তুর্কি-রুশ আলোচনা অব্যাহত
ইদলিব সংকট: শেষ হাসি কি আসাদ ও তার মিত্রদের মুখেই ফুটছে?
-
ইদলিবে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সিরিয় সরকারী সেনারা
সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আবারও বেশ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। কারণ দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ইদলিব প্রদেশে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সিরিয় বিমান হামলায় অন্তত ৩৪ তুর্কি সেনা নিহত হয়েছে।
সিরিয়ার সেনাবাহিনী বর্তমানে দেশটির উত্তরাঞ্চলে সন্ত্রাসীদের দখলে থাকা সর্বশেষ প্রদেশ ইদলিবে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু তুরস্ক এ অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং আগে থেকে ওই প্রদেশে মোতায়েন নিজের সেনাদের মাধ্যমে গত কয়েক সপ্তাহে সিরিয়ার সেনা অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। প্রায় একই সময়ে সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান সিরিয় হামলায় ৩৪ তুর্কি সেনা নিহত হওয়ার ঘটনাটির পর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এক জরুরি বৈঠক ডাকেন এবং ওই বৈঠক ছয় ঘণ্টা স্থায়ী হয় বলে জানা গেছে। তুরস্ক সিরিয়ার ওপর পাল্টা হামলা চালাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১১ সাল থেকেই সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের অন্যতম মদদদাতা ছিল তুরস্ক। এখনও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা দখলে রেখেছে তুরস্ক। গত তিন বছরে আঙ্কারা বেশ কয়েকবার সিরিয়ায় আগ্রাসন চালিয়েছে।
সিরিয়ার কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টির গেরিলাদের দমন করার অজুহাত দেখিয়ে তুর্কি সরকার সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে সেনা পাঠিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন মদদ পেতে অভ্যস্ত এই দল সাম্প্রতিক সময়ে তুর্কি অভিযানের মুখে মার্কিন মদদ না পাওয়ায় সিরিয়ার আসাদ সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সাক্ষর করে সামরিক ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ফলে সিরিয়ায় তুর্কি সেনা মোতায়েনের আর কোনো অজুহাতই নেই।
এ অবস্থায় ইদলিব থেকে সিরিয় জনগণ ও সরকারি বাহিনীর ওপর মাঝে মাঝে তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হামলার প্রেক্ষাপটে সেখানে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান শুরু করে সরকারি বাহিনী। এরিমধ্যে ইদলিবের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর প্রায় পুরোপুরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ওই অঞ্চলকে সন্ত্রাসীমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও তার সহযোগীরা। কিন্তু এরই পাশাপাশি তুর্কি সরকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যাপক সামরিক সহযোগিতা দিচ্ছে। রাশিয়া তুর্কি এই ভূমিকাকে রুশ-তুর্কি সমঝোতার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করছে। ওদিকে সন্ত্রাসীদের ওপর সিরিয় সরকারি বাহিনীর অভিযানের বিরুদ্ধে কথা বলছে মার্কিন ও ফরাসি সরকার ও ন্যাটো জোট।
নৃশংস আচরণে অভ্যস্ত ইদলিবের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কোনো জনপ্রিয়তা না থাকায় এই গোষ্ঠীগুলোর পরাজয় অনিবার্য বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় তুরস্ক তাদের সাহায্য-সমর্থন দিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকেই হুমকিগ্রস্ত করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তুরস্ক সরকার সিরিয়ায় লেলিয়ে-দেয়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নানাভাবে ব্যবহার করে ইউরোপ ও রাশিয়ার কাছ থেকে নানা সুবিধা আদায়ের যে চেষ্টা করছে তাও একটি মারাত্মক ভুল নীতি ও বুমেরাং হয়ে দেখা দিচ্ছে। এইসব সন্ত্রাসীদেরই একটি দলকে তুরস্ক লিবিয়ায় পাঠিয়েছে যা তুরস্ক ও অন্য কারো জন্যই সুফল বয়ে আনেনি। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্ক কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। সিরিয়ায় তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখেই তুরস্কের উচিত সন্ত্রাস-বিরোধী অবস্থান নেয়া।
ইদলিব পরিস্থিতি নিয়ে রুশ-তুর্কি আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। দেখা যাক্ শেষ পর্যন্ত এ সংকট কোথায় গড়ায় এবং শেষ হাসি কাদের মুখে স্থান নেয়। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২৮