বন্দি বিনিময় চুক্তি ও ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি: স্থায়ী কেন নয়?
(last modified Wed, 22 Nov 2023 07:45:41 GMT )
নভেম্বর ২২, ২০২৩ ১৩:৪৫ Asia/Dhaka

গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলি আগ্রাসনের দেড় মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনও যুদ্ধ চলছেই, শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। আজ যদিও বন্দি বিনিময় চুক্তি হয়েছে এবং ৪দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতিও মেনে নিয়েছে ইসরাইল।

কাতার বলেছে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। কিন্তু এরইমধ্যে ইহুদিবাদী সেনাদের বর্বর হামলায় ১৪ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু এবং নারী। এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। এ যুদ্ধে ৬৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। গাজার হাসপাতালগুলো হয় ধ্বংস হয়ে গেছে নতুবা জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, গাজার প্রায় ২২ লাখ মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান বারবার স্বীকার করেছে, ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজার জনগণের বিরুদ্ধে যা করছে তা গণহত্যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো যুদ্ধ কেন স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না?

দুটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।

প্রথম কারণ হলো যুদ্ধের ৪৬ দিন পরও দখলকার ইসরাইল এখনো কোনোকিছুই অর্জন করতে পারে নি। যুদ্ধে ইহুদিবাদীদের দুটি প্রধান লক্ষ্য ছিল-তাদের বন্দীদের মুক্তি এবং হামাসের ধ্বংস। তারা এখন পর্যন্ত তাদের একজন বন্দিকেও মুক্ত করতে সফল হয় নি এমনকি বন্দীদের কোথায় রাখা হয়েছে তাও জানে না। ইসরাইল ভেবেছিল তাদের বন্দিদের হাসপাতাল এবং স্কুল ভবনের নীচে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই ধারণাটিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এই ঘটনাকে ইসরাইলিদের আরেকটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরাইলে এখন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে।ওই বিক্ষোভের প্রধান কারণ হল বন্দীদের মুক্ত করতে মন্ত্রিসভার ব্যর্থতা। উপরন্তু হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্য তো অর্জিত হয় নি বরং স্থল যুদ্ধে হামাসের যোদ্ধারা দখলদার সেনাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়াবহ প্রতিরোধ গড়েছে যে ইসরাইলিদের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পরাজয় হবে এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিজয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির সঠিক সময় এসেছে বলে আমরা এখনও মনে করি না। যুদ্ধবিরতি মানে গাজায় সংঘর্ষ পুরোপুরি বন্ধ হওয়া। কিন্তু আমরা মনে করি যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি হামাসের অনুকূলে। এসব জেনেশুনেও গতরাতে ৬ ঘণ্টা বৈঠক শেষে আজ ভোররাতে বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং ৪দিনের যুদ্ধবিরতি অনুমোদন করেছে ইসরাইল। তার মানে হামাসের সঙ্গে তারা এই চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। ইসরাইলি মন্ত্রী বেনি গান্তেজ তাই দু:খ করে বলেছেন: ইসরাইলের জন্য চুক্তিটি কঠিন এবং বেদনাদায়ক।

দ্বিতীয় কারণ হলো পশ্চিমা শক্তিগুলো এখনই যুদ্ধ শেষ করতে চাচ্ছে না। কেননা তারা চায় এই যুদ্ধে ইহুদিবাদীদের বিজয়। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ এখনো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে চুক্তি করলো ইসরাইল। ইসরাইলের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকভ আমিড্রর বলেছেন: তার দেশের সরকার এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রকৃত চাপ অনুভব করছে না। তাদের বিরুদ্ধে চাপ হলো বেসামরিক ফিলিস্তিনী হত্যা কমানো এবং গাজায় ত্রাণ ও ঔষধ সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা।

তো আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের সমর্থনেই ইসরাইল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যদিও যুদ্ধে ইসরাইলই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।#

পার্সটুডে/এনএম/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