জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধিরও পাল্টা প্রতিক্রিয়া
সম্মিলিতভাবে ইসরাইল ও আরব লীগের ইরান বিরোধী প্রচারণা জোরদার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম এশিয়ায় তাদের আরব মিত্ররা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইরান বিরোধী প্রচারণা জোরদার করেছে এবং ইরানকে এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছে।
আরব লীগের স্বঘোষিত চারপক্ষীয় কমিটি সম্প্রতি এক বৈঠকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে যেখানে দখলদার ইসরাইলের বেআইনি পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তারা ইরানের সমস্ত পরমাণু প্রকল্পের ওপর আন্তর্জাতিক পরিদর্শনেরও আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ের লাপিদও মস্কো সফরকালে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টার জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি স্পুতনিককে দেয়া সাক্ষাতকারে দাবি করেছেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া তিনি গত বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইরানের বিরুদ্ধে হুমকির ভাষায় বক্তব্য দিয়ে দাবি করেছেন, তেহরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরাইলি কর্মকর্তাদের ইরান বিরোধী বক্তব্য বিবৃতি প্রকৃতপক্ষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর হাস্যকর দাবিরই পুনরাবৃত্তি মাত্র যা কিনা তিনি একাধিকবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে বলেছিলেন। কিন্তু কোনো যুক্তি না থাকায় তার ইরান বিরোধী বক্তব্যগুলো হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের আরব মিত্ররা বহুদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরান আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধির সহকারী যাহরা আরশাদি সম্প্রতি এই সংস্থার প্রধানের কাছে লেখা চিঠিতে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের হুমকির কথা উল্লেখ করে ইরানের ব্যাপারে ইসরাইলের সামান্যতম ভুলের পরিণতির ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অধিকার ইরানের রয়েছে।
এ অবস্থায় ইসরাইল ও তাদের আরব মিত্ররা যারা কিনা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করেছে তারা কি আদৌ আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এর উত্তরে বলা যায় তারা এ ব্যাপারে মোটেও চিন্তিত নয়। তারা আসলে ইরানের বিরুদ্ধে হৈ চৈ সৃষ্টি করে কয়েকটি লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। এর মধ্যে প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিন সমস্যাকে ধামাচাপা দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধ ও সংঘাত সৃষ্টির মূল কারণকে আড়াল করা। কেননা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সৌদি আরব ও আরো কয়েকটি আরব দেশ মিলে এ অঞ্চলে সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। খ্যাতনামা মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক গ্রেস পোর্টার বলেছেন, 'বাস্তবতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারাই যুদ্ধাস্ত্র কিনছে তারাই মূলত আঞ্চলিক সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী।'
বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরাইল ও তাদের কয়েকটি আরব মিত্র দেশ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং তারাই এ অঞ্চলে সংকটের মূল কারণ। এ কারণেই ইরানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে তারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১১