ইয়েমেনিদের ইসরায়েলবিরোধী হামলায় এইলাত বন্দরের ভয়াবহ ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i150622-ইয়েমেনিদের_ইসরায়েলবিরোধী_হামলায়_এইলাত_বন্দরের_ভয়াবহ_ও_ব্যাপক_ক্ষয়ক্ষতি
পার্স-টুডে-ইহুদিবাদী অধিকৃত ফিলিস্তিনের উম্মুর রাশরাশ বন্দরটির নাম বদলে নতুন নাম দেয় ইসরাইল। ফলে ইসরায়েল এই বন্দরকে বলে এইলাত বন্দর।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
জুলাই ২৩, ২০২৫ ১৯:৫৭ Asia/Dhaka
  • এইলাত বন্দর
    এইলাত বন্দর

পার্স-টুডে-ইহুদিবাদী অধিকৃত ফিলিস্তিনের উম্মুর রাশরাশ বন্দরটির নাম বদলে নতুন নাম দেয় ইসরাইল। ফলে ইসরায়েল এই বন্দরকে বলে এইলাত বন্দর।

কিন্তু বাণিজ্য, জ্বালানি ও পর্যটন-কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত এই বন্দর এখন নিরাপত্তার সংকটের শিকার ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অচল এবং জনগণের কাছে অনির্ভরযোগ্য। গাজাবাসীসহ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি দেখিয়ে ইয়েমেনিরা উপর্যপুরি হামলা চালাতে থাকায় এই শোচনীয় অবস্থা হয়েছে এইলাত বন্দরের। 

আলখানদাক্ব নামের একটি ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে যে প্রতিবেদন এসেছে তা তুলে ধরতে গিয়ে পার্স-টুডে জানিয়েছে, এই বন্দরটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত কেবল এক আকস্মিক সিদ্ধান্ত নয় বরং ইয়েমেনিদের হামলার কারণেই অচল হয়ে পড়া বন্দরটি বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন ২০২৩ সালের শেষের দিকে গাজার সমর্থনে সামুদ্রিক অভিযান শুরু করে। ইয়েমেনিদের এইসব হামলা বা অভিযান ইসরাইলের প্রধান অবকাঠামোগুলোর দুর্বলতা তুলে ধরেছে এবং এখন এইলাত বন্দর অধিকৃত ফিলিস্তিনের গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের নৌ-চলাচল ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধসে পড়ার প্রতীক।

আলখানদাক্ব-এর বরাত দিয়ে পার্স-টুডে আরও জানিয়েছে: সুয়েজ খালের রুট দিয়ে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগের কৌশলগত রিং হিসেবে বিবেচিত এই বন্দরটি হয়ে উঠেছিল লোহিত সাগরে ইসরাইলের একমাত্র করিডোর। কিন্তু এখন ইয়েমেনিদের ব্যাপক হামলায় এই বন্দর এতই বিধ্বস্ত যে এখানে নৌ-চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে এবং জাহাজগুলো বিমা খরচ বেড়েছে ২৭০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো এই কারণে এই রুট ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

বন্দরের দেনা বৃদ্ধি

ওই একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইলাত বন্দরের দেনা এখন এক কোটি ডলারেরও বেশি এবং এর আয় কমে গেছে ৮৫ শতাংশ। এদিকে কর দিতে অক্ষম হওয়ায় এইলাত বন্দর শহরটির কর্তৃপক্ষ তার ব্যাংক একাউন্টগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে এবং সেগুলো পুনরুজ্জীবনেরও আর কোনো আশা নেই।  
ইয়েমেনি হামলার ফলে এইলাত বন্দরের যে কেবল শিপিং কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে গেছে তা নয় একইসঙ্গে এটি নিখুঁত ও ভয়াবহ নানা আঘাতেরও শিকার হয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে কেবল গত ১৬ জুলাইয়ের হামলার কথাই স্মরণ করা যায়। এই হামলা ছিল চারটি সমন্বিত অভিযানের ফসল। আর ওই অভিযানগুলোর টার্গেট ছিল বেনগুরিয়ান বিমানবন্দর, নেগেব অঞ্চল এবং এইলাত বন্দর। আর এতে ব্যবহার করা হয়েছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র জুলফিকার ও উন্নত প্রযুক্তির কিছু ড্রোন। ইসরাইল এইসব অভিযানের ক্ষয়ক্ষতিকে ক্ষুদ্র বলে তুলে ধরতে চাইলেও এই সব টার্গেটই নিখুঁত ইয়েমেনি আঘাতের শিকার হয়েছে বলে আলখানদাক্ব জানিয়েছে।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়

