আফগানিস্তানে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা বৃদ্ধিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ প্রকাশ
জাতিসংঘের মহাসচিব অন্থেনিও গুতেরেস আফগানিস্তানে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষমতার শূন্যতা ব্যবহারে সন্ত্রাসীরা খুবই দক্ষ। তিনি আরো বলেছেন, আফগানিস্তান ছাড়াও আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার থেকে বোঝা যায় তারা ক্ষমতার শূন্যতার অপব্যবহার এবং দুর্বল বা নড়বড়ে সরকারকে উৎখাতে খুবই দক্ষ।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ বিষয়ক কমিটি কিছুদিন আগে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, তালেবান ফের ক্ষমতায় আসার পর এখন এ আশঙ্কা বেড়েছে যে ওই দেশটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তান, পশ্চিম এশিয়াসহ বিশ্বের আরো বহু দেশে উগ্র সন্ত্রাসবাদ বিস্তারে জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রকাশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। গত গ্রীষ্মে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর বলা যায় সেদেশে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ায় আল কায়দা ও দায়েশসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়। তারা আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে চরম নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। গত কয়েক মাসে আফগান জনগণের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় তালেবানের অস্থায়ী সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও একাধিকবার দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গত বছর অক্টোবরে কুন্দুজ প্রদেশের দুটি শিয়া মসজিদে দায়েশ সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ বোমা হামলা চালায়। এতে শতশত মুসল্লি হতাহত হন। এ ঘটনার পর তালেবানের অস্থায়ী সরকারকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। সন্ত্রাসীদের ওই ভয়াবহ হামলার পর আফগানিস্তানের শিয়া আলেমরা শিয়া জনগোষ্ঠীসহ দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য তালেবান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এ ছাড়া, কিছুদিন আগে দায়েশ সন্ত্রাসীরা হেরাত প্রদেশেও হামলা চালায়। এতে অন্তত সাতজন বেসামরিক মানুষ নিহত এবং অপর দশ জন আহত হয়। আফগানিস্তানে দায়েশ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও উদ্বেগ বেড়েছে। এ অবস্থায় কিছুদিন আগে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা সবাইকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনের জন্য তালেবান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যাতে দায়েশসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যায়।
বর্তমান অবস্থায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করা তালেবান সরকারের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা শুধু যে আফগান জনগণের দাবি তাই নয় একই সঙ্গে সমগ্র এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশেরও অভিন্ন দাবিতে পরিণত হয়েছে। তালেবানের অস্থায়ী সরকারকে অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের পক্ষে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া কঠিন হয়ে গেছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো। ফলে সমগ্র এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
তালেবান এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। সে কারণে তারা সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার কথা বলে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ প্রকাশ গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।