সিরিয়া ইস্যুতে শুরু হল আস্তানা বৈঠক: সৌদি-মার্কিন ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ
কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সিরিয়া বিষয়ক সপ্তম বৈঠক শুরু হয়েছে। আগামীকাল পর্যন্ত আলোচনা চলবে। এ বৈঠকে সিরিয়ার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত রয়েছেন।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন জাবেরি আনসারির নেতৃত্ব দেশটির প্রতিনিধি দল ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্য গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মস্কোয় অনুষ্ঠিত ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যেসব সমঝোতা হয়েছিল তারই আলোকে আস্তানায় ওই তিন দেশের কর্মকর্তারা ফের বৈঠকে মিলিত হলেন। তিন দিক থেকে এ বৈঠকের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
প্রথমত, এ বৈঠক আঞ্চলিক কূটনৈতিক তৎপরতাকে জোরদার করবে। বিশেষ করে মার্কিন সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপ 'সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিস ফোর্সেস' বা 'এসডিএফ' দায়েশ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে কৌশলগত রাকা শহর মুক্ত করার পর সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্য নতুন করে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এবারের আস্তানা বৈঠকে এতদিন যেসব দেশ কিংবা সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত নয় এমনসব গ্রুপ যারা সিরিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করে আসছিল তারাও যোগ দিয়েছে। আর তৃতীয়ত, আস্তানা বৈঠকে তুরস্কের সক্রিয় উপস্থিতির ফলে সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো জোরদার হবে। কারণ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এক থাকলে সিরিয়া ইস্যুতে যে পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন তা জোরালো হবে।
সিরিয়া সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে তাতে আমেরিকার ভূমিকা কেমন হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, কাজাখস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এবারের আস্তানা বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড স্যাটার ফিল্ডও যোগ দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা ভালো করেই জানে সিরিয়া যুদ্ধে তাদের চরম পরাজয় ঘটেছে। এ কারণে তারা এখন ভিন্ন কৌশলে সিরিয়ায় নিজেদের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রধান জোসেফ ড্যানফোর্ড গত ২১ মে ন্যাশনাল জার্নাল ক্লাবে দেয়া বক্তৃতায় বলেছিলেন, "আমেরিকা পরিচালিত 'এসডিএফ' বাহিনীর মাধ্যমে সিরিয়ার রাকা শহর দখল করার সাথে সাথে আমরা সেখানে একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করব। রাকার আরব নেতাদের নিয়ে ওই সরকার গঠনের পর স্থানীয় সেনাবাহিনী গঠনের চেষ্টা করা হবে যাতে রাখা দখলের পর ওই শহরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়।"
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বর্তমানে 'এসডিএফের' মাধ্যমে দখল করা রাকা শহরের জনগণের নিরাপত্তার অজুহাতে সিরিয়ায় নতুন করে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের চেষ্টা করছে। আমেরিকার এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির উপপ্রধান ফ্রান্তেস ক্লিন্তসোভিচ বলেছেন, "রাকা শহরে প্রভাব ধরে রাখার জন্য যেভাবে লাখ লাখ ডলার ও ইউরো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা থেকে সিরিয়ার ব্যাপারে মার্কিন নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক জোটের দ্বিমুখী নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়।"
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সিরিয়ার রাকা শহর দখলের বিষয়টিকে নতুন পর্বের সূচনা হিসেবে অভিহিত করে দাবি করেছেন, সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগকে ওয়াশিংটন সমর্থন জানাবে।
যাইহোক, দায়েশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশাল সাফল্যের পর এখন সিরিয়া ইস্যুতে নতুন করে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হয়েছে। কিন্তু আমেরিকা ও সৌদি আরব আস্তানা বৈঠকের ফলাফল মেনে নেবে বলে ঘোষণা দিলেও ওই ফলাফল বাস্তবায়নের বিষয়টিও তারা মেনে নেবে কিনা সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।#
পার্সটুডে/মো. রেজওয়ান হোসেন/৩০