আলখানদাক্ব আরও লিখেছে, এইসব আঘাতের ফলে ইসরাইলি অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়, বিশেষ করে বাণিজ্য, অটোমোবাইল ও জ্বালানী খাতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বিপর্যয়। ইসরাইলে বিদেশি গাড়ি আমদানির ৫০ শতাংশই ঘটত এই এইলাত বন্দর দিয়ে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এই আমদানি তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এবং গুদামে আটকা পড়ে আছে অন্তত বিশ হাজার অটোমোবাইল।

আলখানদাক্ব আরও জানিয়েছে, ইয়েমেনি নৌ-হামলার ফলে থেমে গেছে এইলাত-আস্কালান পাইপলাইন ব্যবহার করে আমিরাতের তেল পরিবহন করার প্রকল্প এবং ২৭০০ কোটি ডলার মূল্যের এইলাত, হাইফা ও এশদুদ বন্দরের বিশাল রেল-প্রকল্প।  

এইলাত বন্দরে প্রতি বছর আসত প্রায় দশ লাখ পর্যটক। এখন এই খাতটিও অচল হয়ে পড়েছে ১২ নম্বর সড়ক বন্ধ হওয়ায় ও সেনাসদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে। ফলে ইসরাইলি মুদ্রা শেকেল-এর হিসাবে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন শেকেল। এই অঞ্চল যে নিরাপদ নয় সেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে।

 বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া

ইয়েমেনের ওপর সরাসরি হামলা চালাতে মার্কিন সরকারের ওপর বার বার চাপ দিয়ে এসেছে ইসরাইল এবং ইয়েমেন-বিরোধী আন্তর্জাতিক নৌ-জোট গঠনেরও দাবি জানাচ্ছে অবৈধ এই সরকার। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ইসরাইলি ও মার্কিন সামরিক পদক্ষেপগুলো ব্যর্থ হচ্ছে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও মার্কিন বিমানবাহী রণতরীসহ যুদ্ধ বিমানগুলোর ব্যর্থ বা অকার্যকর হামলাগুলোর কারণে।
ওদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ লোহিত সাগরে হামলাগুলোর ওপর নজরদারির মিশন নবায়ন করলেও এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দানে বিরত থেকেছে রাশিয়া, চীন ও আলজেরিয়া। ফলে এই পরিষদের দ্বিধা-বিভক্তি স্পষ্ট এবং মার্কিন ও ইসরাইলি আধিপত্যকামিতার বিরুদ্ধে ইয়েমেনের প্রতিরোধ ক্রমেই বেশি বৈধতা পাচ্ছে। 

কোনো করিডোরই আর দখলদারদের জন্য নিরাপদ নয় 

আলখানদাক্ব ওয়েবসাইটের মতে আনসারুল্লাহ গাজার প্রতিরোধ আন্দোলনের সহযোগী হয়ে এই অঞ্চলে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের এক সফল সমীকরণ চাপিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আর এই সমীকরণের বার্তা বা অর্থ হল কোনো করিডোরই আর দখলদারদের জন্য নিরাপদ নয়। মোট কথা এই ওয়েবসাইটের দৃষ্টিতে এইলাত বন্দর ইসরাইলের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া ও প্রতিরোধ ঠেকানোর সক্ষমতা কমে আসার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে ইয়েমেনের প্রতিরোধ এখন এমন এক নতুন বাস্তবতা যা কয়েক বছর আগে কল্পনাও করা যেত না। এই বাস্তবতা যুদ্ধের ভূমিকার নতুন সংজ্ঞা সৃষ্টি করেছে ও প্রমাণ করেছে যে দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ইয়েমেনের সা'দা থেকে ফিলিস্তিনের আস্কালান এবং গাজা থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। #  
 

পার্স-টুডে/এমএএইচ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।