দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত কি ব্রিটিশদের উপনিবেশিক নীতির ফসল?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154272-দক্ষিণ_এশিয়ায়_সংঘাত_কি_ব্রিটিশদের_উপনিবেশিক_নীতির_ফসল
পার্সটুডে- পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে ভারতের সাথে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কার কারণে দেশটির সেনাবাহিনী পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
(last modified 2025-11-21T14:22:05+00:00 )
নভেম্বর ২১, ২০২৫ ১৭:২৫ Asia/Dhaka
  • • ভারত-পাকিস্তান সংঘাত
    • ভারত-পাকিস্তান সংঘাত

পার্সটুডে- পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে ভারতের সাথে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কার কারণে দেশটির সেনাবাহিনী পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

পাকিস্তান দাবি করেছে যে আফগান মাটি থেকে আক্রমণের ঘটনায় ভারত জড়িত। ইসলামাবাদ জোর দিয়ে বলেছে যে ভারত চায় না পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার বিরোধগুলোর অবসান ঘটুক যাতে পাকিস্তান একই সাথে দুটি ফ্রন্টে ব্যস্ত থাকে। পার্সটুডে জানিয়েছে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছেন যে ভারতের সাথে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ঝুঁকির কারণে দেশটির সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ স্তরে যুদ্ধ প্রস্তুতি বজায় রেখেছে।

ইতিহাসের দিকে এক নজরে দেখলে দেখা যায় যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত দীর্ঘকাল ধরে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জটিল এবং স্থায়ী সংঘাতগুলির মধ্যে একটি হিসাবে পরিচিত, যার শিকড় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু হয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে ব্রিটেনি

১৯৪৭ সালের ১৫ অক্টোবর একটি অদ্ভুত তারিখ। এ এমন একটি ইতিহাস যেখানে ব্রিটিশরা চলে যাবার পর ভৌগোলিক মানচিত্রে ভারত দুটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়েছিল যাদের  জন্ম ছিল রক্তের ওপর দিয়ে এবং যার ক্ষত কখনও শুকায়নি। দুটি রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম উপনিবেশবাদের শেষ অধ্যায় ছিল না, বরং এটা ছিল অভূতপূর্ব মানবিক ও ভূ-রাজনৈতিক ট্র্যাজেডির সূচনা।

একই সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী এ দুটি দেশের মধ্যে চারটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ (১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৯৯) হয়েছে এবং কাশ্মীর, সিন্ধু ও চেনাব নদীর জলসম্পদ, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এবং অস্পষ্ট সীমান্তরেখা নিয়ে কয়েক বহু রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দিকে ১ কোটি ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং দশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ওই ট্র্যাজেডির সূচনা ছিল। দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যকার সন্দেহ ও বিদ্বেষ আজ কাঠামোগত ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। একে অপরের মাটিতে সন্ত্রাসী ঘটনা, বোমা হামলা হোক বা ট্রেনে আক্রমণ সেসবের জন্য তারা একে অপরকে অভিযোগ করে।

ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের উত্তরাধিকার উপমহাদেশের বিভাজন

১৮ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রিটেন উপমহাদেশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল, যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আধুনিক ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাসহ এই উপমহাদেশ তার সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রচুর শ্রমিক এবং কৌশলগত অবস্থানের কারণে ব্রিটেনের কাছে অত্যন্ত লোভনীয় ছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) পর, ব্রিটেন মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, এর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর সামরিক বাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং উপনিবেশবাদের অবসানের জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে, মহাত্মা গান্ধী এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মতো ব্যক্তিত্বদের নেতৃত্বে ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও জোরদার হতে থাকে।

১৯৪৫ সালে, প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলির নেতৃত্বে ব্রিটিশ সরকার ভারতে উপনিবেশবাদের অবসানের সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য, লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেনকে ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের শেষ ভাইসরয় হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মাউন্টব্যাটেনকে ১৯৪৮ সালের জুনের মধ্যে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যকার   বিরোধ বা পার্থক্য দূর করা সম্ভব নয় এবং উপমহাদেশের বিভাজনই একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান।

মাউন্টব্যাটেন একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন যা উপমহাদেশকে দুটি স্বাধীন দেশে বিভক্ত করবে: হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান। পাকিস্তান দুটি অংশ নিয়ে গঠিত হবে: পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)। পরিকল্পনাটি ১৯৪৭ সালের জুন মাসে অনুমোদিত হয় এবং স্বাধীনতার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৫ আগস্ট ১৯৪৭।

দেশ বিভাগের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশগুলির মধ্যে একটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ। ব্রিটিশরা এটি করার জন্য একজন ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফকে নিযুক্ত করে। তিনি ১৯৪৭ সালের গ্রীষ্মে ভারতে আসেন এবং দুই দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারণের জন্য মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় পান। র‍্যাডক্লিফ রেখা এঁকেছিলেন যা পরবর্তীতে র‍্যাডক্লিফ রেখা নামে পরিচিতি পায়। এই সীমান্ত রেখাগুলি এ অঞ্চলের ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে আঁকা হয়েছিল, কিন্তু তাতে অনেক সমস্যা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, পাঞ্জাব, লাহোরের মতো শহর, যেখানে হিন্দু, শিখ এবং মুসলিম জনসংখ্যা ছিল যা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। যার ফলে ব্যাপক অভিবাসন এবং সহিংসতার ঘটনা হয়েছিল। বাংলাকে দুই ভাগ করা হয় এবং কাশ্মির মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তখন  সেখানে হিন্দু শাসক থাকায় কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্পষ্ট করা হয়নি যা কিনা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্থায়ী বিরোধে পরিণত হয়। #

পার্সটুডে/এমআরএইচ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন