ব্রিটেনে অভিবাসী বিদ্বেষের নতুন ঢেউ: জনরোষ থেকে মনোযোগ সরানোর কৌশল?
-
ব্রিটিশ সরকারের বিদ্বেষের শিকার অভিবাসীরা
পার্সটুডে: সর্বশেষ এক জরিপে দেখা গেছে, সরকারের অর্থনৈতিক নীতির প্রতি ব্রিটেনের জনগণের আস্থা এক শতাংশেরও কমে নেমে এসেছে।
পার্সটুডে'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকারের বাজেট প্রকাশের মাত্র এক সপ্তাহ আগে সামনে আসা জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে যে, দেশটির জনগণের সরকারের অর্থনৈতিক নীতিতে আস্থা এখন এক শতাংশেরও কম। ডেইলি মেইল লিখেছে, লেবার পার্টি ব্রিটেনের সরকার চালানোর সময়, দেশটির জনগণের অর্থনীতির প্রতি আস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
ডেইলি মেইলের মতে, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মাত্র এক শতাংশেরও কম মানুষ মনে করেন যে দেশের অর্থনীতি 'খুব ভালো' অবস্থায় আছে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক জরিপে ৪৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন অর্থনীতি 'তুলনামূলকভাবে খারাপ' এবং ৩৫ শতাংশ বলেছেন 'খুবই খারাপ' অবস্থায় রয়েছে।
ইউগভ (YouGov) জরিপ সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে ডেইলি মেইল লিখেছে, যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী রেচেল রিভস এবং প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে মাত্র এক শতাংশেরও কম মানুষ 'খুব ভালো' বলেছেন, আর ১৩ শতাংশ বলেছেন 'তুলনামূলকভাবে ভালো'। ফলে ৭৭ শতাংশ মানুষ সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে 'খারাপ' মনে করছেন।
অন্যদিকে, পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মতো ব্রিটিশ সরকারও অভিবাসী-বিরোধী নীতি কঠোর করতে শুরু করেছে এবং রাজনৈতিক আশ্রয়, আবাসন, কর্মসংস্থান ও সহায়তা কর্মসূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। অভিবাসী ও শরণার্থীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নীতি সম্বলিত নতুন বিলটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এমনকি ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির কিছু সংসদ সদস্যও এর বিরোধিতা করেছেন।
যুক্তরাজ্য সরকারের নতুন অভিবাসীবিরোধী নীতিতে বলা হয়েছে, যাদের আশ্রয় আবেদন গৃহীত হবে তাদেরও স্থায়ী ভিসা পেতে ২০ বছর কাজ করতে হবে। পার্লামেন্টের অনেক সদস্য এই নীতিকে 'অনৈতিক, বর্ণবাদী ও নিষ্ঠুর' বলে আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে নতুন নীতিতে সরকারকে সামাজিক সহায়তা বন্ধ করা এবং অভিবাসীদের বহিষ্কার করার পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
পার্লামেন্টের স্বাধীন ও অভিজ্ঞ সদস্য তথা যুদ্ধবিরোধী ও বর্ণবাদবিরোধী পরিচিত মুখ জেরেমি করবিন সরকারের বিলের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিতে আশ্রয়প্রার্থীদের পটভূমির প্রতি কোনো মনোযোগ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি জানেন না যে, লা মঞ্চ প্রণালী পেরিয়ে যারা আমাদের দেশে এসেছেন তাদের মধ্যে ছয় হাজারের বেশি এসেছেন আফগানিস্তান থেকে—যে দেশকে আমরাই যুদ্ধবিধ্বস্ত করেছি?” তিনি আরও বলেন: “সরকার ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনকে দুর্বল করে ইউরোপজুড়ে সবচেয়ে ভয়ংকর ডানপন্থী ও বর্ণবাদী শক্তিগুলোকে খুশি করার চেষ্টা করছে।”
গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্য কার্লা ডেনিয়ার ব্রিটিশ সরকারের এই নীতির প্রতিবাদে বলেছেন, “এই শরণার্থীরা আমাদের দেশকে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে না। এই বিষাক্ত ও বর্ণবাদী বয়ান এবং অভিবাসী-আশ্রয়প্রার্থীদের বলির পাঁঠা বানানোর উদ্দেশ্য একটাই—যাতে আপনারা তাদের সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। দীর্ঘস্থায়ী আবাসন সংকট ও জনসেবা হ্রাসের জন্য অভিবাসীরা দায়ী নয়; এর জন্য দায়ী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং দেশের ভয়ংকর বৈষম্য।”
পার্সটুডে/এমএআর/২১