নয়া মহাসচিব নাঈম কাসেমের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ'র ভবিষ্যত
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের এক মাস পর লেবাননের হিজবুল্লাহ ঘোষণা করেছে, তারা শেইখ নাঈম কাসেমকে হিজবুল্লাহর নতুন মহাসচিব হিসেবে বেছে নিয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইহুদিবাদী ইসরাইলের সন্ত্রাসী হামলায় সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ শহীদ হন। এই অপরাধের ৩৩ দিন পর ৭০ বছর বয়সী শেইখ নাঈম কাসেম নতুন মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।
শেইখ নাঈম কাসেম এর আগে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সহযোগী ছিলেন, সংগঠনের উপ-মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লেবাননে হিজবুল্লাহর নতুন মহাসচিব হিসেবে শেইখ নাঈম কাসেমের দায়িত্ব গ্রহণ বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, যা পার্সটুডে'র এই নিবন্ধে তুলে ধরা হলো।
প্রথমত: শেইখ নাঈম কাসেম আমাল আন্দোলন ও হিজবুল্লাহ- এই দুই সংগঠনের সঙ্গেই কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তিনি লেবাননের আমাল আন্দোলন এবং হিজবুল্লাহ- এই দুই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের একজন। সাংগঠনিক দিক থেকে বিবেচনা করলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। হিজবুল্লাহর কাঠামোগত এবং সামরিক শক্তিকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে তাঁর এই বৈশিষ্ট্য ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ইরানের বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান ইব্রাহিম বলেছেন, শেইখ নাঈম কাসেম অত্যন্ত ধার্মিক একজন মানুষ। পাশাপাশি সংগঠনে সব সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দৃঢ়তা ও বলিষ্ঠতায় তিনি অনন্য।
দ্বিতীয়ত: শেইখ নাঈম কাসেমকে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হিসেবে বেছে নেওয়ার মধ্যদিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, হিজবুল্লাহ এখনও গতিশীল। ইহুদিবাদী ইসরাইলের চলমান নৃশংস অপরাধযজ্ঞ এবং হিজবুল্লাহর বহু কমান্ডার ও নেতার শাহাদাতের পরও সংগঠনটি যে থমকে যায়নি তা সবার কাছে প্রমাণিত হয়েছে। আরেকটি বিষয় সবাই বুঝতে পারছে যে, হিজবুল্লাহর ক্যারিসম্যাটিক নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে এই সংগঠন। নতুন মহাসচিব নির্বাচনের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ নিজেদের অভ্যন্তরীণ ও সাংগঠিনক সুসংহত অবস্থানেরও জানান দিয়েছে।
লেবাননের হিজবুল্লাহর নতুন মহাসচিব হিসেবে শেইখ নাঈম কাসেমকে বেছে নেওয়ার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর লড়াই থামেনি এবং ভবিষ্যতেও থামবে না। শেইখ নাঈম কাসেম বলেছেন, শহীদ হাসান নাসরুল্লাহর পথ পুরোপুরি অনুসরণ করে যাবেন। কাজেই দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতি থেকে এক চুলও সরে যায়নি হিজবুল্লাহ এবং ভবিষ্যতেও তারা এই নীতিতে অটল থাকবে। শেইখ নাঈম কাসেমের ব্যক্তিত্ব এবং ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেবাননের হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব পদে থাকার অভিজ্ঞতা সংগঠন পরিচালনার কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে চারটি যুদ্ধ অর্থাৎ ১৯৯৩, ১৯৯৬, ২০০০ এবং ২০০৬ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কারণে শেইখ নাঈম কাসেম সহজেই যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর পথ দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাবেন শেইখ নাঈম কাসেম।
পরিশেষে বলা যায়, লেবাননে হিজবুল্লাহর নতুন মহাসচিব হিসেবে শেখ নাঈম কাসেম এমন সময় দায়িত্ব পালন করতে শুরু করলেন যখন হিজবুল্লাহর বহু নেতা ও কমান্ডার শহীদ হয়েছেন। কিন্তু শাহাদাতকে হিজবুল্লাহর যোদ্ধা, কমান্ডার ও নেতারা ভয় পান না বরং তারা সচেতনভাবে আল্লাহর পথে সংগ্রাম বা জিহাদের পথ বেছে নিয়েছেন। এই মৌলিক বিষয়টিকে বুঝতে সক্ষম নয় ইহুদিবাদী ইসরাইল। বর্ণবাদী ও দখলদার শক্তিকে এটা বুঝতে হবে, নেতাদের হত্যার মাধ্যমে তারা হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করতে পারবে না, কারণ শাহাদাতের তামান্না তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।#
পার্সটুডে/এসএ/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।