ইয়েমেনের পলাতক প্রেসিডেন্টের নির্দেশে মন্ত্রিসভা গঠন: আনসারুল্লাহর প্রতিক্রিয়া
ইয়েমেনের পলাতক ও পদত্যাগকারী প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদি মঈন আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। মানসুর হাদির এ নির্দেশ কয়েকটি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমত, মানসুর হাদি ইয়েমেনের বৈধ প্রেসিডেন্ট নয়। কারণ একদিকে তার প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল ছিল অস্থায়ী এবং ২০১৪ সালেই তার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে গত ক’বছর ধরে তিনি এডেনে অনুপস্থিত রয়েছেন। ইয়েমেন থেকে পলায়নের পর থেকে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থান করছেন। মানসুর হাদির দফতরের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এডেনে নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান করা হবে না বরং রিয়াদে যেখানে মানসুর হাদি অবস্থান করছেন সেখানে শপথ অনুষ্ঠান হতে পারে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একজন ব্যক্তির নির্দেশে এ ধরণের সরকার গঠন কিংবা শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পূর্ণ অবৈধ।
দ্বিতীয়ত, মঈন আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত নতুন সরকারের মন্ত্রীসভায় ২৪জন মন্ত্রী রয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন উত্তরাঞ্চলীয় এবং অপর ১২ জন মন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশের। এদের মধ্যে পাঁচজন অন্তর্বর্তী পরিষদের মন্ত্রীও রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এমন সময় মানসুর হাদি এই সরকার গঠনের নির্দেশ দিলেন যখন ইয়েমেনে তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব দিন দিন শেষ হতে চলেছে এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে তাদের কোনো স্থান নেই।
তৃতীয়ত, যদিও গত বছরের নভেম্বরে মানসুর হাদি এ ধরণের সরকার গঠনের কথা বলেছিলেন কিন্তু একটি বিষয়ে বিতর্কের অবসান না ঘটায় এখনো সরকার গঠন সম্ভব হয়নি। আর তা হচ্ছে দক্ষিণের অন্তর্বর্তী পরিষদের সেনাবাহিনীকে অবশ্যই ইয়েমেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সরকার গঠনের আগে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন মানসুর হাদি। কিন্তু অন্তর্বর্তী পরিষদ চেয়েছিল আগে মন্ত্রিসভা গঠন করা হোক। শেষ পর্যন্ত এই পরিষদের দাবিই মেনে নেয়া হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে দাবি মেনে নেয়া হলেও তা কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে। যদি বাস্তবায়িত না হয় এবং অন্তর্বর্তী পরিষদও তাদের নিজস্ব বাহিনী বজায় রাখে তাহলে নতুন সরকার গঠিত হলেও তা টিকবে না।
ইয়েমেনের রাজনৈতিক উচ্চ পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী আল হুথি পলাতক প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই সরকারের মধ্যে তীব্র মতভেদ ও বিশৃঙ্খলা রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তা টিকবে না।
চতুর্থ বিষয় হচ্ছে, সৌদি রাষ্ট্রদূতের ইয়েমেন সফর নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে এবং বলা হচ্ছে এর ফলে আনসারুল্লাহ রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়টি মেনে নিতে বাধ্য হবে। যদিও আনসারুল্লাহ প্রথম থেকেই যুদ্ধ নয় বরং রাজনৈতিক সমাধানের কথাই বলে আসছিল। এরই মধ্যে কয়েকটি আরব দেশ রাজনৈতিক সমঝোতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
যাইহোক, বিশ্লেষকরা বলছেন সৌদি আরবের চাপে মানসুর হাদি এ ধরনের সরকার গঠন করলেও অভ্যন্তরীণ তীব্র বিরোধ ও বিশৃঙ্খলার কারণে তা কার্যকর হবে না। ইসরাইলের নেতানিয়াহু ও বানি গান্তেয যে ধরনের যৌথ সরকার চালাচ্ছেন মানসুর হাদিও একই পথ বেছে নিয়েছেন। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২০