যোগ দিতে পারে ইউরোপও
ইরাকে অনুষ্ঠেয় আঞ্চলিক দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ইরাক সরকার চলতি মাসের শেষের দিকে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ আরব এবং এর বাইরে আরো কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি বাগদাদ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য এরই মধ্যে ইরান, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত, মিশর ও জর্দানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কোন কোন সূত্র জানিয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনসহ ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতারাও বাগদাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেন। মোস্তফা আল কাজেমি গত বছরের মে মাসে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দায়িত্ব নিয়ে তিনি বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ওপর জোর দেন। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী কাজেমি এর আগে মিশর ও জর্দানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। এছাড়া তিনি ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছেন। এ লক্ষ্যে তিনি এ পর্যন্ত ইরান ও সৌদি আরবের সঙ্গে তিন দফায় বৈঠকে বসেছেন। এসব বৈঠক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচার হয়েছিল।
যাইহোক চলতি মাসের শেষের দিকে বাগদাদে প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ে যে শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে তাতে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এ অঞ্চলের তিনটি প্রভাবশালী দেশ অর্থাৎ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব, সৌদি রাজা সালমান এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিমকে বাগদাদ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিন্তু এই তিন দেশের শীর্ষ নেতারা এতে অংশ নেবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেননা আসন্ন বাগদাদ সম্মেলনের ব্যাপারে দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী কাজেমি এ ধরনের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইরাকের অবস্থানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিরাজমান সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন যাতে এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায়। তাদের মতে এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং বিরাজমান চ্যালেঞ্জ দূরীভূত হবে।
ইরাকি সংসদের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিশনের সদস্য আমের আল ফেইজ বলেছেন, বাগদাদ সরকার এ অঞ্চলে ইরাকের অবস্থানকে জোরদার করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে ইরাকের আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক আদেল আল আশরাম বলেছেন, প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে ইরাকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার দরকার রয়েছে এবং এটা আর্থ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জরুরী।
আবার আরেক পক্ষের মত হচ্ছে এ ধরনের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে ইরাকের সরকার ও জনগণের জন্য বিশেষ কোনো লাভ হবে না। এতে করে কেবলমাত্র ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমি এবং সরকারে তার সমর্থকদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী হবে। তাদের মতে এই মুহূর্তে ইরাকের জন্য সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে বিদেশি পুঁজি আকৃষ্ট করা এবং অর্থনৈতিক সাহায্য লাভ করা।
ইরাকের অপর রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাক্কি আল নাজাল এধরনের সম্মেলনকে প্রতীকী হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন এর আগের সম্মেলনগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় এবারের সম্মেলন থেকেও খুব একটা লাভবান হওয়া যাবে না। কেননা সম্মেলন শেষে এতে অংশগ্রহণকারীরা সব কিছুই ভুলে যাবে। তাই অনেকে মনে করেন ইরাকের ক্ষমতায় আরো বেশি দিন টিকে থাকার জন্য মোস্তফা আল কাজেমি নিজের ভাব-মর্যাদা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাছাড়া আগামী অক্টোবরে ইরাকে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকার জন্য কাজেমি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকের পুনর্গঠন খুবই জরুরি। এখনো উগ্রবাদীরা তৎপর রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটও তীব্রতর। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন দেশটির জন্য জরুরি। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১০