলো পোড়া মাটির নীতির উপর ভিত্তি করে ইসরাইলি সেনারা প্রতিদিন বেসামরিক লোকজন বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে শুধুমাত্র জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে এবং ইসরাইলি হামলায়  আবাসিক এলাকার অনেক বাসিন্দা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে।

এই মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন: "আমরা আহত এবং অসুস্থদের জীবন বাঁচাতে শেফা মেডিকেল কমপ্লেক্সে আসতে বলি । এখানে অল্প  পরিমাণ জ্বালানি মজুদ রয়েছে।" 

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে আল-শিফা কমপ্লেক্স এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের বিদ্যুৎ জেনারেটর চলে যাওয়া পর্যন্ত তাদের কাছে মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় আছে,। মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে,  "ইনকিউবেটরে ৪২ জন শিশু, ৬২ জন আহত  রোগীদের বাঁচাতে আমাদের জ্বালানী দরকার। 

ইহুদিবাদী শাসক তার অপরাধযজ্ঞ আড়াল করার জন্য  গাজায় ইন্টারনেট এবং অন্যান্য যোগাযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে। গত পাঁচ দিনে দ্বিতীয়বারের মতো গাজায় যোগাযোগ লাইন ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (পালটেল) ঘোষণা করেছে যে গাজা উপত্যকায় সমস্ত যোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নেটব্লকস, যা বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ট্র্যাফিক পর্যবেক্ষণ করে, গাজায় টেলিফোন এবং ইন্টারনেট লাইনের সম্পূর্ণ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং অ্যাক্সে গাজার নেটওয়ার্ক সংযোগের একটি গ্রাফ প্রকাশ করেছে, লিখেছেন: "গাজা একটি নতুন ইন্টারনেট বিভ্রাটের মাঝখানে।"

গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর সর্বাত্মক অভিযানের ২৬ দিনের মধ্যে তাদের মধ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি নিহত ও আহত হয়েছে এবং এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সময়ে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ বন্ধে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কোনো প্রয়োজনীয়  ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয় নি এবং এটি নেতানিয়াহুর সরকারকে গাজায় আরো গণহত্যা চালাতে উৎসাহিত করছে।# 

পার্সটুডে/এমবিএ/১      

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থা